ফিলিস্তিনি কবির লড়াই

হামাস ও ইসরায়েলের সংঘাতের মধ্যে নতুন করে আলোচিত হয়েছেন ফিলিস্তিনের তরুণ কবি মোসাব আবু তোহা। গাজার পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিয়মিত লিখছিলেন তিনি। মোসাব আবু তোহার কবিতার অনুবাদসহ বিদেশি গণমাধ্যম ঘেঁটে তাঁকে নিয়ে লিখেছেন রাফসান গালিব

মোসাব আবু তোহা

‘আমার জন্ম একটি শরণার্থীশিবিরে। কারণ, আমার মা–বাবা উদ্বাস্তু হয়ে ওই শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে এখন আমরা নিজ বাড়িতে থাকলেও সেটি যেন একটি কারাগার। কোনো জানালা নেই, দরজা নেই, কেবল অনাহূত অতিথির মতো আছে বোমার ধোঁয়া। এখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে কাঁদছে মানবতা!’

কিছুদিন আগে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে এভাবেই লিখেছিলেন ফিলিস্তিনের তরুণ কবি মোসাব আবু তোহা। নিউইয়র্ক টাইমস–এ গাজার পরিস্থিতি নিয়ে অন্য মর্মস্পশী এক লেখা লিখেছিলেন তিনি, অনূদিত হয়ে যা ছাপা হয়েছিল ‘অন্য আলো’তে। যুদ্ধবিরতির আগ পর্যন্ত তিনি গাজা শহরে ইসরায়েলি হামলা ও সেখানকার অবর্ণনীয় পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত লিখে গেছেন। তাঁর আশপাশে ইসরায়েলি বোমা হামলার বর্ণনা দিয়ে বিভিন্ন লেখায় ফুটে উঠেছিল তাঁর আর্তনাদ,‘আমিও কি তাহলে খবরের বর্ণনার সংখ্যা হয়ে যাব?’ 

মাহমুদ দারবিশ, ঘাসান কানাফানি থেকে শুরু করে হেবা আবু নাদা, মোসাব আবু তোহা—যুগে যুগে ফিলিস্তিনি কবিরা কবিতা ও ভাষা দিয়ে লড়ে গেছেন।

 গত ২০ অক্টোবর গাজায় বিমান হামলা চালিয়ে হেবা আবু নাদার কণ্ঠ চিরতরে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। এর দিন কয়েক আগেই এই নারী কবি ও ঔপন্যাসিক লিখেছিলেন, ‘রকেটের আলো ছাড়া গাজা অন্ধকার, বোমার শব্দ ছাড়া গাজা নীরব, প্রার্থনা ছাড়া আর সবকিছুই ভয়ংকর, শহীদের আলো ছাড়া সবকিছুই কালো। শুভরাত্রি, গাজা!’

হেবা নিহত হওয়ার ঠিক এক মাস পর ২০ নভেম্বর দ্য গার্ডিয়ান, সিএনএন ও নিউইয়র্কার খবর দিল, কবি মোসাব আবু তোহাকে আটক করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। পরিবার নিয়ে তখন তিনি ছুটছিলেন গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণে। যেদিন তাঁর গ্রেপ্তার হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলো, সেদিনও ‘দ্য ভিউ ফ্রম মাই উইন্ডো ইন গাজা’ শিরোনামে নিউইয়র্কার তাঁর একটা লেখা প্রকাশ করেছে। সেখানে মোসাব আবু তোহা লিখছেন, কাগজে লিখে ইসরায়েলি সতর্কবার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আকাশে। ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে। কারণ, যেকোনো সময় বোমা হামলা হতে পারে।

এরপর মা–বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী–সন্তান নিয়ে তিনি বের হয়ে যান শরণার্থীশিবিরের উদ্দেশে। তবে বাইসাইকেল ঘুরিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবার ফিরেও আসেন। ইসরায়েলি হামলা শুরু হওয়ার দুই দিন আগে পরিবারের জন্য কিছু রুটি কেনা হয়েছিল, সেগুলো নিতে। বাইসাইকেলে সেই ঘরছাড়া আর ঘরে ফেরার বেদনাদায়ক দৃশ্যকাব্যময় বণর্না নিয়েই ছিল তাঁর শেষ লেখা।

প্রথম কাব্যগ্রন্থের জন্য প্যালেস্টাইন বুক অ্যাওয়ার্ড ও আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন মোসাব আবু তোহা। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে পশ্চিমা শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোতে তো তিনি লিখছিলেনই। ফলে তরুণ এই কবির আটকের ঘটনা বেশ সাড়া ফেলে। কয়েকদিন পর ইসরায়েলি বাহিনী তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু এর আগে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাঁকে।

ফিলিস্তিনের রাস্তা

মোসাব আবু তোহা

আমার শহরের রাস্তাগুলোর নাম নেই,

যদি কোনো ফিলিস্তিনি নিহত হয়

স্নাইপারের গুলিতে বা ড্রোন হামলায়

আমরা তখন তার নামে

সড়কের নাম রাখি

আমাদের শিশুরা সবচেয়ে ভালো গুনতে শেখে,

ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি বা স্কুলের সংখ্যা গুনতে গিয়ে

কত মা–বাবা হতাহত হলো বা জেলে গেল

সেই হিসাব রাখতে গিয়ে

আর আমাদের বয়স্করা তাদের আইডি কার্ড নিয়ে ঘোরে

যাতে তারা ভুলে না যায় তাদের পরিচয়

(ইংরেজি থেকে অনূদিত)