‘বাড়ির পথে’, শিল্পী: সফিউদ্দীন আহমেদ, উডকাট, ১৯৪৪
‘বাড়ির পথে’, শিল্পী: সফিউদ্দীন আহমেদ, উডকাট, ১৯৪৪

দৃশ্যকলা

ঐতিহ্যের বয়ান

বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘ছাপাই চিত্রের পরম্পরা’ শিরোনামে ৮০টির বেশি ছাপচিত্রকর্ম নিয়ে ছাপচিত্র প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। এ দেশের পথিকৃৎ শিল্পী থেকে একেবারে সাম্প্রতিক সময়ের নবীন ছাপচিত্রীদের ছবিও প্রদর্শনীটিতে স্থান পেয়েছে। ফলে আমাদের ছাপচিত্রের শিল্পপ্রবণতার একটি ধারাবাহিক ছবি এখানে পাওয়া যায়। এই প্রদর্শনী সে অর্থে আমাদের ৭৫ বছরের ছাপাই ছবির চর্চার একরকমের খতিয়ানও বটে।

আমাদের দেশে ছাপাই ছবির চর্চা শুরু হয়েছিল একাডেমিক অনুশীলনের মাধ্যমে। শিক্ষক ছিলেন সফিউদ্দীন আহমেদ ও হাবিবুর রহমান। সাদা–কালো কাঠখোদাই চিত্রের মাধ্যমে এর সূচনা হলেও পরে এচিং, লিথোগ্রাফি ইত্যাদির চর্চাও শুরু হয়। সফিউদ্দীনের প্রথম দিকের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী, মুর্তজা বশীর প্রমুখের একাডেমিক বাস্তবধর্মী রীতিতে করা কাঠখোদাই চিত্রের কিছু নমুনা এখানে উপস্থাপিত হয়েছে।

আমরা লক্ষ করব, ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে ছাপাই ছবি একাডেমিক চর্চার পরিধি পার হয়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে, মূলত সফিউদ্দীন ও মোহাম্মদ কিবরিয়ার নেতৃত্বে। পাশ্চাত্য আধুনিকতার অনুবর্তী হয়ে বিমূর্ত বা আধা বিমূর্ত ধারায় তাঁরা চর্চা শুরু করলেন।

স্বাধীনতার পর দেশে ছাপাই ছবি জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে রফিকুন নবী, মনিরুল ইসলাম ও কালিদাস কর্মকার পথিকৃৎ। রফিকুন নবী গেলেন কাঠখোদাই চিত্রে; বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি ও জীবনের বর্ণাঢ্য জগতে। কালিদাস কর্মকার গেলেন এচিংয়ের রেখাময়তায়, আমাদের পৌরাণিক আচারের উদ্ভাসে। মনিরুল ইসলাম এচিং অ্যাকুয়াটিন্ট মাধ্যমে স্বচ্ছ জলরঙের মতো বিমূর্ত আঙ্গিকে এক নিজস্ব বর্ণময় ধারা সৃষ্টি করলেন। এই প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় ছাপচিত্রের ভুবনের চকিত পরিচয় আছে।

দুটি বিষয় এখানে উল্লেখ করার মতো। একসময় বিশ্বজুড়ে ছাপচিত্রে সমাজবাস্তবতার যে বিপুল আবির্ভাব দেখা গিয়েছিল, আমাদের দেশে তার অনুপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। আরেকটি বিষয় হলো, নতুন প্রজন্মের অধিকাংশ শিল্পীর মধ্যে এই মাধ্যমে নিছক একাডেমিক বাস্তবধর্মী রীতির প্রতি আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, প্রথম প্রজন্মের শিল্পীদের মতো নিরীক্ষার প্রতি কম।

প্রদর্শনী চলবে ১১ জুন পর্যন্ত।

রশীদ আমিন