রাজশাহীর আরডিএ মার্কেট ভবনে ফাটল, বন্ধ ঘোষণা

রাজশাহী নগরের সাহেববাজার এলাকায় নির্মিত রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) বিপণিকেন্দ্রের ভবনের অনেক জায়গায় মারাত্মক ফাটল দেখা দিয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুরে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে আগামী রোববার পর্যন্ত বিপণিকেন্দ্রটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিপণিকেন্দ্রের ফটকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান এবং রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন ইতিমধ্যে ভবনটি পরিদর্শন করেছেন। রাজশাহী নগরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকা সাহেববাজার। এর প্রাণকেন্দ্রে ওই বিপণিকেন্দ্রটি অবস্থিত। এতে প্রায় দুই হাজার দোকান রয়েছে। খোলার দিনে এখানে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। ব্যবসায়ীদের ধারণা, তিনতলা ভবনের ওপর অবৈধভাবে চারতলা করার কারণে এই ফাটল দেখা দিয়েছে। আজ এই বিপণিকেন্দ্রের ছাদ, বিম ও পিলারের অনেক জায়গায় ফাটল দেখে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের দ্বিতীয় তলার ছাদ অনেক দূর পর্যন্ত আঁঁকাবাঁকা হয়ে ফেটে গেছে। পাশের একটি পিলারেও একই ফাটল দেখা দিয়েছে। পূর্বদিকের বিমের একাধিক জায়গায় মারাত্মক ফাটল দেখা গেছে। দ্বিতীয় তলার মেঝের টাইলস ফেটে উঁচুনিচু হয়ে গেছে। এরপর থেকে বিপণিকেন্দ্রের মসজিদের মাইক থেকে ব্যবসায়ীদের আগামী রোববার পর্যন্ত দোকান বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। নিরাপত্তার জন্য ভবনের দোতলার সিঁড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দুপুরের দিকে রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বিপণিকেন্দ্র পরিদর্শন করে চতুর্থ তলার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এরপর রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বিপণিকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন। তিনি চলে যাওয়ার পর আরডিএর পুনর্বাসিত ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ মাহমুদ হাসান মাইকে দোকানগুলো আগামী রোববার পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। এ এইচ এম খায়রুজ্জামান বলেন, আগামী রোববার পর্যন্ত বিপণিকেন্দ্র বন্ধ রাখতে এবং চতুর্থ তলার নির্মাণকাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভবনের ওপর থেকে সব নির্মাণ সামগ্রী নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে।আগামীকাল শনিবার সকালে গণপূর্ত বিভাগ, রাজশাহী প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীরা ভবন পরিদর্শন করবেন। তাঁরা যদি মনে করেন, চতুর্থতলা ভেঙে ফেলতে হবে, তাহলে তা ভেঙে ফেলা হবে। তবে নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এস্টেট অফিসার কামরুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ছাদের ও বিমের যেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে, আসলে ওই জায়গাগুলো দুই দিকের সম্প্রসারণ মুখ। এসব জায়গায় সামান্য একটু ফাঁক ছিল। ব্যবসায়ীরা সৌন্দর্যের জন্য ওখানে প্লাস্টার করে দিয়েছেন। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এখন ফাটল দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, পিলারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, তত্কালীন আরডিএর চেয়ারম্যান তপন চন্দ্র মজুমদার এর কাঠামো নকশা অনুমোদন করেন। বৈধভাবে এই ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মতামত ছাড়াই চারতলার নির্মাণকাজ আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৬-৮৭ সালের দিকে আরডিএ এখানে টিনশেড মার্কেট তৈরি করা করে। ২০০৪ সালের দিকে ওই স্থানে আরডিএ পুনর্বাসিত ব্যবসায়ী সমিতিকে দিয়ে পর্যায়ক্রমে দোতলা ও তিনতলা মার্কেট নির্মাণ করায়। এর ওপর এখন চারতলা করা হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, আগে নকশা অনুমোদন করে তারপর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। এই ভবনটির মাটির ভার বহনের ক্ষমতার সঙ্গে নকশা ও বাস্তব নির্মাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, কাঠামো নির্মাণ ও বাস্তব নির্মাণ অবস্থা সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, পূর্বে নির্মিত তিনতলা ভবনের ওপর চার তলা নির্মাণ কারিগরি দৃষ্টিকোণ থেকে যথার্থ কি না, তা যাচাইয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্কালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুর রহিম ২০১০ সালের ৭ জুলাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্কালীন প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনীরকে এই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন আরডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আলী হোসেন মাছুদ, অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী হায়াত মো. ফিরোজ, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহাকরী অধ্যাপক এন এইচ এন কামরুজ্জামান সরকার। এই কমিটি ২০১১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়ম অনুযায়ী মাটির ভারবহন ক্ষমতা পরীক্ষা করে অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর দ্বারা কাঠামো নকশা প্রণয়ন করে সেই মোতাবেক নির্মাণকাজ শুরু করার কথা, কিন্তু আরডিএ মার্কেটের এই ভবনের কাঠামো নকশায় মাটি পরীক্ষার কোনো সূত্র উল্লেখ নেই। এই ভবনের সঙ্গে মাটির ভার বহনের ক্ষমতা সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না, এ ব্যাপারে কোনো মতামত এই তদন্ত কমিটি দিতে পারেনি। এই ভবনের নির্মাণকালে কংক্রিটের শক্তি পরীক্ষার কোনো প্রতিবেদন নেই। এতে ভবনটির বিম, কলাম, ছাদ, ভিত ইত্যাদির শক্তি বর্তমান প্রেক্ষাপটে তদন্ত কমিটি করতে পারেনি। এসব কারণে জনসমাবেশের স্থল হিসেবে পরিচিত তিনতলা ভবনের ওপরে চারতলা ভবন নির্মাণের বিষয়ে তদন্ত কমিটি কোনো মতামত প্রদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এর পরও নির্মাণকাজ করা হচ্ছিল।