হানা দিয়েছে অমিক্রন। পেছাল অমর একুশে বইমেলা। ১ ফেব্রুয়ারি যে মেলা হওয়ার কথা ছিল, তা আবার কখন, কীভাবে হতে পারে—এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আছে নানা মত। বেশির ভাগ লেখকই চান ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক। কিন্তু করোনা বাস্তবতাও আমলে নিয়েছেন তাঁরা। বইমেলা নিয়ে আট লেখকের কথকতা। পড়ুন সেলিনা হোসেনর লেখা।
আমি বাংলা একাডেমিতে ১৯৭০ সালের ২ জুলাই গবেষণা সহকারী হিসেবে যোগদান করি। ৩৪ বছর চাকরি করে ২০০৪ সালে অবসর নিই। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলা একাডেমি আয়োজিত বইমেলা প্রতিদিন দেখার সুযোগ আমার হয়েছিল। নিজের লেখালেখির সূত্র ধরে ভেবেছিলাম, এ আমার অস্তিত্বের মেলা। পরে দেখলাম, লেখক-পাঠকনির্বিশেষে বইমেলা অগণিত মানুষের প্রাণের মেলা হয়েছে। আমার ৩৪ বছরের চাকরিজীবনের এই আবহ এখনো আমার কাছে পর্যন্ত অনুপ্রেরণার উৎস। মেলাকে কেন্দ্র করে বই প্রকাশের এমন গভীর আনন্দ পৃথিবীর আর কোথায় পাব!
এ মেলাকে আস্তে আস্তে বড় হতে দেখেছি। স্টল তৈরি হতে দেখেছি। ছোট পরিসরে মেলার আয়োজন দেখেছি। এসব সত্তর দশকের কথা। তখন মানুষের ভিড় এবং স্টলের সংখ্যাও কম ছিল।
আশির দশকে বড় পরিবর্তন হয়। ১৯৮৪ সালে বইমেলার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। এ সময় মেলার আয়তন যেমন বাড়ে, তেমনি সময়ও বৃদ্ধি পায়—৭ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ সময় বইমেলা উদ্বোধন করতেন দেশেবরেণ্য ব্যক্তিরা। মেলার এমন পরিবেশে বিশ্বাস করতাম, মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনাকে পরিশীলিত করতে এমন মেলার বড় ভূমিকা আছে।
আমার সেই বিশ্বাস এখনো অটুট। তাই বলতে চাই, ১ ফেব্রুয়ারি না হোক, অন্তত ১৫ তারিখ থেকে বইমেলা হোক। ফেব্রুয়ারিতেই বইমেলা হোক। যদিও করোনার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা করা খানিকটা চ্যালেঞ্জও বটে, তবু জীবন তো থেমে থাকে না। এ ক্ষেত্রে মেলায় প্রবেশের জন্য টিকা কার্ড দেখানো বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। যাঁদের টিকার কাগজ নেই, তাঁরা ঢুকতে পারবেন না। তারপরও বইমেলা হোক। কারণ, ফেব্রুয়ারির এ মেলার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আমাদের ঐতিহ্যের সৌরভ, প্রকাশনাশিল্পের গৌরব।