শব্দের রুটি : আব্দুল মতিন
আগুনে পোড়া শব্দের রুটি নিয়ে বসে আছি, মলাটে বাঁধব বলে।
প্রথম প্রেমের আনন্দ আর এক জীবনে প্রান্তরে জমা গোধূলিতে আঁকব প্রচ্ছদ।
কাঁঠাল পাকা গন্ধে তুমি চলে এসো এই গ্রীষ্মে। নৈঃশব্দে আকাশে কাটাব মেঘচিলের ডানায়।
জলধির নিযুত ঢেউয়ে পাঠ করব কোটি বছরের পৃথিবীর বিচ্ছেদ।
পাহাড়ের বিষন্নতায় আমরা আবার হব বৃক্ষ। কার্বনের পৃথিবীতে ছড়াব অক্সিজেন।
মরে যাওয়া আমাজনকে জাগিয়ে তুলব সবুজ পাতিহাঁসের শব্দে।
রোপণ করব কবিতার বীজ। একদিন জন্ম নেবে উত্তাল প্রতিবাদ।
বৈশাখ হাসে ঘরের ভিতর : মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
বাজবে না আজ
তবলা কিংবা ঢাক,
ঘরে ঘরে পালন হবে
একেলা বৈশাখ।
নিরাপদে থাকব সবাই
প্রিয়জনের পাশে,
বৈশাখের সব রং যেন আজ
ঘরের ভিতর হাসে।
ঘর যেন হয় আলোকিত
ঘর বৈশাখী মেলা,
বৈশাখ হাসে ঘরের ভিতর
সকাল সন্ধ্যা বেলা।
অপ্রত্যাশিত অক্ষর : রুবাইয়াৎ নাহিয়ান
গতরাত ছাপ রেখে গেছে তুমুল আর্তনাদের
নিজের নখ দিয়ে সে রাত খামচে ধরেছিল আকাশের শরীর
আমি একে সংজ্ঞায়িত করেছি বিজলি বলে—
এবং আমার সামনে মৃত ভবিষ্যৎ অপেক্ষায় : অধীর
এই আর্তচিৎকারকে আমি ঝড় বলেছি—
কান্নাকে ছদ্মনামে বর্ষণ বলা
বাঁচার অভিলাষে আমি—প্রকৃতি,তোমার শ্বাসরোধ করেছি
তুমি কেন কেঁদে উঠছ!
যখন এই আমাদের মৃত্যুমুখীন পথচলা...
নিউইয়র্কে বেওয়ারিশ লাশে উদরপূর্তি করছে কবর
পত্রিকার পাতা ভারি হচ্ছে লাশের সংখ্যায়!—এই হলো আমাদের খবর
আমার শহরেও লাশের ওপর লাশ এসে
প্রাচীর গড়বে একদিন
লাশ হবার শঙ্কা বুকে নিয়ে কেটে যাচ্ছে
হোম কোয়ারেন্টিন।
কেঁদে বাঁচি : কমল খোন্দকার
বৈশাখে প্রতিবার পান্তা-ইলিশ
এইবার খাব শুধু করোনার বিষ!
জিন্দেগি ফানা ফানা! যা তো বাপু সর!
কত দিন ভাল্লাগে মরণের ডর?
দেখে নিস এইবার ভালো হয়ে যাব!
সবুজের সুরে দেশ বোশেখে সাজাব।
ঘুষ-ফুস যা খেয়েছি,অতীতের স্মৃতি
নাকে-কানে খত এই,হারাব না নীতি!
পাপ, শাপ, সীমা ছাড়া ক্ষমা কর ভাই!
ছ্যাঁচোনিতে কাবু আর ও পথ মাড়াই?
টাকা-মোহ জালে ছিনু মাকড়শা ফাঁদে,
সে টাকা করোনা ভয়ে ছুঁতে প্রাণ কাঁদে!
প্রিয়জন, প্রিয় দেশ, ভালোবাসা চাই
ছেড়ে দে মা বুঝে গেছি,এর বড় নাই!
অচেনা বৈশাখ : তাহমিনা কোরাইশী
যদিও সমতলে নেই বৈশাখী বার্তা
ওই দূর পাহাড়ের গাঁয়ে গাঁয়ে চলছে বিজু উৎসবের আয়োজন
বিরহে বেদনায় মূহ্যমান যদিও মানুষ
তবুও তো এসেছে পূর্ণিমা ছড়িয়ে মুঠো মুঠো জীবনের স্পন্দন,
চমকে চকিত দিগ্বদিক বিস্তৃত আলোয় আলোয়
আসে অমানিশা, ডাকে গোপন অভিসারে পাহাড় বন-বনান্তর
লতাগুল্ম ঝোপঝাড় রং-বেরঙের বুনো ফুল-- বাতাসে দোল খায় ভাটফুল অনাবিল
তবুও নেই আজ পান্তাইলিশের বিলাসি হই চই উপকরণ;
বহু বহু যুগ পরে আজ এ কেমন বিরস অসাড় বিরহী বৈশাখ
বদলে গেছে পৃথিবী করোনার করাল গ্রাসে
গৃহবন্দী খাঁচার জীবন, সভ্যতার কী নিদারুণ নির্মম পরিহাস!
প্রকৃতি বুঝি এবার নিজের হিসেব কড়ায়গণ্ডায় বুঝে নেবে,
আজ বন্দী মানুষ সাথে যানবাহন যত কর্মকাণ্ড চুকিয়ে গৃহকোণ,
প্রকৃতিতে পূর্ণযৌবন—সেজেছে সে আজ পহেলা বৈশাখী সাজে
বায়ুমণ্ডল দুষনমুক্ত ওজন স্তরে নেই বিষাক্ত কার্বন
জল-সমুদ্দুর-নদী-দীঘি বন-বনান্তর পশুপাখিদের অবাধ বিচরণ
সমুদ্রে হৈহুল্লোড়ে মেতেছে ডলফিন সৈকতের অভয় অরণ্যে
সদলবলে লাল কাঁকড়ার দলের গোল্লাছুট খেলা
বালিয়াড়িতে ছেয়ে গেছে সাগরলতা এবং ফুল প্রজাপতি অপরূপ
যে যার মতো করে উদ্যাপন করছে বুঝি বৈশাখ
এসো হে বৈশাখ সাজিয়ে দাও আকাশ বাতাস
গাছপালা লতাগুল্ম জল-স্থল-সমুদ্দুর পশুপাখির বন -বনান্তর
কী করবে এখন মানুষ?