কিশোর-কিশোরী বা টিনএজ বলা হয় ১৩ থেকে ১৯ বছরের ছেলেমেয়েদের। এই সময় সব মানুষের জন্যই অন্য রকম। বলা হয়, কৈশোরের সময়টা শুরু হয় অবাক বিস্ময় নিয়ে। আবার অনেকে বলে থাকেন, অজানা ভালো লাগা, মুগ্ধতার ঘোর এবং শারীরিক পরিবর্তনের কিছু বাস্তব বিষয়ের মুখোমুখি হওয়াই হচ্ছে কৈশোর। সে যা–ই হোক, প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে কিশোর-কিশোরীরাও কয়েক ধাপ এগোনো। নিজেদের মনোজগৎ নিয়ে তারা যেমন সচেতন, ঠিক তেমনি নিজেদের সাজপোশাক নিয়েও কম যায় না কিশোরের দল। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ম্যাগাজিন ইনস্টাইল–এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, পুরো পৃথিবীতে ফ্যাশনসচেতনদের সবচেয়ে বড় অংশই টিনএজার। যারা প্রতিনিয়ত খবর রাখে বিশ্ব ফ্যাশনে কী চলছে আর কী হবে আসন্ন ঋতুর পোশাক। সুতরাং বলতেই হয়, কিশোর–কিশোরীদের পোশাকের রং, নকশা হতে হবে ট্রেন্ডি। থাকতে হবে বিশ্বায়নের ছাপ।
মানুষের যখন বয়স বেড়ে যায়, তখন অধিকাংশ মানুষই কোনো না কোনো ক্ল্যাসিক স্টাইলে নিজেকে বেঁধে ফেলে। আর এই বাঁধা পড়ার আগে কিশোর বয়সেই সেই নিরীক্ষা শুরু হয় পোশাকের নকশা আর রং নিয়ে।
বৈশাখের রোদে পোশাকে দরকার পড়বে আরাম। এবার ঈদের চলতি ধারায় তাই কিশোর-কিশোরীর পোশাকি ভাষা হতে হবে সময়োপযোগী এবং আন্তর্জাতিক ফ্যাশনের সঙ্গে জুতসই। এই বয়সে নিজেকে সবার চেয়ে কিছুটা আলাদা করার চিন্তা থাকে। নিজের সাজপোশাকের উপস্থাপনায় বিশেষত্ব খোঁজা কিশোর-কিশোরীদের সহজাত প্রবৃত্তিই বলা যায়। পোশাকে বিশেষত্ব খোঁজার প্রথম ধাপ হতে পারে রং। আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ডে টিনএজারদের পোশাকে বেশি দেখা যাচ্ছে পপিং কালার। যে ধারা দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোও মেনে চলেছে এবার। এ ছাড়া গরমের বিষয়টি মাথায় রেখে চোখে আরাম দেয়, এমন রং নির্বাচন করা হয়েছে কিশোরদের জন্য।
কিশোর–কিশোরীদের নতুন কিছু করা বা পরার আগ্রহ চিরন্তন। আর ফ্যাশনের ক্ষেত্রে সময়ের সর্বশেষ ট্রেন্ডকেই নিজের স্টাইলে তুলে ধরতে চায় তারা। গতানুগতিক ধারার কুর্তা, কামিজের বাইরে আনারকলি, জাম্পস্যুট কিংবা বোহেমিয়ান ধারার কুর্তি বেছে নিচ্ছে কিশোরীরা। কিশোরীদের পোশাকে বেশ কয়েক বছর ধরে ফ্যাশন ট্রেন্ডে রাজত্ব করছে আনারকলি ও জাম্পস্যুট। কুর্তির স্টাইলে এসেছে ফিউশনের আমেজ।
যেখানে দেশি মোটিফ এবং কৃষ্টি-সংস্কৃতির মিশ্রণে বোহেমিয়ান, পারসিয়ান বা ইরানি ভাব বেশি ফুটে উঠছে। এ ধরনের পোশাকে নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট সহজেই ভিন্নভাবে প্রকাশ করা যায়। কয়েক বছর আগেও আমাদের দেশের ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোতে কিশোর–কিশোরীদের পোশাক নিয়ে খুব বেশি কাজ করতে দেখা যেত না। বড়দের জন্য নকশা করা সালোয়ার–কামিজ বা কুর্তাগুলো আলাদা সাইজে কিশোরীদের জন্য প্রদর্শিত হতো। কিন্তু এখন দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো কিশোর–কিশোরীদের জন্য, বিশেষ করে উৎসবের সময় আলাদা সংগ্রহ আনছে।
সেই সংগ্রহে প্রাধান্য পাচ্ছে তাদের রুচি ও চাহিদা। বিশেষ করে জাম্পস্যুট এবং লম্বা ঝুলের পোশাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে বেশি। কিশোরীদের পাশাপাশি কিশোর বয়সের ছেলেদের টি–শার্ট, পোলো শার্ট ও ক্যাজুয়াল শার্টেও দেখা যাচ্ছে পরিবর্তন। টি–শার্টের ক্যানভাসে প্রাধান্য পাচ্ছে গ্রাফিক্যাল ডিজাইন। যেখানে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে সময়ের আলোচিত সুপারহিরোদের লোগো, অবয়ব ইত্যাদি। পোলো বা ক্যাজুয়াল শার্টেও দেখা যাচ্ছে গ্রাফিক্যাল, নিউমারিক বা অ্যালফাবেটিক ডিজাইন। পাশাপাশি ফুলেল ও ট্রপিক্যাল প্রিন্টও রয়েছে; অর্থাৎ চিরাচরিত ফ্যাশনকে হুবহু অনুসরণ না করে, ভিন্ন কিছু করতে চেয়েছে দেশীয় ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো। সঙ্গে যোগ হয়েছে সমসামিয়কতাও। উৎসবকে আরও আনন্দমুখর করে তুলতে পোশাকগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখবে এবার।
প্রতিদিনের ফ্যাশন বলতে বোঝায় ক্লাস, আড্ডা বা ঘোরাঘুরিতে সচরাচর যে পোশাকগুলো পরা হয়। আর প্রতিদিনের ফ্যাশনে জমকালো নকশার ডিজাইন কারোরই পছন্দের নয়। কিশোর–কিশোরীদের তো মোটেও নয়। টিনএজারদের উৎসবের পোশাক অথবা প্রতিদিনের ফ্যাশন হতে হবে সেই আবহাওয়ার উপযোগী। মানে ফ্যাশন যেমন হবে সমসাময়িক, তেমনি পরতেও আরামদায়ক। এ বয়সে ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়াতে চায় পাহাড়-পর্বত আর নদী-সাগরে। উড়তে চায় পাখি হয়ে দেশ-বিদেশে। কিন্তু এই দৌড়ঝাঁপ আর ছোটাছুটির বাধা যেন না হয় পোশাক। পোশাকের জমকালো নকশা অনেক সময়ই তার এই দুরন্তপনায় বাধা হতে পারে। সচেতন হতে হবে মা-বাবার। টিনএজ ছেলেমেয়েদের হঠাৎ বড় হয়ে যাওয়ার সঙ্গে চাঞ্চল্য নিয়ে বেশিই চিন্তিত হয়ে যান অনেক অভিভাবক। ছেলেমেয়ের পোশাক–পরিচ্ছদ থেকে চালচলনে অপ্রয়োজনীয় প্রভাব বিস্তার করতে চান তাঁরা। পোশাকের ক্ষেত্রেও থাকে মায়ের নিষেধাজ্ঞা, যা এই বয়সীদের মেধা বিকাশে, উদ্যম গতিতে চলতে বাধা দেয়। তাই সব বাবা-মায়েরই উচিত সন্তানের চিন্তাভাবনা, পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে সঠিক পথটি বেছে নিতে সাহায্য করা। পোশাকের বেলায়ও সেই কথা।