মন বসে না পড়ার টেবিলে—এটা যেন এই প্রজন্মের সবচেয়ে পরিচিত একটা অনুযোগ। মহামারি, দেশের নানান ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষানীতিতে ঘন ঘন পরিবর্তন, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি নানা কারণে এখনকার শিক্ষার্থীরা ‘ব্রেক অব স্টাডি’র ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। শিক্ষাজীবনে অনিশ্চয়তা একধরনের স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। সামনেই শুরু হতে চলেছে ভর্তিযুদ্ধ। চাকরির পরীক্ষা তো সারা বছর চলমান। চলুন চট করে জেনে নিই, পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখার কিছু টোটকা।
১. ২৫/৫ এর নিয়ম
একটানা ২৫ মিনিট পড়বেন। তারপর পাঁচ মিনিট বিরতি নেবেন। বাইরে প্রকৃতি বা সবুজের দিকে তাকাবেন। পানি খাবেন বা হাঁটাহাঁটি করবেন। আবার পড়তে বসবেন। এতে করে ‘অ্যাটেনশন স্প্যান’ (একটানা যতক্ষণ মনোযোগ ধরে রেখে কোনো একটা কাজ করা হয়) ঠিক রাখা সহজ হয়। আবার অন্য আরেকটি গবেষণা বলছে, একটানা ৪৫ মিনিট পড়াশোনা বা কাজ করে ১৫ মিনিটের বিরতি নেওয়াও মনোযোগ ধরে রাখার জন্য ভালো।
২. ছোট ছোট লক্ষ্য নিন, পূরণ করুন
মনে করুন, আপনি দিনে দুই বেলা পড়তে বসেন। সকাল আর রাত। সে ক্ষেত্রে, সকালে কী পড়বেন, রাতে কী পড়বেন, কতটুকু পড়বেন, দিনে কতটুকু এগোবেন, সপ্তাহে সিলেবাসের কত অংশ শেষ করবেন, তা ঠিক করে এগোন। ছোট ছোট লক্ষ্য নিয়ে, পূরণ করে, বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো টুকে রাখুন। সাপ্তাহিক, মাসিক লক্ষ্য নিয়ে এগোন। লক্ষ্য কতটা পূরণ হলো, নিয়মিত খেয়াল রাখুন। এ জন্য ডায়েরি, স্মার্ট ম্যানেজার বা ক্যালেন্ডার রাখতে পারেন।
৩. পড়াশোনার পরিবেশ
পড়াশোনার পরিবেশ আপনার অনুকূলে রাখুন। পড়ার জায়গাটি যেন কোলাহলপূর্ণ না হয়। সেখানে এমন কিছু রাখবেন না, যা আপনার পড়ার মনোযোগ নষ্ট করবে। পর্যাপ্ত আলো প্রয়োজন। ঘরের অন্যান্য জিনিস, বই-খাতা সুন্দর করে গোছানো থাকলে আপনার মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের টুং-টাং থেকে নিরাপদ দূরত্ব
মনে করুন, আপনি পড়তে বসেছেন। এমন সময় ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট বা ইনস্টাগ্রাম থেকে নোটিফিকেশন এল। অথবা, হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেঞ্জারে টুং-টাং বার্তা বা কল এল। তখন আপনার মনোযোগ পড়া থেকে সরে মুঠোফোনের দিকে চলে যাবে। আর একবার আপনি মুঠোফোনে চেক করতে গিয়েছেন তো এক ঘণ্টা কোথায় হাওয়া হয়ে গেল, টেরও পাবেন না! তাই পড়ার সময়ে ফোন দূরে রাখুন। ‘স্টে ফোকাসড’, ‘স্টে অফ’, ‘সেলফ কনট্রোল’, ‘ওয়ান সেকেন্ড’, ‘রিডিউস টাইম’—এই ধরনের অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।
৫. পর্যাপ্ত পানি খান, জাঙ্ক ফুড থেকে দূরে থাকুন
পরীক্ষা আর পড়াশোনার চাপে আমরা অনেক সময় নিজের খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্যের দিকে নজর রাখতে বেমালুম ভুলে যাই। এই সময় অনেকের জাঙ্কফুড খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে, মনোযোগ ধরে রাখতে এই সময় আপনাকে ঠিকমতো খেতে আর ঘুমাতে হবে। মনে রাখবেন, কেবল পড়াশোনাতেই না, যে কোনো কাজে নিজের সেরাটা ঢেলে দিতে শারীরিক আর মানসিকভাবে ভালো থাকার কোনো বিকল্প নেই।
৬. নিজেকে পুরস্কার দিন
পড়াশোনার জন্য নিজেকে পুরস্কার দিন। ছোট ছোট লক্ষ্য পূরণ করে নিজেকে ট্রিট দিন। কঠিন একটা চ্যাপ্টার পড়া শেষ করে নেটফ্লিক্সের বহু প্রতীক্ষিত সিরিজটা দেখেই ফেলুন। অঙ্কটা মিলেছে, মজার একটা খাবার খান। পরীক্ষার সময় বলে যে সময়টা আপনি উপভোগ করবেন না, তা নয়।
৭. সব পড়া রাতের জন্য তুলে রাখবেন না
রাতের নীরবতাকে অনেকে মনে করেন পড়াশোনার জন্য সেরা সময়। কিন্তু আপনি যদি সারা রাত পড়েন আর সারা দিন ঘুমান, তাহলে পড়াশোনার যা-ই হোক, শারীরিক আর মানসিক স্বাস্থের ওপর তা মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তা ছাড়া রাতের ঘুম আপনার পড়ায় মনোযোগ ধরে রাখার জন্য খুবই জরুরি।
সূত্র: হোস্ট-স্টুডেন্টস ডটকম