ঢাকা শহরের দালানগুলো যেন দিন দিন আকাশছোঁয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের প্রতিদিনই নানা কাজে এসব উঁচু ভবনের লিফট ব্যবহার করতে হচ্ছে। কখনো অফিস, কখনো হাসপাতাল বা শপিং মল। আবাসিক ভবনগুলোতেও লিফট এখন আর ‘নতুন কিছু’ নয়।
অন্য সব যন্ত্রের মতো লিফটেও হুটহাট যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতে পারে। লোডশেডিংয়ের এই ‘মৌসুমে’ আশঙ্কাটা আরও বেশি। লিফটের ভেতর যদি আটকা পড়েই যান, কী করবেন?
সবচেয়ে জরুরি হলো মাথা ঠান্ডা রাখা ও শান্ত থাকা। কারণ, আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লে পুরো ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে জানান স্মার্ট এলিভেটরস লিমিটেডের পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন। যদি আপনি ক্লাস্ট্রোফোবিক হন, অর্থাৎ আপনার যদি আবদ্ধ জায়গার প্রতি একধরনের ভীতি থাকে, তাহলে চেষ্টা করুন লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজের মনঃসংযোগ অন্য কিছুতে নিবদ্ধ করতে। মনকে শান্ত করার জন্য উল্টো দিক থেকে সংখ্যা গণনা শুরু করতে পারেন। এমনকি যদি লিফটের ভেতরের তাপমাত্রা বেশি হয়ে যায়, তবু আতঙ্কগ্রস্ত হবেন না। কারণ, লিফটের ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে।
যদি হঠাৎ লিফট বন্ধ হয়ে যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তার আলো নিভে যায়, তখন আপনার মুঠোফোনের ফ্ল্যাশ লাইটটি অন করে দেবেন। দরজা খোলার জন্য কোনো বাটন আছে কি না, দেখুন। সাধারণত দুই দিকে তির চিহ্ন দেওয়া একটি বাটন থাকে। বাটন চাপলে যদি দরজা খুলে যায়, তাহলে আগে দেখুন লিফটটি কোনো তলার সমতলে আছে কি না। যদি না হয়, তবে তাড়াহুড়া করে বের হতে যাবেন না। সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করুন।
যদি লিফটের দরজা কোনোভাবেই খোলা সম্ভব না হয়, তবে দরজার পাশেই থাকা ‘অ্যালার্ম’ বাটনে চাপ দিন। বাইরে থেকে কারও সহযোগিতার জন্য অপেক্ষা করুন। বর্তমানে বেশির ভাগ লিফটেই দুই দিক থেকে কথা বলা যায়, এমন স্পিকার অথবা ইন্টারকম থাকে। ফলে আটকা পড়লে ভবনের দায়িত্বে থাকা কারও না কারও সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন।
যদি দেখেন কোনো একটি নির্দিষ্ট তলায় আপনি আটকে গেছেন, তাহলে দরজায় ধাক্কা দিন। বাইরে থেকে লিফট খোলা বেশ সহজ। সে ক্ষেত্রে বাইরে কেউ থাকলে তিনি আপনাকে ওই পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। আজকাল সব লিফটেই এআরডি (অটোমেটিক রেসকিউ ডিভাইস) থাকে। যার কাজ হলো, লিফট কোনো কারণে বন্ধ হলেও কোনো নির্দিষ্ট একটি তলায় এসে থেমে, দরজা খুলে যাবে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।
কিছু সাধারণ বিষয় মাথায় রাখুন—
লিফটে ওঠার সময় খেয়াল করুন, লিফটটি মেঝের সঙ্গে সমতলে আছে কি না। একটু ওপরে বা নিচে থাকলে লিফটে উঠতে যাবেন না।
যদি দেখেন লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তবে দৌড়ে উঠতে যাবেন না। দরজা বন্ধ হওয়ার সময় মাঝখানে হাত বা পা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করবেন না।
অনেক লিফটে সেন্সর থাকে। কিন্তু সব লিফটেই সেন্সর কাজ করবে, এমনটা আশা না করাই ভালো। ধীরস্থির হয়ে অপেক্ষা করুন। লিফট কিন্তু সেই ভবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না।
ছোট শিশুরা যেন একা একা লিফটে না ওঠে, সেদিকে লক্ষ রাখুন।
যেসব ভবনের লিফট পুরোনো হয়ে গিয়েছে, সে ক্ষেত্রে লিফটের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা উচিত। মাসে অন্তত একবার পরীক্ষা করে দেখা উচিত, কারিগরিভাবে লিফটে কোনো সমস্যা আছে কি না।