ডান-বাম, যেদিক দিয়ে খুশি চলে যাওয়ার সুযোগ আমাদের আছে। যান্ত্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিন্তু ভিন্ন। দেশভেদে গাড়ি চলার দিক হয় ভিন্ন। এর পেছনে আছে সামাজিকতা, রাজনীতি, বাণিজ্য কিংবা আধিপত্য বিস্তারের শক্তিমত্তা। বর্তমান বিশ্বে ১৬৩ দেশ ও অঞ্চলে রাস্তার ডান দিকে যানবাহন চলাচল করে। আর মাত্র ৭৬টি দেশে এখনো রাস্তার বাঁ দিক দিয়েই যানবাহন চলাচলের রীতি রয়ে গেছে। অথচ ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, প্রাচীনকালে চলাচলের ক্ষেত্রে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ ছিল বামপন্থী। অর্থাৎ বিশ্বের প্রায় সবখানেই রাস্তার বাঁ দিকে চলাচল করাই নিয়ম ছিল।
ডান দিকে চলার নিয়ম প্রথম চালু করে যুক্তরাষ্ট্র। ১৮ শতকে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার কনেস্টোগাতে একধরনের মালবাহী ওয়াগন চলত। সেই কনস্টোগা ওয়াগনই মূলত দেশটিতে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি চলাচলের মূল হোতা। ফরাসি বিপ্লবের সময় রবসপিয়েরের (১৭৫৮–১৭৯৪) সরকার সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দেশ জারি করে—সমাজের সব শ্রেণির মানুষকেই রাস্তার ডান দিকে গাড়ি চালাতে হবে। আর ইউরোপের দেশগুলোতে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি চালানোর এ নিয়ম ছড়িয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের৷ সে সময় ইউরোপে এমন কোনো জাতি ছিল না, যারা নেপোলিয়নের প্রজা বা মিত্র না।
একমাত্র সুইডেন ছিল ব্যতিক্রম। তবে আশ্চর্যজনকভাবে ১৯৬৭ সাল থেকে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো সুইডেনও ডান দিকে গাড়ি চালানো শুরু করে। বিশ শতকে জার্মানিও তাদের দখল করা দেশগুলোতে ডান দিকে যান চলাচলের নিয়ম ছড়িয়ে দেয়। রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলো অবশ্য স্বেচ্ছায় নিজেরাই এ নিয়ম গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ব্রিটেন। ব্রিটেন ফরাসিদের নীতি গ্রহণ করেনি। কারণ, তারা কখনো ফরাসিদের অধীন হয়নি। শত বছরের বাঁ দিকে চলাচলের নিয়মটাই ১৭৫৬ সালে লন্ডন সড়কে চলাচলের রীতিতে পরিণত করে ব্রিটেন। ১৮৩৫ সালে এই রীতি পুরোপুরি আইনে পরিণত হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপের মাত্র তিনটি দেশে রাস্তার বাঁ দিকে চলাচলের রীতি চালু রয়েছে। আয়ারল্যান্ড প্রজাতন্ত্র, মাল্টা ও সাইপ্রাস। তিনটি দেশই ইউরোপের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপদেশ। অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশসহ ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও জাপানের মতো এশিয়া মহাদেশের কিছু দেশে এখনো রাস্তার বাঁ দিকে চলাচলের রীতি চালু রয়েছে। এর কারণ হিসেবে ব্রিটিশদের উপনিবেশ বিস্তারকারী শক্তিকেই ধরা হয়। পাখি চলে গেছে, কিন্তু তার বাঁ দিকে চলার রীতি রেখে গেছে।