জাপানের রেড আর্মির সদস্যরা উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নেমেছে ঢাকার বিমানবন্দরে। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে কন্ট্রোলরুম থেকে কথা বলছেন বিমান বাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ। সম্মিলিত লাল বাহিনী ছবির দৃশ্য
জাপানের রেড আর্মির সদস্যরা উড়োজাহাজ ছিনতাই করে নেমেছে ঢাকার বিমানবন্দরে। ছিনতাইকারীদের সঙ্গে কন্ট্রোলরুম থেকে কথা বলছেন বিমান বাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ। সম্মিলিত লাল বাহিনী ছবির দৃশ্য

চলচ্চিত্র

যুবকটি ছিল, সঙ্গে তাঁর লাল টুকটুকে স্বপ্নও

পাঁড় চলচ্চিত্র–দর্শকদের মধ্যে যাঁরা নাঈম মোহায়মেনের চলচ্চিত্র দেখতে পাননি, তাঁরা দুর্ভাগা। সম্প্রতি তাঁর বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র দেখার এবং তাতে দর্শকের অংশগ্রহণমূলক দর্শন-অভিজ্ঞতা ছিল একান্ত অভিনব। নাঈমের কোনো কোনো চলচ্চিত্র আমাদের তাৎক্ষণিকভাবে বিনোদিত করে না কিংবা কোনো সুনির্দিষ্ট অর্থময়তায় উপনীত করে না। অথচ চলচ্চিত্রগুলোর রেশ থেকে যায় হলফেরত দর্শকের চিন্তায়, মননে, ইতিহাসের সংক্রমণে। পরাক্রমশালী নয়া উপনিবেশবাদী বিশ্বরাজনীতির কূটকৌশল ও দুর্বৃত্তপরায়ণতায় আমরা ভাবিত হই। মনে হতে থাকে, পৃথিবীর কতশত মানবমুখী আয়োজন অর্থহীনতায় নিঃশেষ হচ্ছে। নাঈমের ছবি সাধারণত শেষ হয় এক খোলা প্রশ্নের আকারে। সেগুলো কি আমাদের হতাশাচ্ছন্ন করে তোলে, নাকি এক স্বপ্নময় পৃথিবীর সন্ধানে বুক বাঁধতে নতুন আশা জোগায়, তা নিয়ে মনে তর্ক চলতে থাকে।

বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কপ্রবাসী বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নির্মাতা নাঈম মোহায়মেনের চারটি ছবির সিরিজের দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনী হয়ে গেল বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্টার মিলনায়তনে। নাঈম পেশায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল আর্টস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। চলচ্চিত্র ও দৃশ্যশিল্পের আন্তর্জাতিক পরিসরে তিনি অত্যন্ত সক্রিয় একজন শিল্পী। নামজাদা বহু চলচ্চিত্র উৎসবে ও গ্যালারিতে তাঁর চলচ্চিত্র ও স্থাপনাশিল্প প্রদর্শিত হয়েছে।

বৈষম্যহীন সমাজতান্ত্রিক একটি বিশ্ব নির্মাণের আদর্শে লালিত বাংলাদেশসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তের বামপন্থীদের সংগ্রামের ধারা ১৯৭০–এর দশক পর্যন্ত নানা স্রোতে বয়ে এসেছে। এসব বিপ্লবী ধারা-উপধারা এবং স্বপ্নভরা আন্দোলনগুলো যেনবা এ সময়ের ইতিহাসের ধারা হয়েও বয়ে আসতে পারত, অথচ দারুণভাবে প্রতিহত হলো—উপসংহারে এমন একটা চিন্তা দোটানায় নিক্ষেপ করে দর্শকদের।

চলচ্চিত্রগুলোর স্বাধীন ও মুক্ত অভিব্যক্তি এবং নির্মোহ বয়ান–কৌশল দর্শকদের মধ্যে ব্রেখটীয় বিচ্ছিন্নতা জাগিয়ে তোলে। ঘটনার সত্যাসত্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কাহিনি নির্মাণ করতে নির্মাতা ইচ্ছুক নন। বরং চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে দর্শকের মনেও ক্রমেই জমা হতে থাকে দৃশ্যপরম্পরায় তাঁর নিজস্ব বয়ান নির্মাণের আকাঙ্ক্ষা। নাঈম মোহায়মেনের ছবির কোন কোন উপাদান কীভাবে বুনে দর্শক কোন ধারণাটিতে উপনীত হবেন, চলচ্চিত্রের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে করতে তিনি নিজেই তা নির্ধারণ করেন।

বৈষম্যহীন দুনিয়া গড়ার স্বপ্ন কি তাহলে সুদূরপরাহত? সেটা কি অধরা না পরিত্যক্ত স্বপ্ন? নাঈম মোহায়মেনের ছবি দেখার শেষে এসব ভাবনার বুদ্‌বুদ মাথায় নিয়ে নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত দর্শক বের হয়ে আসেন মিলনায়তন থেকে।

নাঈম মোহায়মেন পরিচালিত যেসব ছবি প্রদর্শন করা হলো: যুবকটি ছিল—খণ্ড ১: সম্মিলিত লাল বাহিনী (২০১১), যুবকটি ছিল—খণ্ড ২: আফসানের লম্বা দিন (২০১৪), যুবকটি ছিল—খণ্ড ৩: ঢাকা সেন্ট্রালে শেষ পুরুষ (২০১৫) এবং দুটি সমাবেশ একটি জানাজা (২০১৭)।

এন রাশেদ চৌধুরী