‘শিরোনামহীন’, শিল্পী: নিতুন কুন্ডু
‘শিরোনামহীন’, শিল্পী: নিতুন কুন্ডু

দৃশ্যকলা

বহু ও বিচিত্র

গ্যালারি কায়ার ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘সেলিব্রেটিং টুইয়েন্টিয়েথ অ্যানিভার্সারি’ শিরোনামে প্রদর্শনীতে দেখা গেল প্রবীণ–নবীন বিভিন্ন শিল্পীর চিত্রকলা। ৩৫ জন সমসাময়িক ও আধুনিক শিল্পীর মোট ৬৮টি চিত্রকর্ম নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে আছে আবদুস শাকুর শাহের জলরঙে আঁকা অপরূপ ‘চন্দ্রাবতী’। দেখা মিলল এচিংয়ে করা গণেশ হালুইয়ের দুর্দান্ত কম্পোজিশনের একটি ছবি।

প্রদর্শনীর এমন অনেক চিত্রকর্মই শিল্পবোদ্ধাদের নজর কেড়েছে। গৌতম চক্রবর্তীর ‘বালক’ নামের কাজটির সামনে দাঁড়িয়ে থমকে গেছেন অনেকেই। আবার কাজী আবদুল বাসেতের শিরোনামহীন তৈলচিত্রের কম্পোজিশনে ডুবে থাকার কিছুক্ষণ পরই মকবুল ফিদা হুসেনের সেরিগ্রাফে করা ‘শান্তির পায়রা’র সঙ্গে দর্শকের কেউ কেউ হয়তো উড়েও গেছেন। তা ছাড়া মনু পারেখের এচিংয়ে করা কাজটি ঢাকায় বসে দেখতে পাওয়া তো সৌভাগ্যের ব্যাপারই।

মুর্তজা বশীরের কলমে দাগ কেটে আঁকা তিনটি ‘মিনিমালিস্টিক ড্রইং’–এর আশপাশেই রয়েছে নিতুন কুন্ডুর জ্বলজ্বলে দুটি বিমূর্ত তৈলচিত্র। আছে কাইয়ুম চৌধুরী, রফিকুন নবী, মোহাম্মদ ইউনুস, শিশির ভট্টাচার্য্য, জামাল আহমেদ ও শহীদ কবিরের ছবি। আর তরুণ শিল্পীদের মধ্যে আছেন কামালুদ্দিন, শাহানূর মামুন, সোহাগ পারভেজসহ আরও কয়েকজন।

বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলায় এখানে প্রদর্শিত সব চিত্রকরের কোনো না কোনোভাবে ভূমিকা রয়েছে। এ প্রদর্শনীতে তার বেশ কিছু আভাস দেখা গেল। তবে চিত্রকলার শক্তিশালী এই শিল্পীদের কাজ দেখতে দেখতে শিল্পপ্রেমী দর্শকের মনে এ প্রশ্নও আসতে পারে যে তরুণ শিল্পীদের চেয়ে প্রবীণ শিল্পীদের কাজ কি একটু বেশি নিরীক্ষাধর্মী?

রতন মজুমদারের কাঠে খোদাই চিত্র ‘নগ্নতার আরাম’ দেখে তাঁর কৌশলগত দক্ষতা ও ভাবনার বৈচিেত্র্য যে মুগ্ধতা আসে, তা সহজে যায় না। একই সঙ্গে সনৎ করের এচিংয়ে করা কিছু নাইভ আর্ট, কিছুটা পরাবাস্তবধর্মিতার আভা জাগা কাজগুলো দেখে অনেক ভাবনারই উদ্রেক হতে পারে।

হামিদুজ্জামান খানের অ্যাক্রেলিক মাধ্যমে ইমপ্রেশনিস্ট ধরনে আঁকা পেইন্টিং পল সেজাঁকে মনে করায়।

সব মিলিয়ে এই প্রদর্শনী উপভোগ করা ছিল আনন্দময়। কারণ, একই ছাদের নিচে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পীদের এত বৈচিত্র্যময় কাজ সচরাচর একসঙ্গে দেখতে পাওয়া যায় না। তবে এখানে তরুণদের নতুন ও বিভিন্ন আঙ্গিকের নিরীক্ষাধর্মী ছবি দেখা গেলে শিল্পপ্রেমীরা আরেকটু খুশি হতেন বোধ করি। প্রয়াত ও প্রবীণ শিল্পীদের ছবি এবং তাঁদের শৈলী সম্পর্কে দর্শকেরা অনেকখানিই অবগত। এ ক্ষেত্রে তরুণদের নিজেদের দক্ষতা ও ভাবনার ব্যাপ্তির প্রকাশের জন্য কোনো পিছুটান থাকে না। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেওয়ার ‘সোনার আপেল’টাই–বা তাঁরা হাতছাড়া কেন করবেন?

অনিন্দ্য নাহার হাবিব