বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনা নগরবাসীকে শঙ্কিত করে তুলেছে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকাটাই শ্রেয়। আবাসিক ভবন কিংবা কর্মস্থলে দুর্ঘটনা এড়াতে সবার সচেতনতা আবশ্যক। গ্যাস বা বিদ্যুৎ–সংক্রান্ত দুর্ঘটনা যেমন ঘটতে পারে, তেমনি শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এয়ার কন্ডিশনার বা এসি) থেকেও ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এমনিতে এই যন্ত্র থেকে বিস্ফোরণের ঝুঁকি নেই বললেই চলে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অগ্নিদুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে এসি। মানসম্মত এসি ও আনুষঙ্গিক সামগ্রী ব্যবহার এবং সঠিকভাবে সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই বলে জানালেন ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম।
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অভ্যন্তরে যে সামান্য পরিমাণ গ্যাস থাকে, তা থেকে যদি বিস্ফোরণ হয়ও, তা খুব ভয়াবহ রূপ নিতে পারে না। এই বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় না। আর সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে এসি থেকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে না। এমনটাই বলছিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের তালিকাভুক্ত অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক এবং অ্যাশরে বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি প্রকৌশলী হাসমতুজ্জামান, যিনি একাধারে এয়ার কন্ডিশনিং ও অগ্নিনিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। এসির জন্য অন্তরিত (ইনসুলেটেড) পাইপ ব্যবহারের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি। বাহ্যিক আঘাত (যেমন ইটের টুকরার আঘাত) এসির জন্য ক্ষতিকর। একটানা এসি চালিয়ে রাখাও ক্ষতিকর বলে জানালেন এই বিশেষজ্ঞ।
গরমের শুরুতেই যে কাজটি করতে হবে
শীতে সাধারণত এসি চালানো হয় না। তাই গরমের শুরুতে, অর্থাৎ এসি ব্যবহার শুরুর আগেই দক্ষ ব্যক্তির শরণ নেওয়া প্রয়োজন। তিনি ঘরের ভেতর ও বাইরের অংশে সব ঠিক আছে কি না, দেখে দেবেন। এসির বাইরের অংশে পাখি, বাদুড়, ইঁদুর, টিকটিকি এমনকি সাপও আশ্রয় নিতে পারে। কোনো প্রাণী সেখানে থাকলে এসি চালানোর আগেই এগুলোকে নিরাপদে সরিয়ে দিতে হবে।
নিজেরাই করি
১৫ দিন অন্তর এসির ফিল্টার নেট পরিষ্কার করতে হবে। বড়জোর মিনিট পাঁচেকের এই কাজ আপনার এসিকে রাখবে নিরাপদ ও কর্মক্ষম। আপনার এলাকায় ধুলা কম হলে এই কাজটা মাসে একবার করলেই চলবে। কীভাবে এই কাজটি করবেন, তা এসি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান থেকেই শিখে নিন। এসি চালানো না হলে অবশ্য এর প্রয়োজন নেই। ঘরের ধুলা বা ঝুল পরিষ্কার করার সময় এসি বন্ধ করে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা উচিত।
কেবল যন্ত্রই দায়ী নয়
যন্ত্রের যেমন ত্রুটি হতে পারে, তেমনি আনুষঙ্গিক সামগ্রীরও ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে শর্টসার্কিট। তাই খেয়াল রাখুন—
যেসব তার বা কেব্ল ব্যবহার করা হয়, সেগুলো যাতে মানসম্মত হয়। সংযোগ দিতে হবে সঠিকভাবে।
এসি বরাবর ঠিক নিচে সুইচ বা প্লাগ না রাখাই ভালো।
সার্কিট ব্রেকার থাকতে হবে ঠিকঠাক।
ভবনের আর্থিং করানো থাকতে হবে অবশ্যই।
নগরের অধিকাংশ ভবনে বহু পরিবারের বাস। জীবনকে আরামদায়ক করতে চান সবাই। এত এত যন্ত্র চালানোর মতো বৈদ্যুতিক সক্ষমতা আপনার ভবনের আছে কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হোন।
খেয়াল রাখুন
ঘরের আয়তন অনুযায়ী এসি নিন। এসি চালানো অবস্থায় ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন।
এসির কাছাকাছি কোনো দাহ্য পদার্থ কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য রাখবেন না। গ্যাসের লাইন থেকে এসি দূরে বসান।
৬ মাস অন্তর দক্ষ ব্যক্তিকে দিয়ে এসির ভেতর ও বাইরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণ করিয়ে নিন। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে দক্ষ কর্মীকে আনিয়ে নিতে পারেন।
এসি ঠিকভাবে কাজ না করলে, অস্বাভাবিক শব্দ করলে, এসি থেকে পানি পড়লে কিংবা অন্য কোনো সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে এসি বন্ধ করে দিন। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিন।
এসির বাইরের দিকে ঝোপঝাড় বা ময়লার স্তূপ হতে দেবেন না।