>মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার পর্দা নামবে আগামীকালই। এ প্রক্ষাপটে কয়েকজন লেখক ও প্রকাশকের কাছে আমরা জানতে চেয়েছিলাম বইমেলা নিয়ে তাঁদের ভাবনা। এবারের বইমেলা কেমন হলো? এই প্রশ্নের পাশাপাশি ভবিষ্যতে বইমেলাকে কীভাবে দেখতে চান তাঁরা? লেখক–প্রকাশকেরা জানালেন সেই কথাও
লেখক
এবারের বইমেলা অনেক বড় পরিসরে অনুিষ্ঠত হচ্ছে। এবং তা খুব সৃষ্টিশীলভাবে সাজানো, দৃষ্টিনন্দন ও স্বস্তিকর। পরিসর বেশি হওয়ায় আগের বইমেলার মতো কারও গায়ের সঙ্গে গা লাগেনি, তাতে সবাই খুব তৃপ্তির সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন স্থাপনায় যেসব সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, তা অত্যন্ত ভালো। প্যাভিলিয়নগুলো সুচারুভাবে তৈরি হয়েছে। চলাচলের রাস্তাগুলো প্রশস্ত। ধুলোবালির আক্রমণও কম। ফলে সব দিক থেকে আকর্ষণীয় এবারের বইমেলা।
অনেকেই দেখেছি বই কিনেছেন, কিন্তু কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। গতবারের বই বিক্রির পরিসংখ্যান এবার ছাড়িয়ে যাবে আশা করি। যদি পাঠকের হাতে হাতে বই পৌঁছে না যায়, তবে তো বইমেলার পরিপূর্ণতা আসে না। এবার ঘুরেফিরে আরেকটা কথাও মনে হয়েছে, পাঠকের ভেতরে আগ্রহ আছে, কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই, বিশেষত শিক্ষার্থীরা বই কিনতে পারেনি। আশা করি প্রকাশকেরা বইয়ের মান উন্নয়ন এবং দাম সাশ্রয়ী করার সমীকরণ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি করে ভাববেন। সে অনুযায়ী কাজ করবেন।
বইয়ের মান ক্রমাগতভাবে উন্নত হচ্ছে। প্রচ্ছদ, ছাপানো ও অন্যান্য বিষয়ে পেশাদারত্ব দেখতে পাই। এই পেশাদারত্ব যদি বইয়ের নির্বাচন, সুসম্পাদনা ও ত্রুটিহীন করার ক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়, তাহলে নিঃসন্দেহে সেটি প্রকাশনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে।
বইমেলা আমাদের সংস্কৃতির শক্তিকে একটি উল্লেখযোগ্য জায়গায় নিয়ে গেছে। একুশের সঙ্গে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে এটি যেমন আমাদের সাংস্কৃতিক ঐক্যের একটি ভূমি প্রস্তুত করে, তেমনি আবার আবহাওয়াগত কারণে বসন্ত ঋতুর সঙ্গে এর সমান্তরাল অবস্থানের কারণে মেলাটিকে বাঙালির উচ্ছ্বাস–আনন্দ ও আবেগের প্রকাশ হিসেবে দেখার সুযোগও রয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে পারি, বইমেলা একটি ঘটনা ও পরম্পরা। এটি প্রতিবছর চালু থাকুক এবং উত্তরোত্তর এর শ্রীবৃদ্ধি ঘটুক, একজন লেখক ও পাঠক হিসেবে এটাই আমার কাম্য।
লেখক, প্রকাশক—জার্নিম্যান বুকস
অমর একুশে গ্রন্থমেলা যখন থেকে শুরু হয়, সে সময় থেকেই আমার স্কুল ও বাড়ি—দুটোই হাঁটা দূরত্বের মধ্যে থাকায় মেলায় যাতায়াত ছিল নিজের আঙিনায় ঘোরাফেরার মতো। সেই সুদূর ১৯৮৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক শাসনামলে ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অবস্থায় আমার ছোট একটি কবিতার বই বেরোল দুঃসময় নামে। বর্ধমান হাউসের উত্তর দিকের সিঁড়ির পাশে ছোট একটা বাঁশের টেবিলে, যেটি মূলত বসার বেঞ্চ হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে নিকটজনদের সহযোগিতায় নতুন প্রকাশিত বইটি বিক্রি করেছিলাম। আমার বড় ভাই আরিফ আর সহপাঠী মঈন সারা দিন আমার সঙ্গে থেকে সহায়তা করেছিল। বাকি বন্ধুরা সবাই তখন আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। সেই যে গোলাপের নিচে নিহত এক কবি-কিশোর ভবঘুরেদের লাইসেন্স পেয়ে গেল, সেই থেকে আর মুক্তি হলো না।
এখনো বইমেলা এলে জিপসিদের মতো তাঁবু খাটানোর মতো করে স্টল বা প্যাভিলিয়ন বানিয়ে এক মাসের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসন পাতি। কত বিচিত্র অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর সময় যায়—কিছু না কিছু শিখি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা এখন বাঙালির প্রাণের মেলা। সময়ের পরিসর হিসেবে পৃথিবীর দীর্ঘতম সময়ের বইমেলা। লেখক, প্রকাশক বা গ্রন্থনির্মাণ–কর্মী নানা ভূমিকায় এই মেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও নবীন পাঠকের কৌতূহল নিয়ে সব সময় বইমেলাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। মেলার পরিসর এখন বহু বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, সাজসজ্জায় এসেছে আধুনিকতার ছাপ, আইনশৃঙ্খলায় এসেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জোরালো উপস্থিতি। গণ-আয়োজনে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মালিকানা চলে না। তবেÑকয়েক বছর ধরে যে ভিন্ন একটি অনুভূতি বইপ্রেমীদের আহত করছে, এটি হলো বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ, যাঁরা মূলত এই অঙ্গনের মানুষদের মনমানসিকতা না বুঝে এমন দৃষ্টিকটু কিছু কাজ করেন, যা লেখক-প্রকাশকদের আহত করে। একটি কথা সবার আগে মনের ভেতর গেঁথে নিতে হবে, বইমেলা কখনোই আর পাঁচটি বারোয়ারি মেলার মতো নয়। প্রতিবছর এর আয়তন না বাড়িয়ে বরং আমরা আমাদের সৃজনশীল চিন্তার দিগন্তকে আরও আরও প্রসারিত করতে পারি। একজন লেখক ও প্রকাশক হিসেবে বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশা সামান্যই—চোখ ধাঁধানো আর অসামান্য কিছু করার প্রতিযোগিতা থেকে বের হয়ে এসে আমরা যেন শুধু বইবান্ধব একটি সৃজনশীল মেলার সহজিয়া ভাবনায় নিজেদের মিলিত রাখি।
লেখক
বইমেলা এবার ভালো গেছে সব অর্থেই। সবাই বলছে, এটাই আজ অবধি হওয়া সব থেকে সুন্দর বইমেলা। কথা ভুল নয়। বিশাল মেলার মাঠ, খোলামেলা হাঁটা-বসা-চলার জায়গা, প্রথমা প্রকাশনের প্যাভিলিয়ন থেকে একটু সামনে গেলেই বেশ মানসম্মত কিছু খাবারের দোকান, আর সব ছাড়িয়ে ওই পানির ওপারে ঝলমল করে জ্বলতে থাকা রাতের অন্ধকারে স্নিগ্ধ কিন্তু অহংকারী ও অপরূপ ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’। এর পাশেই ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ, যেখানে প্রতিদিন বিকেলে কথা বলছেন লেখকেরা—সব মিলিয়ে সুন্দর। আরও ভালো লেগেছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য বইয়ের স্টল এবং বিশাল এক গাছের নিচে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের বিরাট মঞ্চ। বাহ্যিক সৌকর্যে এত সুন্দর মেলা এর আগে আসলেই হয়নি। সেই সঙ্গে এবার আবহাওয়াও ছিল ভালো—না গরম না ঠান্ডা; যদিও রাত পড়ে এলে ওই মনোরম পানির পাশটাতে অনেককেই বলতে শুনেছি, ‘বেশ ঠান্ডা লাগছে, কাল থেকে জ্যাকেট আনতে হবে।’
কিন্তু একই সঙ্গে কী ভালো ছিল না, তা–ও বলা যায়: যার মধ্যে পড়বে এই বেশি বড় মেলার মাঠের বিষয়টা, যা কিনা সম্ভবত কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবার বইয়ের বিক্রিতে। ধুলা আর ধুলা। কত মানুষকে যে বলতে শুনেছি, ‘ভাই ওই স্টলটা কোন দিকে?’, তারপর উত্তরে যখন বলা হলো, ‘ওই যে দূরে, পানির ওপারে’, তখন প্রশ্নকারীর চোখে কীভাবে যে দেখেছি এই অনুচ্চারিত আফসোস যে কেন মেলাটা আরও ‘কম্প্যাক্ট’ হলো না? কেবল দূরত্বের কারণে ‘না, ভাই থাক, এদিক দিয়ে বরং বেরিয়ে যাই’, এমন বলেছেন এবার অনেকেই। আর ধুলার ব্যাপারে বলব, কী সমস্যা হতো আয়োজকেরা দিনের মধ্যে আরও দু–একবার পানি ছিটালে? এবং কী লাগে আরেকটু মানসম্মত টয়লেট বানাতে? মেলার টয়লেট বিশ্বমানের হওয়ার আসলে সময় এসে গেছে। দেশ যেহেতু এত এগিয়েছে, তাই তো এটুকু আশা আমরা করতেই পারি।
শেষে বইয়ের ব্যাপারে বলব: বই—যার জন্য এই মেলা—এত বড় মেলায় এত ঘুরেও কেনার মতো বই পাইনি ৫০টির বেশি। অনেক প্রকাশক যেনতেন বই নিয়ে মেলায় চলে এসেছেন। তবে বিরক্ত হইনি তাতে, কারণ, সবকিছুর শেষেও বই–ই তো ছিল ওরা, এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশনের যুগে।
লেখক
এবার যেমন বইমেলা হলো পরিপাটি, প্রশস্ত, পরিচ্ছন্ন, বিস্তৃত, নান্দনিক—তার প্রশংসা করেছেন সবাই। হাঁটতে ভালো লেগেছে, ঘোরাঘুরির জায়গা পাওয়া গেছে। স্টলগুলো যে যার সাধ্য অনুযায়ী শৈল্পিকভাবে সেজেছে। উৎসবে যেমন হয়, তেমনি। আর বইমেলা তো আমাদের জাতীয় উৎসবই, ভাষার উৎসব, বইয়ের উৎসব, সৃজনশীলতার উৎসব। যাঁরা এই উৎসবে অংশ নেন, তাঁদের আনন্দ দেখতে ভালো লাগে। পরিবেশ সুন্দর হলে, গোছালো আর ছিমছাম হলে স্বস্তি লাগে। মনে হয়, বইমেলার চেহারাটা তো এমনই হওয়া উচিত। এমনটাই তো বলা হচ্ছিল অনেক দিন ধরে। সেই চাওয়া পূর্ণ হয়েছে। বিপুলায়তন মেলা তার বিশাল বুকে বহু মানুষকে ধারণ করেছে। তবে বইমেলা তো শুধু বাইরের বিষয় নয়, তার একটা আত্মাও আছে। সেই আত্মা আসলে ভালো বই। বাংলাদেশের মেধাবী পরিশ্রমী লেখকেরা তাঁদের পরিশ্রমের ফসল তুলে ধরেন প্রতি মেলায়। সেই ফসলের ছোঁয়ায় যদি মানুষের মন–মননে আনন্দ জাগে, রুচি সম্প্রসারিত হয়, আর সেই রুচি আর আনন্দের স্পর্শ মানুষের প্রতিটি কাজে, আচরণে পাওয়া যায়, তবেই না মেলার সার্থকতা। বই তো শুধু এক মাসের ব্যাপার নয়, এটি সারা বছরের বিষয়। এটা যেন এই এক মাসের আড়ম্বরের ছটায় আমরা ভুলে না যাই।
সভাপতি, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি প্রকাশক—সময় প্রকাশন
এবারের বইমেলা পরিসরের দিক থেকে দারুণ। নিশ্বাস ফেলার মতো জায়গা ছিল। চারপাশে সবাইকে দেখেছি বেশ আনন্দের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতে, বই কিনতে। ধুলাবালি কম থাকায় বেশ আরামদায়কও ছিল। তারপরও হয়তো ধুলাবালির ব্যাপারটা আরেকটু নজরে আনা দরকার।
আর বইমেলা তো বাণিজ্যিক মেলাও। আমরা যাঁরা প্রকাশক, তাঁদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে ব্যবসা করা। যদি শুধু বাণিজ্যিক দিক চিন্তা করি, তাহলে বলব তেমন ব্যবসা হয়নি। আর বাণিজ্যিকভাবে চিন্তা না করে যদি উৎসব হিসেবে ভাবি, তাহলে বলব ঠিক আছে। কারণ, উৎসবের সেই আমেজটা এবার ছিল। সে জন্য খুব ভালো লেগেছে। কিন্তু আমাদের তো বাণিজ্যিক দিকটাও মাথায় রাখতে হয়।
পাঠকদের জন্যই এই মেলা। যাঁরা পাঠক, তাঁরা বই কিনবেন, লেখকের অটোগ্রাফ নেবেন—এই দৃশ্যগুলো মধুর। প্রকাশক হিসেবে বলতে চাই, আরও ভালো ভালো কাজ করার মাধ্যমে লেখক-পাঠকের সম্পর্ক আরেকটু সুন্দর করতে হবে। কিন্তু যদি বাণিজ্যিক দিকটার বেশি উন্নতি না হয়, তবে তো আর তেমন কিছু করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই পাঠকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। পাঠকেরাই বড় অবদান রাখতে পারেন আমাদের কাজে সাহায্য করার জন্য।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক—ইউনিভার্সাল প্রেস লিমিটেড
কিছু কিছু জায়গা থেকে এবারের বইমেলা গতবারের চেয়ে বেশ ভালো। মেলার গ্রাউন্ডের বিন্যাস খুব ভালো ছিল। হাঁটাহাঁটির অনেক জায়গা ছিল। তবে গতবার যেমন বয়স্কদের সুবিধা ছিল, এবার তেমনটা দেখা যায়নি। প্রকাশক হিসেবে বলতে পারি, আমাদের দিক থেকে ভালোই হয়েছে, পাঠক বেশি হয়েছে। পাঠক-লেখকেরা লম্বা সময় ধরে বইমেলায় সময় কাটাচ্ছেন। ধুলাবালি কম ছিল। তারপরও ধুলার কারণেই আমি এবার বইমেলায় খুব বেশি যেতে পারিনি। যাঁদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা আছে, তাঁদের মেলায় আসতেও বলিনি। তবে এর বাইরে অনেককেই আসতে বলেছি, তাঁরা এসেছেন, বই কিনেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভালোই লেগেছে আশা করি। এত সুন্দর পরিবেশ তো আগের মেলাগুলোতে ছিল না।
কিন্তু এবারের বইমেলায় সমতার তারতম্য দেখতে পাই, বড়-ছোট প্রকাশকদের বইয়ের ডিস্ট্রিবিউশনের জায়গা থেকে। মেলার গাইডলাইন অনেকেই মেনে চলেননি। স্টলের মাপজোখের দিকেও অনেকে ঠিকমতো খেয়াল রাখেননি, ইচ্ছেমতো স্টল বানিয়েছেন। এতে হয় কি, পাশের স্টলগুলোর ক্ষতি হয়। তাই বইমেলার যে নিয়মাবলি ছোট–বড় সব প্রকাশকের জন্য দেওয়া হয়েছে, তা যদি সবাই ঠিকভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে মেলাটি নিশ্চয় আরও সুশৃঙ্খল হবে।
শেষে বইয়ের প্রসঙ্গে একটু বলি: মেলায় কী ধরনের বই প্রদর্শিত হবে, সেসবেরও একটা নীতিমালা আছে। কিন্তু ওই নীতিমালা প্রয়াগ করা হচ্ছে না বলেই মনে হয়। ভবিষ্যতে এদিকটাসহ নীতিমালার বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।
কবি, ব্যবস্থাপক—প্রথমা প্রকাশন
বই নিয়ে কোনো কার্যকর পরিকল্পনা করতে গেলে প্রকাশকের বই প্রকাশের প্রবণতা, পাঠক-ক্রেতার বই কেনার ধরন না বুঝে তা করা মুশকিল। মার্চ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এক বছরে প্রকাশিত কত কপি বই বইমেলায় এল, মাসব্যাপী বইমেলায় কত টাকার বই, কত কপি, কত টাইটেল বিক্রি হলো, তার একটি পরিসংখ্যান জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়ভিত্তিক পরিসংখ্যানও পেতে হবে। প্রবন্ধ-গবেষণা, উপন্যাস, কবিতা, ছোটগল্প, আত্মজীবনী-ডায়েরি, মুক্তিযুদ্ধ-ভাষা আন্দোলন, বিজ্ঞান ও গণিত, শিশুসাহিত্য ইত্যাদি—কোন শাখায় কত কপি বই বিক্রি হয়েছে, কত টাকার বই বিক্রি হয়েছে এবং মোট বিক্রির হিসাবে কোন শাখায় কত শতাংশ বিক্রি হলো, তারও উপস্থাপনা দরকার। কাজটি খুব সহজ হবে না। কারণ, আমরা সাধারণত তথ্য সংরক্ষণ করি না, আবার তথ্য থাকলেও নানা কারণে সব তথ্য দিতে চাই না। কিন্তু কাজটি সম্ভব।
বইমেলায় প্রকাশিত বই বিক্রির ধরন বোঝার জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০টি প্রকাশনা সংস্থার তথ্য সংগ্রহ করে একটা পরিসংখ্যান তুলে ধরা গেলে তা–ও হবে একটা বড় কাজ। ধীরে ধীরে আরও ছোট ছোট বিভাগে পরিসংখ্যান পাওয়া সম্ভব হবে।
একটা ছোট প্রাঙ্গণ থেকে বইমেলা বিস্তৃত হয়েছে বিশাল পরিসরে। এখন এর সূক্ষ্মতর দিকগুলোর দিকে নজর দিয়ে বইকে একটি নির্ভরযোগ্য শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যেতে হবে, মনোযোগ দিতে হবে বইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পেশাদার কর্মী তৈরির দিকেও। তাহলেই বইয়ে পাব সেই বিভা, যার সামনে দাঁড়ালে মনে হবে, এই তো খুঁজছিলাম।