অপরূপা প্রতিবেশিনীকে পটাতে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সুমিষ্ট গলায় গান গেয়ে চলেছেন সুনীল দত্ত। তাঁর ঠিক পেছনেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছেন কিশোর কুমার। ওভাবে কেন লুকিয়ে আছেন তিনি? কারণ সুনীল দত্ত গান গাইছেন না। গাইছেন আসলে কিশোর কুমার। সুনীল দত্ত কেবল গান গাওয়ার অভিনয় করে যাচ্ছেন। মূকাভিনয়।
পাড়োসান নামক হিন্দি কমেডি ছবির এই দৃশ্য উপমহাদেশের সিনেমা-দর্শকদের চোখে চিরকালের জন্য আঁকা হয়ে গেছে। ১৯৬৮ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবি ভূ-ভারতে সবচেয়ে বেশিবার দেখা সিনেমাগুলোর একটি। আজও এটি দেখেই চলেছেন দর্শকেরা, ইউটিউবের কল্যাণে। রাহুল দেব বর্মণের সুরে রচিত গানগুলো আজও বেজে চলেছে মহল্লার অলিগলিতে। বাজতে থাকবে আরও বেশ কিছুকাল।
পাড়োসান সিনেমার কাহিনি যে সংকটকে ঘিরে আবর্তিত হয়, সেটি খুবই সরল। সংকটের মূলে রয়েছে প্রতারণা। নায়কের প্রতারণা। প্রতিবেশিনী সায়রা বানু ওরফে িবন্দুর হৃদয় জয় করতে চান সুনীল দত্ত, সিনেমায় যাঁর নাম ভোলা। কিন্তু সমস্যা হয়েছে, সায়রা বানু কেবল সুমিষ্ট গলায় গান গাইতে সক্ষম কোনো পুরুষকেই আকাঙ্ক্ষা করেন। অন্য কাউকে না। উপায়ান্তর না দেখে সুনীল দত্ত ওরফে ভোলা শরণ নিলেন প্রতারণার। তিনি মহল্লার থিয়েটার দলের মুখ্য পরিচালক বিদ্যাপতিকে (কিশোর কুমার) গিয়ে ধরলেন। বিদ্যাপতি দেখতে মোটেই আকর্ষণীয় নন। সারাক্ষণ পান খেতে থাকায় তাঁর ঠোঁটের কোনায় লাল কষ স্থায়ীভাবে লেগে থাকে। তবে তাঁর গানের গলাটি বড় সুমিষ্ট ও ভরাট। বড় ভাইসুলভ দায়িত্বের খাতিরে ভোলাকে উদ্ধারে এগিয়ে এলেন বিদ্যাপতি। কপাট খোলা জানালার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোঁট নাড়েন ভোলা। আর তাঁর ঠিক পেছনে বা পাশে লুকিয়ে কণ্ঠ দেন বিদ্যাপতি ওরফে কিশোর কুমার।
ভোলার গানের গলায় মুগ্ধ িবন্দু সহজেই তাঁর প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু এই প্রতারণা তো চিরকাল চলতে পারে না, তাই না? একসময় বিন্দুর চোখে ভোলার প্রতারণা ধরা পড়ে। তাঁর এই ‘এপিফ্যানি’ বা সত্যোপলব্ধির মুহূর্তটি পুরো সিনেমার সবচেয়ে নাটকীয় ও তুরীয় মুহূর্ত। একেবারে গান গাওয়ার ‘ভান’ করার মুহূর্তে, হাতেনাতে ধরা পড়ে যান ভোলা। তারপর মান-অভিমানের পর্ব শেষে পুনর্মিলন।
ছোটবেলায় সিনেমাটি দেখার সময় দুটি প্রশ্ন আমার মাথায় খচখচ করতে শুরু করে। প্রথমটির উৎস নিহিত হিন্দি সিনেমার প্লে-ব্যাক গানের ঐতিহ্যের মধ্যে। হিন্দি সিনেমায় সব নায়ক-নায়িকাই অন্যের কণ্ঠ ধার করেন। পর্দায় তাঁরা যখন গান করেন, দর্শকেরা তখন জেনেই যান যে এটি অন্য কারও কণ্ঠ। তাহলে এখানে পাড়োসান ছবিতে ভোলার অপকর্মটিকে আলাদা করব কীভাবে? ছবিতে বিদ্যাপতির ভূমিকায় কিশোর কুমার অভিনয় না করে যদি অন্য কেউ অভিনয় করতেন এবং কিশোর কুমার এখানে শুধু প্লে-ব্যাক করতেন, তাহলে কী হতো? তাহলে রিপ্রেজেন্টেশনের দুই স্তরের প্যাঁচ লেগে যেত। তখন অভিনেতা বিদ্যাপতি ‘সত্যিকারের’ গায়ক কিশোর কুমারের কণ্ঠ ‘ফেক’ করতেন, আর বিদ্যাপতির সেই ‘ফেক কণ্ঠ’ আরেক দফা ‘ফেক’ করতেন ভোলা।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরও গুরুতর। সিনেমায় সায়রা বানু যদি ভোলার কণ্ঠের প্রেমে পড়ে থাকেন এবং ভোলার সত্যিকার কণ্ঠটি যদি হয়ে থাকে বিদ্যাপতির, তাহলে সায়রা বানু তো আসলে পড়েছেন বিদ্যাপতির প্রেমে, ভোলার নয়। সে ক্ষেত্রে যখন সায়রা বানুর সামনে সত্য উন্মোচিত হয়, তখন ভোলার বদলে তাঁর তো উচিত ছিল বিদ্যাপতির গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া। তা না করে সায়রা বানু অমন আপসেট হয়ে গেলেন কেন?
অতি অল্প বয়সে এই প্রশ্নগুলো কাউকে করতে পারিনি। ভেবেছি বড় হয়ে চিন্তা পরিপক্ব হলে এগুলোর উত্তর আপনা-আপনি ধরা দেবে। কিন্তু লক্ষ করছি, বয়স বাড়লেও আমার চিন্তা আর পরিপক্ব হয়নি; বরং চিন্তায় নতুন কিছু জট সৃষ্টি হয়েছে।
সবচেয়ে বড় জটটি হলো সত্যোপলব্ধি-সংক্রান্ত। সিনেমায় বিন্দু বা সায়রা বানুর সত্যোপলব্ধি ঘটে। ভোলার ‘ভেক’ বা নকল পরিচয় তাঁর কাছে উন্মোচিত হয়। কিন্তু জগৎ বা (দর্শনের ভাষায়)‘বহির্জগৎ’ নামক যে অতিকায় ‘নকল’ গায়ক অহর্নিশি সম্মোহনী গান শুনিয়ে আমাদের সবার বুদ্ধি অবশ করে রেখেছে, তার পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্যিকার গায়কটি কে? জগতের অন্তরালের সত্যের সন্ধান আমরা কী করে পাব? সায়রা বানুর পক্ষে কি কোনো দিনও ভোলাকে পেরিয়ে বিদ্যাপতির নাগাল পাওয়া সম্ভব? কিংবা সম্ভব ভোলা আর বিদ্যাপতির কণ্ঠ বিনিময়ের কর্মটি ওভাবে হাতেনাতে ধরে ফেলা?
পাড়োসান ছবিটি কেউ যদি খুব ভালো করে লক্ষ করেন, তিনি দেখবেন এটি নিছক কোনো কমেডি ছবি নয়। এর নানান দৃশ্যের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব, সত্য আর মানুষের সত্যজ্ঞান লাভের প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো উঁকি দিচ্ছে।
সবার আগে যে বিষয়টি একজন মনোযোগী দর্শকের চোখে না পড়েই যায় না, তা হলো পাড়োসান-এর সেটের সঙ্গে প্লেটোর গুহার মিল। ছবির মূল সেটটি কেমন? পাশাপাশি দুটি ভবনে দুই প্রতিবেশীর বাড়ি, মাঝখানে ছোট্ট একটি গলিপথ দিয়ে পৃথক করা। দুটি বাড়ির দোতলায় মুখোমুখি জানালা। এক বাড়ির জানালায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিলে অপর বাড়ির একটি ঘরের কিছু অংশ দেখা যায়। ঘরের বাকিটা আড়ালেই থাকে। এক বাড়ির ঘর থেকে অন্য বাড়ির ঘরে পৌঁছানোর কোনো সরাসরি পথ নেই। পৌঁছাতে হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভবনের সিঁড়ি দিয়ে নেমে রাস্তা পেরিয়ে পাশের ভবনে ঢুকে সিঁড়ি বেঁয়ে উঠে আসতে হবে। এই যে ঘুরে আসা, ভবন পেরিয়ে পেছন দিক দিয়ে আসা, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মতো। সুনীল দত্ত ওরফে ভোলা ও সায়রা বানু ওরফে বিন্দু যখনই নিজ নিজ জানালায় এসে দাঁড়ান, তখন ক্যামেরার ফ্রেম এমনভাবে ধরা হয় যে তাঁদের নাটকের মঞ্চের কুশীলব বা পাপেট শোয়ের পুতুল বলে মনে হতে থাকে। যেন তাঁরা একে অপরের সামনে অভিনয়ে নেমেছেন। এভাবে প্রতিদিন নিজ নিজ জানালায় দাঁড়িয়ে এই দুই কুশীলব পরস্পরের বাস্তবতার একটি ক্ষুদ্র অংশই কেবল দেখতে পান। তাঁরা একে অপরের সম্পর্কে যা কিছু জানতে পারেন, দর্শনের ভাষায় সেটাকে বলে ‘অ্যাপিয়ারেন্স’ বা অবভাস। এই অবভাস পেরিয়ে রিয়্যালিটি বা সারবত্তায় পৌঁছানোর কোনো পথ তাঁদের সামনে খোলা নেই।
এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সমস্যা দেখা দেয়, যখন ভোলা নিজেকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতে শুরু করেন। তিনি যা নন, সায়রা বানুর সামনে নিজেকে তাই হিসেবে জাহির করতে শুরু করেন তিনি। আমরা এটাকে প্রতারণা বলছি, কারণ আমরা এপাশ থেকে মিস-রিপ্রেজেন্টেশন বা ভুল প্রতিনিধিত্বের পুরো প্রক্রিয়াটি দেখতে পাচ্ছি। যদি না পেতাম, ধরা যাক, যদি আমরা সায়রা বানুর দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁর জানালা দিয়ে পুরো সিনেমাটি দেখতাম, তাহলে কী হতো? তাহলে ছবির অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত এটা আমাদের কাছে প্রতারণা বলে প্রতিভাত হতো না। ভোলাকে আমাদের সুমিষ্ট কণ্ঠের গায়ক বলেই মনে হতো, যতক্ষণ পর্যন্ত না দরজার আড়াল থেকে বিদ্যাপতিরূপী কিশোর কুমার বেরিয়ে আসছেন।
ভোলা নামক অবভাস নিয়ে সায়রা বানুর মনে সন্দেহের বীজ প্রথম ঢুকিয়ে দেন বান্ধবী অনুরাধা। তিনি সায়রা বানুকে টেনে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে পাশের ভবনের দোতলার সেই কক্ষে নিয়ে যান, যেখানে মিস-রিপ্রেজেন্টেশন প্রক্রিয়াটি চলছে। সেখানে পা রেখেই সায়রা বানু অবভাসের পেছনের রিয়্যালিটির জগৎ স্বচক্ষে দেখে ফেলেন। তাঁর সত্যজ্ঞান হয়, জগতের অধিকাংশ মানুষের জীবনে যা কস্মিনকালে হয় না। কিন্তু এই সত্যজ্ঞানের ধাক্কা সায়রা বানুর পক্ষে সহ্য করা সম্ভব হয়নি। তাঁর এত দিনকার জগৎ ভেঙে যায়। তিনি ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
বান্ধবী অনুরাধাকে আমরা এ ক্ষেত্রে গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর সঙ্গে তুলনা করতে পারি। প্লেটো মানুষকে তাঁর অবভাসের গুহার অন্ধকার থেকে টেনে বের করে জগতের সত্য রূপের সূর্যালোকে দাঁড় করার চেষ্টা করেছিলেন দুই সহস্রাধিক বছর আগে। অনুরাধাও তাই করেছেন। রিপাবলিক নামক বইয়ে প্লেটো সত্য আর অসত্যের জগতের তুলনা করতে গিয়ে একটি আধো-অন্ধকার গুহার রূপকের অবতারণা করেছেন, যে গুহার দেয়ালে বস্তুর কাঁপা-কাঁপা ছায়ার দিকে তাকিয়ে আছে শেকল-পরা কতগুলো বন্দী। প্লেটোর গুহা সম্ভবত চিন্তার ইতিহাসের সবচেয়ে আলোচিত রূপক। সেই গুহার সঙ্গে পাড়োসান ছবির সেটের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভোলা যেন জানালার ফ্রেমে পুতুলনাচের নাচ নাচছেন। আর শেকলবাঁধা সায়রা বানুর সেদিকে তাকিয়ে থেকে ভোলার অবভাসকে রিয়্যালিটি না ভেবে উপায় থাকছে না।
সায়রা বানু যখন সত্য উদ্ঘাটনে ভোলার ঘরে ঢোকেন, যখন তিনি তাকান সত্যের দিকে, সেই তাকানোটিকে মিশেল ফুকো বলতে চান ‘গেইজ’। পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ডে এই গেইজের একটি বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই গেইজের মুহূর্তে কী ঘটে বলা মুশকিল। প্লেটো বলছেন, সায়রা বানু ভোলার ঘরে ঢুকে শুরুতেই বিদ্যাপতিকে দেখতে পাবেন না। তিনি শুধু গান গাইতে থাকা ভোলাকেই দেখতে পাবেন। কেন? কারণ, সত্যের তীব্র আলোর ঝলকানিতে তাঁর চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। সত্য দর্শনে তাঁর চোখ অভ্যস্ত নয়। অতি ধীরে, বেশ কিছুটা সময় নিয়ে বিদ্যাপতির অবয়ব তাঁর সামনে ভেসে উঠতে থাকবে, প্রথমে পা, তারপরে হাত, তারপরে মাথা—এভােব। এই অভ্যস্ত হওয়ার ব্যাপারটিকে প্লেটো বলতে চান শিক্ষালাভ। গুহার বাইরের এই দুনিয়াটি তৈরি বিমূর্ত আইডিয়া বা ‘আদর্শ চিন্তাসার’ দিয়ে। দুনিয়ার সব গাছের পেছনে আছে গাছ নামক একটি আদর্শ আইডিয়া, দুনিয়ার তামাম ত্রিভুজাকৃতি জিনিসের পেছনে আছে ত্রিভুজ নামক এক আদর্শ আইডিয়া। প্লেটোর চোখে বাস্তবের যেকোনো গাছের চেয়ে গাছের এই বিমূর্ত ধারণা বেশি সত্য, স্থায়ী সত্য।
প্লেটোর এই ভাবনার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হবেন না দার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট। তিনি বলবেন, চোখ সওয়ার কোনো ব্যাপার এখানে নেই। ভোলার কক্ষে ঢুকে যেতে পারলেও সায়রা বানু কোনো দিনই বিদ্যাপতিকে দেখতে পাবেন না। কান্টের চোখে বিদ্যাপতি হলেন ‘থিং ইন ইটসেলফ’ বা ‘বস্তুসার’। জগতের সমস্ত কিছুর পেছনের কারণ এই ‘থিং ইন ইটসেলফ’। এটিই সব গানের পেছনের আদি গায়ক। কিন্তু ইন্দ্রিয়ের কারাগারে বন্দী মানুষের পক্ষে তার নাগাল কোনো দিনই পাওয়া সম্ভব নয়। লালন ফকিরের মতো চিরকাল তাকে কেবল বাঞ্ছা করা সম্ভব, বাড়ির কাছের ‘পড়শির’ দর্শনলাভ কোনো দিনও সম্ভব নয়।
প্লেটোর গুহার রূপক নিয়ে সবচেয়ে অদ্ভুত কথাটি সম্ভবত বলেছেন জার্মান দার্শনিক মার্টিন হাইডেগার। তিনি বলছেন, ভোলার ঘরে ঢুকে সায়রা বানু কী দেখতে পাবেন, সেটা খুব জরুরি বিষয় নয়। এই ঘরে সায়রা বানুর প্রবেশের ব্যাপারটিই জরুরি বিষয়। এখানে প্রবেশ করামাত্র সায়রা বানু বদলে যাবেন। তিনি আর সায়রা বানু থাকবেন না। তাঁর নিজের ‘বিয়িং’ বা অন্তরাত্মা রূপান্তরিত হয়ে যাবে। নিজের আত্মাকে রূপান্তরিত না করে, আগাপাছতলা বদলে না ফেলে কখনো সত্য দর্শন সম্ভব নয়।
আমার নিজের মনে হয়, পুরো প্রক্রিয়াটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিজের ঘর থেকে সায়রা বানুর ভোলার ঘরের দিকে যাত্রা। সিনেমাটি যদি কেউ আবার ভালো করে দেখেন, তাহলে তিনি দেখতে পাবেন, কীভাবে সায়রা বানু তাঁর নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে রাস্তা পেরিয়ে পাশের ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উঠে ভোলার ঘরে প্রবেশ করছেন। আমার সব সময় কল্পনা করতে ইচ্ছে করে, যাত্রার এই মধ্যবর্তী মুহূর্তে একসঙ্গে অনেক কিছু ঘটে যেতে থাকবে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোলার বাড়ির ঠিকানা বদলে যাওয়া। ফলে সায়রা বানু সব সময় একটি ভুল ভবনে প্রবেশ করবেন, ভুল ঠিকানায়। অথবা সায়রা বানুর মধ্যে িচন্তার এমন পুনর্বিন্যাস ঘটবে যে তিনি উল্টো দিকে হাঁটা দিয়ে অন্য একটি বাড়িতে ঢুকবেন। সেখানে গিয়ে তিনি অন্য একটি ভোলা এবং অন্য একটি বিদ্যাপতির মুখোমুখি হবেন। এই ভোলা অন্য একটি সায়রা বানুর জন্য জানালার সামনে দাঁড়িয়ে গান গাইছেন। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সায়রা বানু ভোলাকে পেরিয়ে জানালার ওপারে আরেকটি জানালায় আরেকটি সায়রা বানুকে দেখতে পাবেন। সেই অন্য সায়রা বানু জানালা পথে তাকিয়ে আছেন এই সায়রা বানুর দিকে। সোজাসুজি। নিষ্পলক।