আব্বু পেছন থেকে পাসপোর্ট উঁচিয়ে বললেন, ‘আমি নই’

প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় বাবা দিবস। সেই হিসাবে কাল বাবা দিবস। দিনটি উপলক্ষে বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে পাঠকের কাছে লেখা চেয়েছিল ‘ছুটির দিনে’। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লেখা পাঠিয়েছেন অনেক পাঠক। নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি পড়ুন এখানে।

বাবার সঙ্গে সৈয়দা রাখশান্দা আম্বারিন
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

চাকরির সুবাদে আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে। আব্বু এলেন আমার সঙ্গে কিছুদিন থাকতে। শীতের এক সকালে আমার ছেলে-মেয়ে আর আব্বুকে নিয়ে শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়াম দেখতে যাব। আব্বু যথারীতি তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট সঙ্গে নিলেন। যদি কেউ চায় তাই সব জায়গায় পাসপোর্ট সঙ্গে নিয়ে যেতেন। আমিও আব্বুর অতি সতর্কতাকে সম্মান করে আপত্তি করতাম না।

জাদুঘরের প্রবেশপথে এক নারী কর্মী জানতে চাইলেন, আমি ইলিনয়ের বাসিন্দা কি না, কারণ ইলিনয়বাসীরা বিনা মূল্যে জাদুঘর ঘুরে দেখতে পারেন।

আমি ‘হ্যাঁ’ বলামাত্র আমার দীর্ঘাঙ্গি, ছিপছিপে আব্বু পেছন থেকে তাঁর পাসপোর্ট উঁচিয়ে বললেন, ‘আমি নই!’

ভদ্রমহিলা আমাদের বিনা মূল্যে ঢুকতে দিলেন। আর আব্বুকে থামিয়ে ২০ ডলার প্রবেশ ফি চাইলেন। তড়িঘড়ি আমার ওয়ালেট থেকে আব্বুর ফি দিয়ে দিলাম।

ব্যস, আর যায় কোথায়! জাদুঘরে ঘোরাটা মুশকিল হয়ে গেল। একটু পরপর আব্বু বলতে থাকলেন, ‘তুমি কেন টাকা দিতে গেলে? আমি তো টাকা এনেছি, তুমি জানতে না ইলিনয় রেসিডেন্ট না হলে টাকা লাগে?’

আমি বললাম, ‘আব্বু তুমি তো সারা জীবন খরচ করে আমাকে এই অবধি এনেছ। আজ নাহয় আমি তোমার ফি দিলাম।’

আব্বু তেমন সন্তুষ্ট হলেন না।

আব্বু আমাদের শখ–আহ্লাদ মেটানোর জন্য কত শ্রম দিয়েছেন। আব্বুকে তাঁর শখের তেমন কোনো জিনিস কিনতে দেখিনি। সংসারের জন্য আব্বু সব সময় উদার। আমাদের উচিত-অনুচিত সব ইচ্ছের কত মূল্য ছিল তাঁর কাছে! অথচ আজ, আমার ২০ ডলার খরচা করাটাও তাঁর কাছে অতিরিক্ত মনে হলো।