হানা দিয়েছে অমিক্রন। পেছাল অমর একুশে বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি যে মেলা হওয়ার কথা ছিল, তা আবার কখন, কীভাবে হতে পারে—এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে নানা মত। বেশির ভাগ লেখকই চান ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক। কিন্তু করোনা বাস্তবতাও আমলে নিয়েছেন তাঁরা। বইমেলা নিয়ে আট লেখকের কথকতা।পড়ুন মশিউল আলমের অভিমত।
একুশের বইমেলা আমাদের একমাত্র উৎসব, যাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ এক মাস ধরে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকেরা উদ্দীপ্ত থাকেন। আমাদের পুস্তক প্রকাশনাশিল্পের একটা বড় অংশই যেন এই মেলাকেন্দ্রিক। তাই বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু মহামারি পরিস্থিতির যে অবনতি ঘটেছে, তাতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তমূলক কিছু বলা দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক হবে না। দেখা যাচ্ছে, অমিক্রন ডেলটা ধরনের চেয়ে অনেক বেশি ছোঁয়াচে। গত বছর দ্বিতীয় ঢেউয়ের পিক সময়ে জুলাই-আগস্টে সংক্রমণের সর্বোচ্চ হার ছিল ৩২ শতাংশ, আর এবার তৃতীয় ঢেউয়ের শুরুতেই সংক্রমণের হার ৩১ শতাংশ। মাত্র এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ১৮০ শতাংশ, মৃত্যু বেড়েছে ৮০ শতাংশ। আগামী অন্তত দুই সপ্তাহ সংক্রমণ অব্যাহত থাকতে পারে। অমিক্রনে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম হলেও তা উপেক্ষণীয় নয়; প্রতিটি জীবনই মূল্যবান।
এই অবস্থায় ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বইমেলা শুরু করা উচিত হবে কি না, বলা কঠিন। কিন্তু কেউ কেউ যেমন বলছেন, ‘এবার আর বইমেলা হবে না,’ তাঁদের এমন হতাশার কোনো কারণ নেই। বইমেলার আয়োজন করা অবশ্যই সম্ভব এবং তা করাই উচিত। কারণ, লেখক-পাঠকের উৎসাহের দিকটি ছাড়াও এর একটা অর্থনৈতিক দিক আছে, যা আমাদের প্রকাশনাশিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত বছরও মহামারির কারণে বইমেলা ঠিক সময়ে হতে পারেনি এবং তাতে প্রকাশনাশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এবারও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে। কিন্তু দেরিতে হলেও বইমেলার আয়োজন করা উচিত; সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে সেটা করা সম্ভবও বটে। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে যদি সংক্রমণ কমতে থাকে, তাহলে পয়লা মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করা যেতে পারে এবং তা গোটা মার্চ মাস ধরেই চলতে পারে। ২১ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ২৬ মার্চ হতে পারে বইমেলার সর্বাধিক বিক্রির দিন।
মোটকথা, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ নিশ্চিত করে অবশ্যই বইমেলার আয়োজন করা উচিত এবং তা মার্চ মাসের মধ্যেই। আরও পেছানো ঠিক হবে না। কারণ, মার্চের শেষ দিকে ঝড়বৃষ্টি শুরুর আশঙ্কা থাকে।