আজ ৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মাথায় রেখে দেশের অনেক তরুণ এখন সবুজ পৃথিবীর জন্য কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে একজন আবুল বাশার রহমান। কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় অর্থনীতিতে স্নাতক করছেন তিনি। পরিবেশ নিয়ে কিছু করার তাগিদ থেকেই ‘স্টোরিজঅবচেঞ্জ’ নামে একটি উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন তিনি। ‘স্বপ্ন নিয়ে’র পাঠকদের কাছে নিজের ভাবনা তুলে ধরলেন বাশার।
গত বছর জাতিসংঘের ২৭তম জলবায়ু সম্মেলনে (ক্লাইমেট চেঞ্জ কনফারেন্স, সংক্ষেপে কপ) অংশ নিই। আয়োজক ছিল মিসর। সেবার মনে হয়েছিল, বাংলাদেশের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে, এই দিক আলোচনায় অনুপস্থিত। আমরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, ঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি—এসব নিয়ে কথা বলছি। অথচ এসবের ভুক্তভোগী যাঁরা, তাঁদের ভাষ্যটাই শোনা হচ্ছে না। তাই সাধারণ মানুষের গল্পগুলো তুলে ধরতে আমি ‘স্টোরিজঅবচেঞ্জ’ প্রকল্পটি সাজাই। দুবাইয়ে আগামী ডিসেম্বরে আবার জলবায়ু সম্মেলন (কপ–২৮) হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে সেখানে আমার প্রকল্পটি উপস্থাপন করব।
প্রাথমিক পরিকল্পনা হলো সাইকেলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ঘুরব। আমার সঙ্গে থাকবে একটা দল। উদ্দেশ্য দুটি। প্রথমত, একটা তথ্যচিত্র তৈরি করা। বাংলাদেশের নানা অঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে, আঘাত এলেও কীভাবে আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, কীভাবে দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করাটা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে গেছে, ৪০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে সেটিই আমরা তুলে ধরব। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জলবায়ু পরিস্থিতির একটি সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরব, যেটিকে আমরা বলছি ‘ইন্টারেক্টিভ জিআইএস অ্যাটলাস’। কোন অঞ্চলের মানুষ কী সমস্যায় পড়ছে, স্থানীয় সংস্থাগুলো কী উদ্যোগ নিচ্ছে, কার কী ধরনের সহায়তা দরকার—একনজরে সবই এই চিত্রে পাওয়া যাবে। মোট কথা কপ–২৮-এ সাধারণ মানুষের গল্প আর তথ্য—দুটি একসঙ্গে তুলে ধরে আমি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরটা বাংলাদেশের দিকে নিতে চাই। যেন তারা বোঝে, জলবায়ু সংকট কতটা প্রকট, কেন আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
টেকনাফ থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। এখানে নারী বনরক্ষীদের একটি দলের সঙ্গে দেখা হয়েছে। বন রক্ষা করতে কীভাবে তারা কাজ করে যাচ্ছে, সেটা দেখে খুবই অনুপ্রাণিত হয়েছি। তারা যে শুধু বন রক্ষা করছে, তা নয়, স্থানীয়রা যেন বিশুদ্ধ পানি পায়, সেই লক্ষ্যেও কাজ করছে। একই অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ দেখে বিস্মিত হয়েছি। এতে পরিবেশের যেমন উপকার হচ্ছে, তেমনি জীবিকার একটা নতুন পথ খুঁজে পেয়েছে দরিদ্র মানুষ। এই মানুষদের দেখে আমি আবার যাত্রায় একটু বিরতি নিয়েছি। মনে হয়েছে, এত অল্প জনবল নিয়ে, ছোট পরিসরে এই মানুষগুলোর গল্প তুলে ধরলে তাদের প্রতি ঠিক সুবিচার করা হয় না। সে জন্য আরও অভিজ্ঞদের নিয়ে একটা দল গঠনের চেষ্টা করছি। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের জীবন–জীবিকা নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করছি। যেমন ভাসমান স্কুল, বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে চাষাবাদ, ঘূর্ণিঝড় ও বন্যারোধী বিশেষ স্থাপত্য—এসব নিয়ে পড়ালেখা করছি।
আমি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় (ইউবিসি) অর্থনীতি নিয়ে পড়ছি। সেখানকার শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে যখন আমার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছি, তাঁরা খুব উৎসাহ দিয়েছেন। শিক্ষকেরা শুধু যে তাঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন, তা নয়। আমাকে কারও কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন, নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন, যেন আমার কাজ করতে সুবিধা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে গবেষণা তহবিল গঠনে আংশিক সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি ‘জিআইএস অ্যাটলাস’টি তৈরির জন্যও আমি ক্যাম্পাস থেকে কারিগরি সহায়তা পাব।
পরিবেশ নিয়ে একটা কিছু করার ইচ্ছে আমার ছোটবেলা থেকে। স্কুলে পড়ার সময় আমি ‘গ্রিন’ নামে একটা প্রকল্প শুরু করেছিলাম। আমরা মানুষকে বিনা মূল্যে গাছ দিতাম, পাশাপাশি পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করতাম। এই প্রকল্প থেকে যা শিখেছি, সেটা অভাবনীয়। পরিবেশ নিয়ে শিশুদের যে এত কৌতূহল, আমি আগে জানতাম না। পরে ইউবিসিতে ভর্তি হওয়ার পর আমি ক্যাম্পাসের ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন মোবিলাইজার্স’ নামে একটা দলের সঙ্গে যুক্ত হই, যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করে। এ কাজের অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।
কানাডীয় দূতাবাস আমার এ প্রকল্পে সহযোগিতা করছে। ৪০ মিনিটের যে তথ্যচিত্র তৈরি করছি, সেটা প্রথমে দূতাবাসেই প্রদর্শিত হবে। এ ছাড়া গ্রামীণফোনও আমাদের সহযোগিতা করছে।