ফেসবুকে ব্লক খাওয়া নতুন কিছু নয়। কিন্তু রিডার্স ব্লক, সে আবার কী? হাতের কাছে অনেক বই, অঢেল সময়। কিন্তু পড়তে গেলেই যত সমস্যা। কোনোমতে একটা প্যারাগ্রাফও পার করা সম্ভব হচ্ছে না। এমন কোনো বইপ্রেমী নেই, যিনি কখনো না কখনো এই অদ্ভুত সমস্যার মুখোমুখি হননি। বই পড়তে না পারার এই সমস্যার নাম ‘রিডার্স ব্লক’।
বই পড়তে পড়তে হুট করে আটকে যাওয়া সচরাচর ঘটনা। কিন্তু মাসের পর মাস একটি বই নিয়ে পড়ে থাকা, নতুন কোনো বই শুরু করতে না পারা—বইপ্রেমীদের জন্য এ যেন ভয়ানক এক দুঃস্বপ্ন।
রিডার্স ব্লক কেন হয়?
রিডার্স ব্লকের উৎপত্তি হতে পারে যেকোনো জায়গা থেকে। তবে তা চোখে পড়ে মূলত নতুন বই শুরু করতে গেলে কিংবা কিছুদিন বাদে নতুন করে পড়া শুরু করতে গেলে। একেকজনের ক্ষেত্রে একেক কারণ থাকতে পারে।
১. আগের বইয়ের রেশ থেকে যাওয়া
বিশাল কোনো একটা উপন্যাস শেষ করার পর তার রেশ থেকে যায় অনেক দিন। তখন চাইলেও নতুন বইয়ে ঢুকে পড়া সম্ভব হয় না। পুরোনো বই শেষ করেই নতুন কোনো বই হাতে নিলে রিডার্স ব্লক তৈরি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না।
২. গল্প টানতে ব্যর্থ হলে
প্রতিটি বইয়ের গল্পের গাঁথুনি সমান হবে না। কোনো গল্পের গাঁথুনিতে মুগ্ধ হয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়ে ফেলা সম্ভব হয়। আবার কোনো বই অতটা টানে না। তখন সাময়িক রিডার্স ব্লক তৈরি হয়।
৩. টানা একই ধরনের বই পড়া
একই লেখক অথবা একই জনরার কয়েকটি বই টানা পড়লে মনের মধ্যে একই প্যাটার্ন গেঁথে যায়। একই প্যাটার্নের কারণে তখন বইয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা কাজ করতে পারে।
৪. ব্যক্তিগত সমস্যা
অনেক সময়ই পাঠক বই পড়তে শুরু করেন পারিপার্শ্বিক সমস্যা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে। সে সময় গল্পের গাঁথুনি ভালো হলেও তা আপনার মন ছুঁয়ে নাও যেতে পারে। সেখান থেকে রিডার্স ব্লক তৈরি হওয়া অমূলক নয়। মানসিক অস্থিরতায় ভুগলেও রিডার্স ব্লক হতে পারে।
রিডার্স ব্লক থেকে মুক্তি মিলবে কীভাবে?
রিডার্স ব্লক থেকে মুক্তি পাওয়ার অনেক উপায় আছে। তবে সবার আগে যেটা প্রয়োজন সেটা হলো, নিজের মধ্যে বই পড়ব, এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করা। কারণ, অনেক দিন রিডার্স ব্লকে আটকে থাকতে থাকতে অনেকের মধ্যেই বই পড়ার সুপ্ত ইচ্ছেটাই মরে যায়। যা করতে দেওয়া চলবে না।
১. জোর করবেন না
বই পড়ার ক্ষেত্রে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মনের আনন্দ। যদি বই পড়ার মধ্যে আনন্দই খুঁজে না পান, তবে সেই বই পড়ার কোনো অর্থই হয় না। যদি কোনো বই শুরু করে পড়তে ভালো না লাগে, কিংবা শুরু করতে না করতেই মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন; তবে জোর করে পড়তে যাবেন না। কারণ, জোর করে রিডিং ব্লক কাটানো দূরে থাক, বরং আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বরং পরবর্তী কোনো সময়ের জন্য বইটি রেখে দিন।
২. ছোটগল্পে মনোযোগ দিন
অনেক সময় বিশাল বিশাল উপন্যাস পড়তে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠতে পারে আপনার মন। ৫০০ পৃষ্ঠার উপন্যাস তো আর কম কথা নয়! এমন সময়ে বিশাল সাইজের বই সাইডে রেখে ছোটগল্পে মনোনিবেশ করতে পারেন। হতে পারে সেটা রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প কিংবা চাচা চৌধুরী কমিকস। মোটকথা বিশাল পৃষ্ঠার হিসাব সরিয়ে রাখুন। তাতে পড়ার মধ্যে যেমন বৈচিত্র্য আসবে, তেমনই নতুন কিছু পেয়ে মনও উৎফুল্ল হয়ে উঠবে।
৩. অন্য কোনো ধারা চেষ্টা করুন
কখনো কখনো নিজের পরিচিত গণ্ডির বাইরে চলে যাওয়া পড়ায় মন ফিরিয়ে আসতে সাহায্য করে। একই ধারার কয়েকটি বই টানা পড়তে পড়তে সেই ধারার বইয়ের প্রতি বিতৃষ্ণা আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই বিতৃষ্ণা কাটাতে অন্য কোনো ধারার বই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। দেখা গেল কারও পছন্দ সমকালীন উপন্যাস। কিন্তু সেটি পড়তে পড়তে একঘেয়েমি চলে এলে থ্রিলার কিংবা ফ্যান্টাসি জনরার বই চেষ্টা করে দেখতে পারেন। পড়ার বৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে পারে বই পড়ার পুরোনো প্রেম।
৪. ফিরে যান পুরোনো প্রেমে
মনে আছে ঠিক কোন বইটি দিয়ে আপনার বই পড়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল? কিংবা কোন লেখকের হাত ধরে? তাঁর কাছেই ফিরে যান। পুরোনো সহজ, সুখপাঠ্য বই, যা আপনার নখদর্পণে; সেটি নতুন করে পড়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। হাতে তুলে নিতে পারেন হুমায়ূন আহমেদের কোনো উপন্যাস। পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে পারে বই পড়ার পুরোনো অভ্যাস।
৫. অডিওবুক শুনুন
অডিওবুককে অনেকেই এখনো ঠিক ‘বই পড়া’ হিসেবে গণ্য করেন না। তাঁদের মতে, অন্যের পড়া বই দিয়ে আসলে বই পড়ার আসল স্বাদ পাওয়া যায় না। কিন্তু রিডার্স ব্লক কাটাতে অডিওবুক খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। কাগজের বই থেকে কানে শোনার বই বই পড়ার স্বাদে আনবে নতুনত্ব।
৬. বিরতি নিন
এত কিছুর পরও যদি দেখেন বই পড়ায় মনোযোগ ফেরাতে পারছেন না, তবে একটু বিরতি নিন। দু–একদিন বই পড়া থেকে দূরে থাকুন। তবে বইয়ের সংস্পর্শ হারাবেন না। নতুন করে চেষ্টা করুন। মাঝেমধ্যে অতিরিক্ত বই পড়া মনের ওপর চাপ তৈরি করে, তখন অতি সুখপাঠ্যও অখাদ্য মনে হয়।
রিডিং ব্লকের সূচনা হয় তখনই, যখন বই পড়ে আনন্দ পাওয়ার বদলে বই পড়াটাকে একটা কাজ মনে হয়। বই পড়া কোনো কাজ নয়, বরং মনের আনন্দ। কোনো কিছুর ভেতর থেকে যখন আনন্দ হারিয়ে ফেলবেন, তখন বই পড়া কেন, কোনো কাজই সুখকর বলে মনে হবে না।
সূত্র: মেন্টাল ফ্লস ও গুডরিডস অবলম্বনে