২০০৮ সালে কাজী মুনিরের দীর্ঘ শিল্পীজীবনের অবসান হয়। তিনি এখন প্রায় বিস্মৃত এক শিল্পী। তাঁর নামও সম্ভবত অনেকের অপরিচিত। কাজী মুনির ছিলেন স্বভাবশিল্পী। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চিত্রকলার পাঠ নেননি। যত দূর জানি, তাঁর কোনো গুরুও ছিল না। কাজী মনির ছিলেন একান্তভাবেই স্বশিক্ষিত শিল্পী। পুরোনো ম্যাগাজিন ব্যবসার পাশাপাশি আপনমনে ছবি আঁকতেন। ছবির অদ্ভুত এক নিজস্ব ভাষাও তৈরি করেছিলেন। সঙ্গে ছিল করণকৌশলেরও নিজস্বতা।
মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর কাজী মুনিরের একটি ছিমছাম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দ্বীপ গ্যালারি। মোস্তফা জামানের কিউরেটিংয়ে এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে কাজী মুনিরের কাজ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
কাজী মুনির মাধ্যম হিসেবে নিয়েছিলেন প্রেসের ফেলে দেওয়া কালি আর পুরোনো দিনপঞ্জির পাতা। সাধারণত প্রেসের কালি ছাপাই ছবিতে ব্যবহার করেন শিল্পীরা, তবে মুনির ব্যবহার করতেন স্প্যাচুলা দিয়ে। ছবিতে তারপিন ব্যবহারের ফলে অদ্ভুত এক বুনট তৈরি হতো তাঁর কাজে। এসব ছবি মুনির কাউকে দেখাতে আঁকেননি, বাজারের জন্যও নয়। এঁকেছেন একান্তই নিজের আনন্দে।
তাঁর ছবি দেখতে দেখতে দীক্ষিত দর্শকের হয়তো অঁরি রুশোর কথা মনে পড়বে। তাঁর কাজে ভিলেম ডি কুনিং বা জর্জিয়া ও’কিফির ছাপ আছে বলেও মনে হতে পারে। বাস্তবে ওসবের ধার ধারেননি তিনি। ভাষাটা তাঁর স্বভাবজই ছিল।
কাজী মুনিরের ছবিকে আমরা নানা তত্ত্বের চৌখুপিতে ফেলতে পারি বটে, তবে তত্ত্বে তাঁর কাজ সমর্পিত নয়। যদিও আমাদের দেশে পরাবাস্তব ছবির কথা বলতে গেলে তাঁর কাজ এড়িয়ে যাওয়া মুশকিল হবে।
১২ জুলাই শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৪ জুলাই পর্যন্ত।
সৈয়দ গোলাম দস্তগীর