কোরবানির ঈদে দুর্ঘটনা ঘটলে

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

কোরবানির ঈদ মানেই মাংস কাটাকাটির ধুম। এ সময় অনেক অপেশাদার মানুষও কাটাকাটিতে যুক্ত হন। শখের বশে কেউ কেউ নিজেদের কোরবানির মাংস কাটতে নিজেই কসাই বনে যান। কাটাকাটির অভিজ্ঞতা না থাকায় এ কারণে দুর্ঘটনার শিকারও হন অনেকে। আকস্মিক এমন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে করণীয় কী?

মাথা ঠান্ডা রাখুন

রক্ত দেখে আমরা সবাই ভয় পাই। সেই মুহূর্তে মাথা ঠিকমতো কাজ করে না। কীভাবে রক্ত বন্ধ করা যায়, অনেকেই ভেবে পান না। এই সময় মাথা ঠান্ডা রেখে আগে ভালো করে দেখে নিতে হবে কোথায় কেটেছে, কতটা কেটেছে।
বিচলিত না হয়ে কাটা জায়গা উঁচুতে ধরে রাখুন এবং এক টুকরা পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে জোরে চেপে ধরুন। পাশাপাশি এক টুকরা বরফও পেঁচিয়ে ধরে রাখতে পারেন। ছোটখাটো কাটা হলে কিছুক্ষণ (৬ থেকে ১০ মিনিট) পর এমনিতেই রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে।
রক্ত পড়া বন্ধ হলে কাটা জায়গাটি পরিষ্কার পানি, সাবান পানি বা অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রিত পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
সংক্রমণ রোধে ক্ষতস্থানে অ্যান্টিবায়োটিক, যেমন মিউপিরোসিন, মলম লাগিয়ে পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত গজ দিয়ে ঢেকে রাখুন।
যদি ক্ষতস্থানের চারপাশ লাল হয়ে যায়, ফুলে যায়, অস্বাভাবিক ব্যথা হয়, জ্বর আসে, ব্যান্ডেজ ভিজে যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

এগুলো ছোটখাটো ক্ষতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটলে বুঝতে হবে রক্তনালি কেটে গেছে, যেটি সহজে বন্ধ না-ও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতস্থান উঁচু করে চেপে ধরে পরিষ্কার কাপড় বা গজ দিয়ে বেঁধে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
মাংস কাটাকাটিতে যে দা, বঁটি, ছুরি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো অনেক সময়ই মরিচা ধরা থাকে। তাই এসবের মাধ্যমে ক্ষত সৃষ্টি হলে টিটেনাস ইনজেকশন নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের প্রয়োজনও হতে পারে।

মাংস কাটাকাটিতে যে দা, বঁটি, ছুরি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো অনেক সময়ই মরিচা ধরা থাকে। এমনটা যেন না হয়।

প্রয়োজনে হাসপাতালে

ভারী ধারালো অস্ত্র দিয়ে সজোরে হাড় কাটতে গিয়ে অনেক সময় পুরো আঙুল কিংবা আঙুলের কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। কেবল সঠিক সময়ের (৬ ঘণ্টা) মধ্যে এবং সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে না আনায় এগুলো পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয় না। বিচ্ছিন্ন অংশটি পরিষ্কার পানি বা সম্ভব হলে নরমাল স্যালাইন দিয়ে পরিষ্কার করে একটি ভেজা গজ বা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে একটি পরিষ্কার পলিথিনে নিন। আর একটা পরিষ্কার পলিথিনে কিছু বরফ কুচি নিয়ে তার মধ্যে বিচ্ছিন্ন অংশের পলিথিনটি রেখে দিন। কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন অংশটি সরাসরি বরফ বা পানিতে রাখা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ আছে, এমন হাসপাতালে অথবা শেখ হাসিনা ন্যাশনাল বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করুন।
ঈদ প্রস্তুতি হিসেবে হাতের কাছে পরিষ্কার গজ, অ্যান্টিবায়োটিক মলম, ব্যান্ডেজসহ ফার্স্ট এইড বক্স রাখুন। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় ঘাবড়ে না গিয়ে প্রাথমিক কাজগুলো সম্পন্ন করে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যাওয়া উচিত। ঈদের ছুটিতেও সরকারি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সর্বক্ষণ খোলা থাকে।
লেখক: রেজিস্ট্রার (সার্জারি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল