২২ শ্রাবণ উপলক্ষে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট। ছবি: লেখক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট। ছবি: লেখক

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় নতুন করে দেওয়ার কিছু নেই। তিনিই একমাত্র কবি যিনি একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দুটি স্বাধীন দেশের জাতীয় সংগীত রচয়িতা। পৃথিবীতে এটি অপূর্ব এবং বিরল দৃষ্টান্ত।

তৎকালীন পূর্ববাংলায় তথা বাংলাদেশে বিশ্বকবির পদচারণা ছিল। তিনি জমিদারি তদারকির জন্য বাংলাদেশের নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও কুষ্টিয়ার শিলাইদহে অবস্থান করেছেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ির খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামে। কাজেই বাংলাদেশ ভূখণ্ডের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ ছিল ঘনিষ্ঠ।

এ বছর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্তিতে তাঁকে বিশ্বকবির মর্যাদা এনে দেয়। তাঁর পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। বিশ্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এত জনপ্রিয়তা যে ৩৫টি দেশ থেকে তাঁর ওপর স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম, বিশেষ খাম, পোস্টকার্ড, অ্যারো গ্রাম, বিশেষ সিলমোহর, মিটার ফ্রাংকিং ইত্যাদি প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ওপর অধিকাংশ ডাকটিকিট জন্মবার্ষিকী ও নোবেল বিজয়ী হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁকে নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশিত হয় ভারত থেকে, ১৯৫২ সালের ১ অক্টোবর—যার মূল্যমান ছিল ১২ আনা। মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রথম ডাকটিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট বিশ্বকবির ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ ৪ টাকা মূল্যমানের ১টি স্মারক ডাকটিকিট, ১টি উদ্বোধনী খাম ও ১টি ডেটা কার্ড প্রকাশ করে। বাংলাদেশ থেকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এটি প্রথম প্রকাশিত ডাকটিকিট। এর ডিজাইনার ছিলেন আহমেদ ফজলুল করিম। ডাকটিকিটে রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর স্মৃতিবিজড়িত কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ির ছবি স্থান পায়। কুঠিবাড়িটি শিলাইদহ গ্রামের উত্তরে ১৩ বিঘা জমির ওপর ১৮৯২ সালের শেষ দিকে নির্মিত হয়। জমিদারি তদারকির জন্য রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে বেশ কয়েকবার অবস্থান করেছেন।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি বিসাউ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ডাকটিকিট প্রকাশ করে ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট। ছবি: লেখক

এরপর ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট মাসে আফ্রিকা মহাদেশের ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোর একটি গিনি বিসাউ বিশ্বকবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৪টি ডাকটিকিটের সিটলেট ও ১টি স্যুভেনির সিট প্রকাশ করে। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৬ সালের ১৫ আগস্ট পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার একটি স্যুভেনির সিট প্রকাশ করে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের ১০ আগস্ট ফিলাটেলিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (পিএবি) আয়োজিত ডাকটিকিট প্রদর্শনী ‘পাবেক্স -২০১৭’-এর উদ্বোধনী দিনে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ একটি বিশেষ খাম প্রকাশ করে। সেই বিশেষ খামে রবীন্দ্রনাথের ছবি স্থান পায়। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী থাকায় বিশেষ খামে তাঁর ছবি ব্যবহার করা হয়।

জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট ইত্যাদির চেয়ে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রকাশিত ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিটের পরিমাণ কম। ভবিষ্যতে অন্যান্য দেশগুলো এই বিশ্ববরেণ্য বাঙালির নামে আরও ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট ইত্যাদি প্রকাশ করবে বলেই আশা করি আমরা।

লেখক: ফিলাটেলিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (পিএবি) সাধারণ সম্পাদক