বাংলাদেশে তখন সামরিক শাসন চলছে। এর সুযোগ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সামরিক প্রশাসকের পৃষ্ঠপোষকতাসমেত জনৈক অযোগ্য শিক্ষক উপাচার্য হয়ে বসেছিলেন। উপাচার্য হিসেবে তিনি যেমন অযোগ্য ছিলেন, তেমনি মিথ্যে কথাও বলতেন প্রচুর। কিন্তু সামরিক শাসনের কারণে তাঁর ব্যাপারে প্রতিবাদও জানাতে পারছিলেন না সংক্ষুব্ধ শিক্ষকেরা। এ রকম এক বিরুদ্ধ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি নাটক মঞ্চায়নের আয়োজন করা হলো। সব শিক্ষকই অভিনয় করবেন। ওই নাটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছিলেন কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক। ঘটনাক্রমে নাটকটি দেখতে হাজির হয়ে মিলনায়তনের সামনের সারিতে বসে ছিলেন ওই সমালোচিত উপাচার্য স্বয়ং। সেই উপাচার্যকে দেখে হাসান আজিজুল হক ভাবলেন, খানিক খোঁচা তো দিতেই হয়। নাটক শুরু হলো, হঠাৎ একসময় হাসান আজিজুল হক মূল সংলাপের বাইরে গিয়ে জোরসে মুখ খিঁচিয়ে উচ্চারণ করলেন একটি স্বনির্মিত শব্দ—‘মিথ্যাচার্য’! কিন্তু এমন কৌশলের সঙ্গে শব্দখানা সংলাপের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন যে লোকে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে টেরই পেল না। উল্টো এমন নতুন অথচ অভিনব শব্দ শুনে মুহুর্মুহু হাততালি পড়তে লাগল। আর জব্দ হওয়া মিথ্যেবাদী উপাচার্য বিষয়টি না গিলতে না উগড়ে দিতে পেরে বসে রইলেন নিশ্চুপ হয়ে।
সূত্র: সনৎকুমার সাহার আমার আঙিনায়
গ্রন্থনা: মুহিত হাসান