চাকরির ক্ষেত্রে দুটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, বেতন কত? আর কাজটা আপনি ভালোবাসেন কি না? প্রায়ই প্রথম প্রশ্নটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। চাকরির ক্ষেত্রে বেতনের আলাপ গুরুত্বপূর্ণ, সংবেদী আর ঝুঁকিপূর্ণও বটে। তবে যে তিনটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, সেগুলো হলো—
১. আপনি যে বেতন আশা করছেন, কোম্পানি হয়তো আপনার পদের জন্য তার চেয়ে বেশি-ই বরাদ্দ রেখেছে। তাই আপনার পদের সম্ভাব্য বেতন কত, তা আগে খোঁজ নিন। আপনি যে পদে কাজ করতে চলেছেন, ওই পদে অন্যরা কত বেতন পাচ্ছেন, সেই তথ্য বের করা খুব কঠিন কাজ নয়। জেনেবুঝে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে প্রত্যাশা জানান।
২. কোম্পানির ‘অফার করা’ বেতনের সঙ্গে আপনার প্রত্যাশার যদি বড় ফারাক থাকে, তাহলে সেটা নিয়ে সমঝোতা করতে চাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কথাটি বিপরীতভাবেও সত্যি। সাক্ষাৎকার শেষে ‘গ্রিন ফ্ল্যাগ’ পাওয়ার পর যদি আপনি এমন বেতনের কথা বলেন, যেটা কোম্পানির বরাদ্দকৃত বেতনের দ্বিগুণ বা তার বেশি, সেখানেও আর আলাপ আগাবে না। তাই বেতনের অঙ্ক জেনেবুঝে ঠিক করুন।
৩. আপনি যদি মনে করেন, কোম্পানির বেতনের অফারটা আপনার জন্য গ্রহণযোগ্য, তাহলে লুফে নিন। অযথা দর–কষাকষি করতে যাবেন না। হিতে বিপরীত হতে পারে। আবার চাকরিতে ঢোকার পরও অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়তে পারেন।
বেতন নিয়ে সমঝোতায় যে তিনটা কথা কখনোই বলবেন না
১. আপনাদের প্রস্তাবটি গ্রহণ করলাম।
প্রথমবারেই এই কথা বলবেন না। মেইলের উত্তরে অফারটির জন্য ধন্যবাদ দেবেন। আপনার কাজের দায়িত্ব, সুযোগ–সুবিধা সম্বন্ধে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইবেন। এতে হুট করে আপনার দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া কঠিন হবে। সবকিছু বিস্তারিত জেনেবুঝে তারপর ‘অফার লেটার’ (চাকরির প্রস্তাবপত্র) গ্রহণ করুন।
২. আমার বর্তমান বেতন এক লাখ টাকা। আমি এখানে অন্তত ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা চাই। মাত্র ২৫ শতাংশ বেশি বেতন চাচ্ছি।
এই কথা লিখবেন না। লিখবেন ‘আমার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং এই দায়িত্বের যোগ্যতা অনুসারে বেতন কত হতে পারে, সেই বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে আমি মনে করি, আমার বেতন হওয়া উচিত ১ লাখ ২৫ হাজার। এটা কি আপনাদের বেতন কাঠামোর ভেতর সম্ভব?’
৩. মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা, তাতে আপনারা যে বেতন ‘অফার’ করেছেন, এটাতে কোনোভাবেই খেয়েপড়ে থাকা সম্ভব নয়।
এই কথার পরিবর্তে আপনি লিখবেন, আমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা মিলিয়ে আপনাদের কাজের জন্য আমি সঠিক ব্যক্তি। কিন্তু আমাকে যে বেতন অফার করা হয়েছে, সেটা আমার কাজের তুলনায় অর্ধেকও নয়। ২০২০ সালে আমার বেতন ছিল এক লাখ। অভিজ্ঞতা আর দক্ষতার সঙ্গে প্রতি বছর ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি যোগ করলেও আমার বেতন হওয়া উচিত অন্তত দেড় লাখ। সে ক্ষেত্রে এ রকম প্রস্তাব গ্রহণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও আমি আপনার অফিসে কাজ করতে ইচ্ছুক। তাই বেতনের বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করা যায় কি?
জেনে নিন বোনাস, ইনক্রিমেন্ট ও ওভার টাইম ডিউটির জন্য বাড়তি টাকা পাওয়ার সুবিধা কেমন। মাসের কত তারিখে বেতন দেয়? এ ছাড়া ছুটির তালিকাও দেখে নিন। যদি বেতন নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ থাকেও, ভালো কাজের পরিবেশ, ভালো সহকর্মী, বাড়তি দায়িত্ব, চাকরিতে উন্নতি, চাকরির নিরাপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট হলে চাকরিটা বেছে নিতে পারেন আপনি।
সূত্র: ক্যারিয়ার স্পেশালিস্টদের নিয়ে জনপ্রিয় ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল ‘থিঙ্ক সেজ’এর পোস্ট থেকে