শুধু রং আর বুনটের সমন্বয়ে ক্যানভাস গড়েন মাকসুদা ইকবাল। ফলে দর্শকেরা ভাবতে পারেন, রঙের ওপর রঙের প্রলেপে কোনো বিষয় তৈরি হয় নাকি? এ প্রশ্নের বিপরীতে বলা যায়, মানুষের চিন্তার প্রকাশ যেমন প্রবহমান নদীর মতো, শিল্পসৃষ্টিও তা-ই। কল্পনা আর বাস্তব—দুইয়ে মিলেই তো শিল্পের সংসার।
মাকসুদা ইকবালের ২৬টি কাজে রয়েছে প্রকৃতি আর মানুষের নানা অনুভব। সফেদ সাদা বুননের চিত্রতলে শিল্পী যেমন দেখিয়েছেন জমিনের ভেতরের গঠনশৈলী, তেমনি ক্যানভাসে আছে বিচিত্র রঙের গড়ন।
বাংলাদেশে বিমূর্ত বা নির্বস্তুক চিত্রকলাচর্চার শুরু শিল্পী মোহাম্মদ কিবরিয়ার হাত ধরে। নির্বস্তুক ছবি মূলত রংপ্রধান। এ ক্ষেত্রে ছবির জমিনে রঙের নানা স্তর বিন্যাসের পাশাপাশি শিল্পীর ভাবনার সঙ্গে এর সমন্বয়ই প্রধান হয়ে ওঠে। মাকসুদা ইকবালের ছবিগুলোও এই ধারার বাইরে নয়।
প্রথমে মাকসুদার ছবির জমিনের ধরন ও রং নিয়ে কথা বলা যাক। তাঁর ছবির ক্যানভাসে তেলরং মাধ্যমের ক্ষেত্রে শান্ত রঙের ব্যবহার অবশ্যই দৃষ্টি কেড়ে নেয়। উপরন্তু ক্যানভাসে রঙের আস্তর প্রয়োগের মাধ্যমে বুনট সৃষ্টি করে সেটি রেখে দেন তিনি। এরপর তার ওপর আরেকটি রঙের প্রলেপ দিয়ে তৈরি করেন নতুন আবহ। যেমন ‘স্টোরি অব আ ফিল্ড’ বা ‘একটি মাঠের গল্প’ শিরোনামের ছবিটিতে হলুদ ও লাল রঙের মিশ্রণে ফুটিয়ে তুলেছেন সোনালি মাঠের দৃশ্যরূপ। এ ছবিতে মাঠের রঙের সঙ্গে তৈরি হয়েছে শিল্পীর নিজস্ব কল্পনার যোগাযোগ। একইভাবে ‘সারফেস’ বা ‘জমিন’ নামের ছবিতে কেবল রচিত হয়েছে একটি নির্দিষ্ট জমির চিত্রকল্প।
মাকসুদা ইকবাল তাঁর ছবির প্যালেটে বেছে নিয়েছেন নিদিষ্ট কিছু রং। আর প্রকৃতি ও মানুষের মনের ভেতরে থাকা কিছু টুকরো অধ্যায়কে রংতুলির ছোঁয়ায় প্রকাশ করেছেন মাঝেমধ্যে। তাঁর ‘টেক্সচার অ্যান্ড কালার ইন মাইন্ডস্কেপ’ শীর্ষক ছবিটিতে রঙের বুনটের মাঝখানে দেখা যায় আলোছায়ার উপস্থিতি—গাঢ় লাল বুনটের ভেতর উঁকি দিচ্ছে গাঢ় কালো রঙের বুনট। সব মিলিয়ে এখানে যেন হাজির মন, রং ও বুনটের আন্তসম্পর্কের সমীক্ষা।
মাকসুদার ক্যানভাসে তেলরঙের ছাড়াও কাগজের ওপর তেলরঙে ব্যবহার করা কিছু কাজও আমরা দেখতে পাই। এই কাগজের কাজগুলোতে আবার দেখা গেল আড়াআড়ি ও ওপর-নিচে একরকম রেখা তৈরির প্রবণতা। তবে মজার বিষয় হলো, কাচ ও কাঠের ফ্রেমবন্দী হওয়ার পর ওই রেখাগুলো কিছুটা অদৃশ্য হয়ে যায়। তৈরি হয় নতুন এক ভাষা।
বেঙ্গল আর্ট লাউঞ্জে ‘ক্রোমাটিক ডিলিউশন’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২১ নভেম্বর।