বইয়ের মেলা প্রাণের মেলা

নীতিমালা মানতেই হবে

‘লেখক বলছি’ মঞ্চে একজন ভিনদেশি লেখককে কথা বলার সুযোগ দেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমির এক কর্মকর্তা অনুরোধ করছিলেন মেলা কমিটির সদস্যসচিবের কাছে। মোবাইলের আলাপনের একপর্যায়ে সদস্যসচিব সাফ জানিয়ে দিলেন, অনুরোধে কাজ হবে না। যেহেতু একুশে বইমেলায় বিদেশি লেখকের কোনো বই বিক্রির নিয়ম নেই, তাই লেখক বলছি মঞ্চেও বিদেশিদের সুযোগ দেওয়া যাবে না। কেননা এখানে নিজের লেখা বই নিয়েই আলোচনা হয়।

গ্রন্থমেলা নিয়ে আয়োজক কমিটির নীতিমালার শুরুতেই আছে কেবল বাংলাদেশে মুদ্রিত ও প্রকাশিত বাংলাদেশের লেখকদের মৌলিক/ অনূদিত/ সম্পাদিত/ সংকলিত বই বিক্রি করতে পারবেন। এই নীতিমালার লঙ্ঘন দেখা গেছে মেলায়। গতকালও বেশ কিছু স্টলে বিদেশি লেখকদের বই বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেলা কমিটির সদস্যসচিব জালাল আহমেদ বলেন, ‘লেখকের সঙ্গে বৈধ চুক্তি, পাইরেট, বিদেশি লেখকের বইসহ সর্বোপরি নীতিমালার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমাদের কমিটি একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। তদন্ত চলছে। শিগগিরই অভিযানে বের হবে টাস্কফোর্স।’

এবার নীতিমালা বাস্তবায়নে কড়াকড়ি করছে বাংলা একাডেমি তথা অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটি। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির প্যাভিলিয়নে বসে সমিতির বর্তমান নেতাদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি নেতাদের কাছে অনুরোধ করেছেন, নীতিমালা ভাঙা বা অনিয়মের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে যেন কেউ তদবির না করে। নীতিমালা মানতেই হবে।

কাল মেলায় খুব একটা ভিড় ছিল না। তবে ভিড় কম থাকলেও বিক্রি ছিল আশাব্যঞ্জক। বিকেলে লেখক বলছি মঞ্চে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত গবেষণাগ্রন্থ সাত দশকের হরতাল ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি হন অজয় দাশগুপ্ত। কবি ফরিদ কবির আমার গল্প, জাহানারা পারভীন স্কুল বলতে তোমাকেই বুঝি, চঞ্চল আশরাফ নির্বাচিত গল্প এবং মন্দিরা এষ তাঁর অরণ্য মিথের পৃষ্ঠা বই নিয়ে পাঠকের মুখোমুখি হন।

গতকাল মেলার ষষ্ঠ দিনে প্রকাশিত হয়েছে ১৫২টি বই। এবার মেলায় এসেছে নাসরীন জাহানের লেখা প্রথম কবিতার বই এসেছি সূর্যাস্ত থেকে, এনেছে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স। ইমদাদুল হক মিলনের ফেলে যাওয়া রুমাল এনেছে অন্যপ্রকাশ। প্রথমা প্রকাশন এনেছে বেলাল চৌধুরীর আমার কলকাতা, শওকত আলীর পাকা দেখা। এ ছাড়া মেলায় কথাপ্রকাশ এনেছে বেগম রোকেয়ার শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, মোশতাক আহমেদের খুলিবাবা, চন্দ্রাবতী একাডেমি এনেছে আনিসুজ্জামানের স্মরণ ও বরণ, উৎস প্রকাশন এনেছে মোস্তফা সেলিমের খবর নিশান: ফকির ভেলা শাহ, কাউসার চৌধুরীর সৈয়দ শাহনূর ও তাঁর গান, মাওলা ব্রাদার্স এনেছে সেলিনা হোসেনের রক্তফুলের বরণডালা ইত্যাদি।