অঙ্গ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে জটিল রোগে আক্রান্ত মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে বাঁচাতে যুগ যুগ ধরে চলছে নানামুখী প্রচেষ্টা।
১৯৩৩ সালে প্রথম মৃত মানুষের কিডনি নিয়ে জীবিত মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। ইউক্রেনের শল্যচিকিৎসক ইউরি ভোরোনয়ের সেই অস্ত্রোপচারকে অবশ্য সফল বলা চলে না। দুদিন বাদেই মারা যান কিডনি গ্রহীতা।
১৯৫০ সালের ১৭ জুনও আবার চেষ্টা চালান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের লিটল কোম্পানি অব ম্যারি হসপিটালের চিকিৎসক রিচার্ড ললার, জেমস ওয়েস্ট ও রেমন্ড মার্ফি। সফলভাবে কিডনিও প্রতিস্থাপিত হয়। তবে রোগীর শরীর নতুন কিডনি গ্রহণ না করায় সার্জারির ১০ মাস পর তা অপসারণ করে ফেলতে হয় হয়।
সফলভাবে প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় ১৯৫৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের ব্রিংহ্যাম অ্যান্ড উইমেনস হাসপাতালের শল্যবিদ জোসেফ ই মুরের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক ২৩ বছর বয়সী রিচার্ড হ্যারিকের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করেন। তাঁর দেহে জমজ ভাই রোনাল্ডের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ৮ বছর পর্যন্ত কার্যকর ছিল সেই কিডনি। চিকিৎসাবিদ্যায় যুগান্তকারী ভূমিকা রাখায় পরে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন জোসেফ মুরে।
মানবদেহের সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপিত অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। তালিকার পরবর্তী অঙ্গগুলো হলো—যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও অগ্ন্যাশয়
১৯৬৬ সালে কিডনিসহ অগ্ন্যাশয় (প্যানক্রিয়াস) প্রতিস্থাপন করেন ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার দুই চিকিৎসক উইলিয়াম কেলি ও রিচার্ড লিলেহেই।
মস্তিষ্কে মৃত্যু (ব্রেন ডেথ) রোগীর কিডনি নিয়ে অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রথম ঘটনাটি ঘটে ১৯৬৩ সালের ৩ জুন। প্রতিস্থাপনের কাজটি করেন বেলজিয়ামের শল্যবিদ গাই আলেক্সান্দ্র।
মানবদেহের সবচেয়ে বেশি প্রতিস্থাপিত অঙ্গ হচ্ছে কিডনি। তালিকার পরবর্তী অঙ্গগুলো হলো—যকৃৎ, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও অগ্ন্যাশয়।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। দুই ও তিন নম্বরে রয়েছে স্পেন ও ফ্রান্স। তালিকার সবচেয়ে নিচের তিনটি দেশ হচ্ছে জাপান, গ্রিস ও লাটভিয়া।
১৩ আগস্ট ‘বিশ্ব অঙ্গদান দিবস’। অঙ্গদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে ও অঙ্গদানে উৎসাহিত করতে দিনটি পালিত হয়।
বাংলাদেশে প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় ১৯৮২ সালে, পিজি (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) হাসপাতালে।
১৯৯৯ সালের ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশে প্রথম ‘অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯’ হয়। ২০১৮ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ব্রেন ডেথে মৃত্যুর আগে নিজের অঙ্গদান করা প্রথম ব্যক্তি সারাহ ইসলাম। দুটি কিডনি ও দুটি কর্নিয়া দান করে গেছেন তিনি।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট অবলম্বনে কবীর হোসাইন ও রাফিয়া আলম