নবীন ছাপচিত্রী ইকবাল বাহার চৌধুরী তাঁর একক ছাপচিত্র প্রদর্শনী ‘মিটস অ্যান্ড হেইনস’ নিয়ে বর্তমানে আসন পেতেছেন ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে। মোট ৬০টি চিত্রকর্ম নিয়ে এ প্রদর্শনীতে রয়েছে এচিং, উড কার্ভিং ও উড ইন্ট্যাগ্লিভের কাজ। মিশ্র মাধ্যমের কাজ ছাড়াও আছে জলরঙের কিছু মনোমুগ্ধকর কাজ।
ইকবালের প্রদর্শনী নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই কথা বলতে হবে তাঁর করণকৌশল নিয়ে। কেননা, তাঁর করণকৌশলে আছে প্রবল পর্যবেক্ষণ এবং নিরীক্ষণের তদারকি। ছাপচিত্র সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। এক প্রকারের উপকরণের উপরিতলে খোদাই চিত্রের ওপর রোলার দিয়ে রং করে কাগজে ছাপ নেওয়া হয়। প্লেটের খোদাই করা অংশ রং ছাড়া সাদায় প্রস্ফুটিত হয়ে ছাপাই ছবির নকশার অংশ হয়ে ওঠে। যেমন উডকাঠ ও লিথোগ্রাফ। আরেক প্রকার পদ্ধতি হলো ইন্ট্যাগলিও। এই পদ্ধতিতে অ্যাসিড দিয়ে কপার বা জিঙ্ক প্লেটে প্রচুর রেখার সমাহারে রং প্রয়োগ করে ফুটিয়ে তোলা হয় ছবি। এচিং, অ্যাকুয়াটিন্ট হলো এই মাধ্যমের ছবি। ইকবালের প্রিয় মাধ্যম ইন্ট্যাগলিও। ফলে প্রদর্শনীতে তাঁর বেশির ভাগ কাজই এ পদ্ধতির।
এই শিল্পীর ছবির বিষয়বস্তু তাঁর মনোজগৎ। শিল্পীর মনোজগতের বিশ্লেষণিক পরিভাষাই দর্শক দেখতে পান তাঁর কাজে। কক্সবাজারে জন্ম নেওয়া এই শিল্পীর ছবির সারফেসও সাগরতটের নুড়ি-কণার মতো রঙের টেক্সচারে নান্দনিক। শুধু রং নয়, তাঁর আছে অন্য আরও কিছু কৌশল। যেমন ‘টেস্ট অব টাইম-১’ ছবিতে রঙের টেক্সচার আনতে ইকবাল ব্যবহার করেছেন টিসু পেপার, নেট, কার্টনের অসমতল কাগজ, পাতলা কাপড় প্রভৃতি। শেওলা সবুজ রঙের এ ছবিতে ধরা পড়েছে ফেলে আসা সময়ের দারুণ এক দুপুরের নির্জীবতা।
ইকবালের ছবিগুলো বিমূর্ত হয়েও যেন বিমূর্ততায় নির্লিপ্ত নয়। ‘রিলেশন’ সিরিজের কাজগুলোতে যে ফিগারেটিভ ফর্ম ব্যবহার করা হয়েছে, তা যেন ছবির সারফেসের সঙ্গে পরিপূরক হয়ে উঠেছে।
প্রদর্শনীতে কিছু ছোট ছোট মাপের জলরঙের ছবিও দেখা গেল। সাদা কাগজে জলরঙের ওয়াশ দিয়ে নিজস্ব ফর্মে চিত্তাকর্ষক কিছু অনুভূতি সৃষ্টি করেছেন শিল্পী।
১৪ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৯ জুন পর্যন্ত।