জীবনের কিছু কিছু ক্ষেত্রে কথা বলা যেমন জরুরি, তেমনই পরিস্থিতি বুঝে চুপ থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন সরব থাকার চেয়ে নীরবতাই হয়ে ওঠে বেশি শক্তিশালী। চীনা দার্শনিক লাওজি বলেছেন, ‘নীরবতা শক্তিরই আরেক রূপ।’ জেনে নিন জীবনের যেসব মুহূর্তে চুপ থাকাই শ্রেয়।
রেগে গেলে বা আবেগপ্রবণ হলে
কথায় আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’। রেগে যাওয়া মানেই বিবেক দিয়ে নয়, আপনি পরিচালিত হচ্ছেন আবেগ দিয়ে। আবেগের বশবর্তী হয়ে নিজের কথার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন অনেকে। পরিবেশ–পরিস্থিতি না বুঝে এমন কিছু বলে ফেলেন, যাতে সৃষ্টি হয় বিব্রতকর পরিস্থিতি, পরিণাম ভোগ করতে হয় অনেক দিন। তাই রেগে গেলে চুপ থাকার কোনো বিকল্প নেই। রাগ নেমে গেলে ব্যাপারটি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করুন। শুধু রাগ নয়, এই কথা যেকোনো আবেগপ্রবণ মুহূর্তের জন্যই প্রযোজ্য। ভীষণ হতাশা কিংবা দারুণ খুশির সময় নিজেকে সামলে রাখা উত্তম। এতে পরবর্তী সময়ে পস্তানোর আশঙ্কা কম।
কোনো বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকলে
যেকোনো আলোচনায় অংশ নেওয়ার আগে বিষয়টিতে আপনার দখল বা বোঝাপড়া আছে কি না, যাচাই করুন। কোনো বিষয়ে জানা না থাকলে সে বিষয়ে কথা না বলাই ভালো। না জেনে কোনো বিষয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জাহির করতে গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাই বেশি।
শোকার্ত মানুষের সামনে
কারও দুঃসময়ে বাড়তি কথার চেয়ে নীরব থাকাই ভালো। শোকার্ত মানুষ কারও অহেতুক কথাবার্তা শুনতে চায় না। বরং পাশে দাঁড়িয়ে তার কাঁধে হাত রাখুন। কিছুই যে বলা যাবে না, তা কিন্তু নয়। শুধু খেয়াল রাখুন, অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে শোকার্ত মানুষকে বিরক্ত করবেন না। তার পাশে আছি, এটুকু বোঝাতে পারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একই ঘটনা কোনো অসুস্থ আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধবকে দেখতে যাওয়ার সময়ও। প্রশ্নবাণে জর্জরিত না করে, তাদের পাশে থাকা, চুপ থেকে তাদের সঙ্গ দেওয়া অনেক বেশি কার্যকর।
কেউ সমালোচনা করলে
কাজ করলে আলোচনা–সমালোচনা থাকবেই। কিন্তু সমালোচনার মুখোমুখি হয়ে অনেকেই ভেঙে পড়েন কিংবা উল্টো প্রতিবাদ করতে যান, নয়তো পাল্টা তর্ক জুড়ে দেন। পাল্টা তর্ক না করে তাঁর কথা বোঝার চেষ্টা করুন। চুপ থেকে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। এতে আপনি যেমন আপনার ভুলগুলো বুঝতে পারবেন, সমস্যাও বাড়বে না।
অফিসে চটকদার আলোচনা
অফিসে কানাঘুষা কিংবা চটকদার আলোচনা হলে তা থেকে যত দূরে থাকবেন, তত ভালো। কারণ, চটকদার আলোচনা মানেই অন্যের নামে কুৎসা রটানো। আজ আপনি কারও নামে কুৎসা রটালে আপনার নামেও অন্য কেউ কুৎসা রটাবে। এসব চটকদার আলোচনার সময় চুপ থাকাই শ্রেয়।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করলে
জীবনের একান্ত ব্যক্তিগত কথা; দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ যখন কেউ কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়, তখন উচিত তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। তাকে যত কম বাধা দেওয়া যায়, তত ভালো। কখনোই আগবাড়িয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট