‘ভালোবাসার তরঙ্গ’, শিল্পী: মাসুদুর রহমান
‘ভালোবাসার তরঙ্গ’, শিল্পী: মাসুদুর রহমান

মহাবিশ্বে মহাকালে

আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের গ্যালারিতে ঢুকেই মনে হলো, মাসুদুর রহমানের চিত্রকর্মগুলো যেন মেঘের মতো; ঘন ও ঘোর লাগা। কখনো আবার নদীর মতো—বহমান ও স্রোতস্বিনী। দূর থেকে দেখলে প্রথমে কিছুটা অস্পষ্ট, কিন্তু কাছে গেলে প্রকট হয় চিত্রকর্মে ফুটে থাকা মুখ, শরীর, মানুষ ও তাদের যাপন। কখনো চারকোলে, কখনো অ্যাক্রিলিকে, কখনো চায়ের সঙ্গে কালির আঁচড়ে তিনি এঁকেছেন ‘জীবন ও শূন্যতার বুনন’, ‘ছায়াদের কথোপকথন’, ‘মহাকালের অশ্বারোহী’, ‘পদ্মসরোবর’ এবং আরও নানা চিত্রকর্ম। চারকোলের সঙ্গে তেলরং মিলিয়ে এঁকেছেন ‘হৃদয়ের ছায়াপথে’ নামের চিত্রকর্ম। দর্শককে দুদণ্ডের জন্য হলেও ছবিটির সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করবে।

শিল্পী তাঁর প্রদর্শনীর নাম দিয়েছেন ‘মহাকালের যাত্রা’।

শিল্পীর নিসর্গচিত্রেও লক্ষ করা যায় একই অক্ষিবিভ্রম। দূর থেকে তাদের সাধারণ নিসর্গচিত্র মনে হয়। কিন্তু লক্ষ করলেই দেখা যায়, সেখানে তিনি এঁকেছেন মানুষ ও তাদের জীবন। ইমপ্রেশনিস্টদের মতো তিনিও প্রকৃতিতে দাঁড়িয়েই এই নিসর্গচিত্র এঁকেছেন। সেখানে যে মানুষদের বাস ও যাপন, তাদের তিনি মিশিয়ে দিয়েছেন ছবির সবুজে। মাসুদুর রহমানের চিত্রভাষায় এটি চমৎকার এক সংযোজন।

মাসুদুর রহমান মনে করেন, তাঁর অঙ্কন এই মহাকালের যাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রাণের মূলে যেমন রয়েছে প্যাঁচানো ডিএনএ, তেমনিভাবেই শিল্পীর রেখাচিত্রে, অ্যাক্রিলিকের রংলেপনে মিশে আছে ডিএনএর গঠনের ছায়া; রয়েছে এই ক্রমাগত প্রসারমাণ মহাকাশের অনুভূতি। তার মধ্যে আছেন তিনি, তাঁর আশপাশের মানুষ এবং অবশ্যই তাঁর সব শিল্পকর্ম।

মাসুদুর রহমানের এই উপলব্ধির প্রকাশ যেন অনেক ক্ষেত্রে দাবি করে আরও বিশালাকার ক্যানভাস। পেল্লায় ক্যানভাসে এ ধরনের ছবি আঁকলে মহাকালে তাঁর এই যাত্রার গল্প আরও পরিস্ফুট হবে বলে বোধ হয়। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে তাঁর তুলির আঁচড়ের প্রবহমানতা ক্যানভাসের আকারের কারণে ব্যাহত হয়েছে।

শিল্পী যে পৃথিবীতে মহাকালের যাত্রার প্রভাবের কথাও ভুলে যাননি, তার নজির ‘বিধ্বস্ত নগরীর শোকসংগীত’ নামের চিত্রকর্মে। এটি তাঁর অন্য কাজগুলো থেকে ভিন্ন। এতে রয়েছে জ্যামিতিক দাগ ও কাট-কাট আকৃতির উপস্থিতি। মাসুদুর রহমান এঁকেছেন ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীর ধ্বংসাবশেষ।

‘মৃত নগরীর মহাকাব্য’-এ দেখতে পাই অ্যাক্রিলিকে আঁকা সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চিত্র।

৬ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এটি মাসুদুর রহমানের দ্বিতীয় একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী।

অনিন্দ্য নাহার হাবীব