যেটি এখন অমর একুশে বইমেলা—তার সূচনা একদিনে হয়নি। বাংলাদেশে বইমেলার সূচনা হয় স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই—১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি, মুক্তধারা প্রকাশনীর কর্ণধার চিত্তরঞ্জন সাহার উদ্যোগে। ১৯৭২–এ চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণের বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে গোড়াপত্তন করেন এই বইমেলার। বলা ভালো, এই ৩২টি বই–ই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ—বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনী—থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের শরণার্থী লেখকদের লেখা। অনেকের মতে, এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনাশিল্পেরও প্রথম দিককার প্রকাশনা।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৬—এ পর্যন্ত একাই বইমেলা চালিয়ে যান চিত্তরঞ্জন সাহা। তাঁর দেখাদেখি ১৯৭৭–এ অণুপ্রাণিত হলেন অন্যরা। ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক লোকসংস্কৃতিবিদ আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। আর ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি। চিত্তরঞ্জন সাহা এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা।
তখনো অবশ্য এ মেলার নাম আমর একুশে বইমেলা ছিল না। ১৯৮৩–তে মনজুরে মওলা যখন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক, সে সময়েই তিনি একাডেমিতে প্রথম ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’র আয়োজন সম্পন্ন করেন। তবে বিধি বাম। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিলে ট্রাক তুলে দেওয়ায় ওই বছর আর বইমেলা করা সম্ভব হয়নি। এর পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাড়ম্বরে উদ্বোধন ঘটল আজকের ‘অমর একুশে বইমেলা’র। সে সময় থেকে ২০১৩ সাল অব্দি বইমেলা হতো কেবল বাংলা একাডেমিতেই। ২০১৪ থেকে একে পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও সম্প্রসারিত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অমর একুশে বইমেলা এখন হয়ে উঠেছে বাঙালির প্রাণের মেলা।
সূত্র: উইকিপিডিয়া