ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করতেন কমলা হ্যারিস, থাকতেন ভাড়া বাসায়

প্রতি আটজন মার্কিন নাগরিকের একজন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে কাজ করেছেন ফাস্ট ফুড কোম্পানি ম্যাকডোনাল্ডসে। তাঁদেরই একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস। আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে চলেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেদিন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন কমলা। ৫৯ বছর বয়সী কমলা নিজেই এক্সে নিজের ছোটবেলার নানা তথ্য ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ভোটারদের সঙ্গে। ছবিতে ছবিতে জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিসের জন্ম ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে। পারিবারিক পরিচয়ের জায়গা থেকে কমলা হ্যারিস ভারতীয় ও জ্যামাইকান ঐতিহ্য বহন করেন। লম্বা সময় ধরেই তিনি নিজেকে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশীয় বলে পরিচয় দিয়ে আসছেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে
কমলা হ্যারিসের মা ভারতীয়, বাবা জ্যামাইকান। মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন ক্যানসার গবেষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। কমলার বাবা ডোনাল্ড হ্যারিস স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। কমলার খুব কম বয়সে তাঁর মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল
১৯৭৬ সালে মা ও ছোট বোনের সঙ্গে কানাডার দ্বিতীয় বৃহৎ নগরী মন্ট্রিলে চলে যান কমলা, তখন তাঁর বয়স ১২ বছর। ওই সময় কানাডায় বসবাস করলেও তাঁর মন পড়ে থাকত যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়, নিজের শহরে। তবু কানাডার সহপাঠীদের কাছে তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল সেই মেয়ে, যিনি নাচতে ভালোবাসতেন
কানাডার ওয়েস্টমাউন্ট হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন কমলা হ্যারিস। সেখান থেকেই ১৯৮১ সালে হাইস্কুল পাস করেন। শিক্ষক রুডজাইটিস কমলার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘মনে আছে, কমলা খুবই বুদ্ধিদীপ্ত, হাসিখুশি এক কিশোরী, যার অনেক বন্ধু ছিল। ও শিখতে ভালোবাসত। স্কুলে টিফিনের বিরতির সময় “আর্ট রুমে” সময় কাটাত।’ মায়ের সঙ্গে কমলা
কমলা যখন হাইস্কুলে, তখন তাঁর প্রিয় বান্ধবীদের একজন যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন। এর সুবিচার নিশ্চিত করতে আর অন্য নারীদের সুরক্ষা দিতে কমলা আইনজীবী হতে চেয়েছিলেন। কানাডায় থাকাকালে কমলার বন্ধু ওয়ানডা কাগান বেশ কয়েক মাস তাঁদের সঙ্গে থেকেছেন। ওয়ানডা কাগানকে তাঁর সৎবাবা নির্যাতন করতেন।
কানাডা থেকে হাইস্কুল পাস করে কমলা ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। সেখানে তিনি প্রথমে হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘হাসটিং কলেজ অব ল’ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন
২০১৪ সালে কমলা আইনজীবী ডগলাস এমহফকে বিয়ে করেন। কমলার জীবনসঙ্গী ডগলাস ১৯৯২ সালে কার্সটিন নামের এক নারীকে বিয়ে করেছিলেন। ২০০৮ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বছরখানেক পর কমলার সঙ্গে ডগলাসের প্রেমের শুরু
ডগলাস ও তাঁর সাবেক স্ত্রী কার্সটিনের দুই সন্তান আছে। কোল এমহফ ও এমা এমহফ। এই দুই সন্তানকেই আপন করে নিয়েছেন কমলা। তাঁর আর ডগলাসের কোনো সন্তান নেই। আর এ জন্য প্রকাশ্যে কমলার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডগলাসের সাবেক স্ত্রী কার্সটিন। নির্বাচনেও তিনি কমলাকে সমর্থন জানিয়েছেন। ভোটটা যে তিনি কমলাকেই দেবেন, সেটিও ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে কমলা লেখেন, ‘আমি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মেছি, বেড়ে উঠেছি। জীবনের বেশির ভাগ সময় আমরা ভাড়া বাড়িতে থেকেছি। আমার মনে আছে, মা ১০ বছর ধরে টাকা জমিয়ে প্রথম বাড়ি কেনেন। সে সময় মা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলেন।’ মায়ের সঙ্গে ছোট্ট কমলা
কমলা আরও লেখেন, ‘কলেজে থাকার সময় আমি ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করতাম। আমার সঙ্গে এমন অনেকেই কাজ করতেন, যাঁদের ওই বেতনে সংসার চালাতে হতো। ম্যাকডোনাল্ডসে কাজ করা ছিল তাঁদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় চাকরি। কেননা, একটা কাজ করে যা আয় হতো, তা দিয়ে সংসার চালানো যেত না। আমি প্রেসিডেন্ট হলে এই সব খেটে খাওয়া মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করব। আর নিত্যপণ্যের দাম রাখব মধ্যবিত্তের হাতের নাগালে। কেননা, আমিও জীবনের একটা বড় সময় মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করেছি। আমি পরিশ্রমী মানুষদের কষ্ট বুঝি।’


সূত্র: এক্স, ওয়ামিংটন পোস্ট ও বিবিসি অবলম্বনে