যে ৫টি জায়গায় সুখের সন্ধান করবেন না

আমাদের জীবনের লক্ষ্য যা-ই থাকুক, সবার জীবনের একটা সাধারণ লক্ষ্য হলো সুখী হওয়া। আমরা সারা দুনিয়া উথাল–পাতাল করে ফেলি সুখের খোঁজে, কিন্তু সেই সুখ কি মেলে? বেশির ভাগ সময়েই মেলে না। অনেক চেষ্টা করেও সুখ খুঁজে না পাওয়ার পেছনে অনেক কারণই থাকতে পারে। তবে এর একটা বড় কারণ হলো, আমরা অনেক সময়ই সঠিক জায়গায় সুখের সন্ধান করি না। বরং বারবার ভুল জায়গায় সুখ খুঁজতে থাকি। ফলে সুখ আমাদের কাছে অধরাই থেকে যায়।

মন খারাপ? যাই কিছু কেনাকাটা করে আসি।
ছবি: প্রথম আলো

প্রচুর কেনাকাটা করা

কিছু মানুষ শপিংকে ব্যবহার করেন ওষুধের মতো। মন খারাপ? যাই কিছু কেনাকাটা করে আসি। কিছু ভালো লাগছে না? যাই অনলাইনে দুইটা অর্ডার দিয়ে আসি। এই বেপরোয়া কেনাকাটার মাধ্যমে তারা মূলত তাদের মানসিক শূন্যতার জায়গাটা পূরণ করার চেষ্টা করেন। নিয়ন্ত্রিত, প্রয়োজনীয় কেনাকাটা আপনাকে স্বস্তি দেয়। খানিক আনন্দও দেয়। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত, ‘ইমপালসিভ’ কেনাকাটা আপনাকে সাময়িকভাবে ব্যস্ত রেখে হতাশা ভুলিয়ে রাখলেও দিন শেষে এসব কেনাকাটার ফলে আপনি আরও বেশি অস্থির ও অসুখী হয়ে ওঠেন। আর সেটার প্রভাব গিয়ে পড়ে মানিব্যাগ আর রাতের ঘুমে। ফলে মানসিক চাপ কমার বদলে কেবল বাড়ে।

টাকা থাকলেই কি সব আনন্দ আর সুখ কেনা যায়

টাকায় সুখ আনে?

এর একেবারেই স্পষ্ট উত্তর হলো, না। টাকা সুখ আনতে পারে না। এটা ঠিক যে টাকা আমাদের স্বস্তি দিতে পারে, ক্ষমতা দিতে পারে। টাকার প্রয়োজন আছে। মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য যেটুকু দরকার, সেটুকু। অতিরিক্ত টাকা, বিলাসী জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে আপনি ‘ক্লাস’ কিনতে পারেন। তবে সুখী হওয়ার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আমাদের আশপাশেই কম টাকাওয়ালা সুখী মানুষেরা আছেন, আবার বেশি টাকাওয়ালা অসুখী মানুষেরাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কাজেই আপনি যদি সুখের জন্য কেবল টাকার পেছনে ছোটেন, দিন শেষে আপনার অ্যাকাউন্টে টাকা হয়তো থাকবে, তবে মনে সুখ থাকার সম্ভাবনা খুবই কম।

ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম...

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই গানের লাইন অনেক ক্ষেত্রেই শতভাগ সত্যি। বহু মানুষের মধ্যেই একটা ধারণা আছে, প্রেম মানেই স্বর্গসুখের আধার। কাজেই প্রেমটা একবার করে ফেলতে পারলেই শুধু সুখ আর সুখ। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? না। বরং বাস্তবতা হলো, প্রেম আপনার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসবে ঠিকই, সঙ্গে নিয়ে আসবে দায়িত্বও। খানিকটা ব্যথাও যে থাকবে না, তা নয়। সম্পর্ক থেকে আপনি যদি শুধু একতরফা আনন্দই প্রত্যাশা করতে থাকেন, তবে সেই সম্পর্ক সুখের হয়ে ওঠে না। হয়ে উঠবে অসুখের আরেক নাম।

প্রেম আপনার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসবে ঠিকই, সঙ্গে নিয়ে আসবে দায়িত্বও। খানিকটা ব্যথাও যে থাকবে না, তা নয়

প্রতিযোগিতায় কি সুখ মেলে?

‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমায় ভাইরাসের বলা সেই কথাটা মনে আছে? ‘মনে রেখো, জীবন একটা রেস...এখানে পিছিয়ে পড়ার কোনো সুযোগ নেই।’ আসলেও কি জীবন একটা প্রতিযোগিতার নাম? না। প্রতিযোগিতা জীবনের একটা অংশ, এটা ঠিক। তবে সব প্রতিযোগিতায় জিতলেই যে আপনি সব সুখ নিজের করে পাবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই প্রতিযোগিতায় সাফল্য, খ্যাতি বা অর্থ খুঁজুন, সুখ নয়। বিশ্বের সর্বোচ্চ সফল ফ্যাশন উদ্যোক্তা, পেশাগতভাবে সফল, বিলিয়নাররাও হতাশায় ডুবে আত্মহত্যা করেছেন, এ রকম নজির আছে।  

অভিযোগ ও অজুহাত

পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ কাজ কি জানেন? অভিযোগ করা। আর অজুহাত দেওয়া। মজার ব্যাপার হলো, বহু মানুষ এই অভিযোগ আর অজুহাতের মধ্য দিয়ে সুখ পাওয়ার বৃথা চেষ্টা করেন। নিজেকে ‘ডিফেন্ড’ করার চেষ্টা করেন। দুনিয়ার সব ঝামেলার দায় এঁরা আরেকজনের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করেন। এবং নিজেকে সব সময়ই সবকিছুর ভিকটিম হিসেবে দেখান। কিন্তু এতে সাময়িক শান্তি পাওয়া গেলেও সুখের দেখা পাওয়া যায় না। বরং দুঃখগুলো আরও বেশি চেপে বসার সুযোগ পায়।

সুখ জিনিসটা সব সময়ই যে পাওয়ার মধ্যে লুকিয়ে থাকে, তা নয়। বরং অনেক সময় অনেক কিছু ছেড়ে দেওয়ার মধ্যেও সুখের রহস্য লুকিয়ে থাকে। ওপরের পাঁচটি জায়গাই ভুল গন্তব্য। আমাদের সুখের রেলগাড়িটা যেন এই পাঁচ গন্তব্যে ভুলেও না যায়, সুখী হতে হলে সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদেরই।


তথ্যসূত্র: বিকামিং মিনিমালিস্ট

Photo by Pavel Danilyuk from Pexels: https://www.pexels.com/photo/woman-sitting-on-an-office-chair-with-money-flying-all-around-her-7654610/