চা কি সত্যিই বাতাসে ভেসে এসেছিল?

আজ আন্তর্জাতিক চা দিবস। এ উপলক্ষে চলুন জেনে নেওয়া যাক চায়ের ইতিহাস।

বৈশাখের প্রখর রোদের মধ্যে মাথায় মাথাল দিয়ে বাগান থেকে চা-পাতা তুলছেন এক নারী। লাক্কাতুরা চা-বাগান

চায়ের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে চীনা রাজা শেন নংয়ের গল্পটা বেশ চমকপ্রদ। খ্রিষ্টপূর্ব আনুমানিক ২৭৩৭ সালের দিকের কথা, ঔষধি গাছের খোঁজে বনের জানা-অজানা গাছের বাকল আর পাতা চিবিয়ে স্বাদ নিচ্ছিলেন রাজা। একসময় তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এ সময় বাতাসে ভেসে একটি পাতা তাঁর মুখে পড়ে। সেই পাতা চিবিয়ে দ্রুতই সুস্থ হয়ে ওঠেন শেন। সে পাতাটিই ছিল নাকি চা-পাতা!

এই গল্পের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আজ থেকে প্রায় ছয় হাজার বছর আগে যে চীনে চায়ের চাষ শুরু হয়েছিল, সে ব্যাপারে গবেষকদের কোনো দ্বিমত নেই। তবে সে যুগে চা কিন্তু পানীয় হিসেবে পান করা হতো না; চা-পাতাকে শাক হিসেবে খাওয়া হতো!

টি ড্রাঙ্কের প্রধান নির্বাহী শুনান টেং দাবি করেন, চাকে পানীয় হিসেবে গ্রহণ করা শুরু হয় দেড় হাজার বছর আগে, চীনেই। পঞ্চম শতকের দিকে চীনারা উপলব্ধি করে, চা-পাতা গরম করে পানিতে মিশিয়ে নিলে চমৎকার এক পানীয় তৈরি হয়। চীনারা এই পানীয়ের নাম দেয় ‘মৌচা’।

নানা ধরনের চায়ের প্রচলন আছে সারা বিশ্বেই

পানীয় হিসেবে মৌচা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, যার প্রভাব পড়ে চীনের পাশের দেশ জাপানেও। নবম শতকে টাং সাম্রাজ্যের সময় একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু প্রথম চীন থেকে একটি চা-গাছ নিয়ে জাপানে গেলে সেখানেও চা পানের সংস্কৃতির প্রচলন হয়। 

ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে ওলন্দাজ বণিকেরা বিপুল পরিমাণে চা চীন থেকে ইউরোপে আমদানি করে। তবে বর্তমান সময়ের অনেক ঐতিহাসিকের মতে, চীন বা ওলন্দাজেরা নয়, চাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব যুক্তরাজ্যের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের স্ত্রী রানি ক্যাথেরিন দ্য ব্রাগাঞ্জার। ১৬৬১ সালে রাজা চার্লসকে বিয়ে করে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমানোর সময় রানি ক্যাথেরিন সঙ্গে নিয়ে আসেন একগাদা চা-পাতা আর তাঁর হাত ধরেই যুক্তরাজ্যের রাজদরবার হয়ে সেনাছাউনিগুলোতে পানীয় হিসেবে চায়ের প্রবেশ ঘটে।

যুক্তরাজ্যের সেনাদের বিশ্বজয়ের সঙ্গে সঙ্গে চা পৌঁছে যেতে থাকে পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তেই। সতেরো শতকের মাঝামাঝি ভারতবর্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় সব মহাদেশেই চা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।