পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতালপূর্ণবয়স্কদের হৃদযন্ত্র। ওজন মাত্র ১৫ আউন্স। কিন্তু প্রতি ঘণ্টায় পাম্প করে প্রায় ৭৪ গ্যালন রক্ত। প্রাচীন মিসরীয়রা হূদ্যন্ত্রকে দেখতেন মানব শরীরের এমন এক অংশ হিসেবে, যা পাখাওয়ালা গোবরে পোকায় সওয়ার হয়ে উঠে যেত আকাশে, স্বর্গের সীমানায়। গ্রিক লোকজন একে দেখতেন শরীরের সাহস ও আনুগ্যত্যের কেন্দ্র হিসেবে। প্লেটো বলেন, ভালোবাসার নিবাস মনে; তাঁর ছাত্র অ্যারিস্টটল বলেন, হূদ্যন্ত্র হলো বুদ্ধিমত্তা ও চেতনার কেন্দ্র। এ কেবল রক্ত বহনের ইঞ্জিন নয়, উৎকর্ষের, গরিমার ইঙ্গিতবহ যন্ত্র। স্টিফেন এমিডোন হার্টের পেছনে বিজ্ঞানের খবর জেনে অবাক হয়েছেন, কিন্তু এ যন্ত্রকে ঘিরে নানা গল্প ও বিতর্ক—সেই প্রাচীনকাল ধর্মাশ্রিত বিতর্ক থেকে এর পেছনে দর্শন—সবই তাঁর মনে গভীর কৌতূহলের উদ্রেক করেছে। মানবহূদ্যন্ত্র সম্বন্ধে সবচেয়ে চমকপ্রদ একটি ব্যাপার হলো, যখন একে পাম্প করতে দেখছেন, তা এ করছে অসম্ভব জোরে। এ বড় জটিল ব্যবস্থাপনা। হূদেপশিতে অসংখ্য তন্তুর জাল ছড়িয়ে নানা দিকে বিন্যস্ত যেন, কেউ সংকুচিত হচ্ছে একদিকে, অন্যটা অন্যদিকে, কেউ আবার মোচড় খাচ্ছে।‘আমি সব সময় বিজ্ঞানমনস্ক, বলেন থমাস এমিডোন, হার্টকে একটি জটিল পাম্প হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত আমি, এই প্রকল্পে আমার কাজ ছিল অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান সঞ্চয় ও বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করা।’ হৃদযন্ত্র: দ্য সাব্লাইম ইনজিন গ্রন্থে এমিডোনরা লিখেছেন, প্রথম ভ্যালেনন্টাইন সম্বন্ধে লেখেন চার্লস, ডিউক অব অবলিয়েনস ১৪১৫ সালে। আগিনকোর্টের যুদ্ধের পর কারাবন্দী চার্লস, টাওয়ার অব লন্ডন থেকে তাঁর স্ত্রীকে ভ্যালেনন্টাইন দিবসে একটি প্রেমের কবিতা লেখেন। মানবহূদযন্ত্র নিয়ে গড়ে ওঠা এই রোমান্টিক প্রতিচ্ছবি চমৎকৃত করেছে থমাস এমিডোনকে। হার্টকে শক্তিশালী করতে হলে আছে পরামর্শ বিশেষজ্ঞদেরসুস্থ হার্টের জন্য সাতটি টিপস দিয়েছে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন—১. সক্রিয় হন, সচল হন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করলে কমানো যায় হৃদেরাগের ঝুঁকি। ২. নিয়ন্ত্রণ করুন কোলেস্টেরল: কোলেস্টেরল মান ২০০ মিলিগ্রাম বা ডেসিলিটার বা এর বেশি হলে উচ্চঝুঁকি শ্রেণীতে ওঠা গেল আর সে জন্য এখনই কর্মোদ্যোগ প্রয়োজন। কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ হলো—স্ক্রিনিং করা, লো-কোলেস্টেরোল, কম ম্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং ট্রান্সফ্যাটমুক্ত খাদ্য গ্রহণ, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, দৈহিক ব্যায়াম করা। ৩. সুমিত আহার: নানা রকম ফলফলাদি ও সবজি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে। অপরিশোধিত দানাদার শস্য, ঢেঁকিছাঁটা চাল, আটা এসবে থাকে আঁশ, যা রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মাছ খেতে হবে। কচি মোরগ ও চামড়া ছাড়ানো পোলট্রি পছন্দ করুন। আর ঘি, মাখন, ম্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্সফ্যাট যোগ না করে এদের রান্না করুন। চর্বিমুক্ত ও লো ফ্যাট দুগ্ধজাত দ্রব্য খাবেন। যেসব খাবারে আংশিক হাইড্রোজিনেটেড উদ্ভিজ্জ তেল আছে, সেসব খাবার পরিহার করলে ট্রান্সফ্যাট এড়ানো যায়। প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রামের কম কোলেস্টেরল গ্রহণ করুন। খুব কম লবণ বা লবণ ছাড়া খাবার তৈরি করুন। ৪. রক্তচাপ ব্যবস্থাপনা: হূদরোগের একক সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি উপাদান হলো ‘উচ্চরক্তচাপ’। ওষুধ প্রয়োগ না করেও জীবন চলনে কিছু পরিবর্তন কমাতে পারে রক্তচাপ: হৃদস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ, নিয়মিত শরীরচর্চা উপভোগ করা, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, চাপ মোকাবিলা, মদ্যপান ও ধূমপান বর্জন।৫. ওজন হ্রাস করা: বেশি ওজন বা স্থূল হলে সফলভাবে ওজন হ্রাস করতে পারলে এবং একে কম ওজন রাখতে পারলে, হার্ট রোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়।৬. কমান রক্তের সুগার: আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন হূদরোগের ছয়টি নিয়ন্ত্রণসাধ্য প্রধান ছয়টি ঝুঁকির অন্যতম বিবেচনা করে। বস্তুত পূর্ণবয়স্ক ভায়াবেটিক রোগীর, ডায়াবেটিস নেই এমন লোকের চেয়ে, হার্টের রোগ বা স্ট্রোকের আশঙ্কা দুই থেকে চার গুণ বেশি। ৭. ধূমপান বর্জন: ধূমপান নিজেই করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়। ধূমপান করলে শরীরচর্চার জন্য শরীরের সহশক্তি কমে, রক্তের জমাটবাঁধার প্রবণতা বাড়ে। এটি কমায় রক্তের এইচডিএল (হূদহিতকর কোলেস্টেরল)। ধূমপানে শরীরের প্রান্তদেশের ধমনির রোগের ঝুঁকি ও বাড়ায়, বাড়ায় এন্ডটিক এনুরিজমের ঝুঁকি। বাইপাস সার্জারির পর পুনরায় করোনারি হূদরোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে ধূমপানে।