তাদের কেন ‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ ডাকা হয়, জানেন?

‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ একটা পশ্চিমা ধারণা, অল্প সময়ের ব্যবধানে এই প্রজন্ম দেখে ফেলেছেন দুই–দুটো বিশ্বযুদ্ধ
ছবি: সংগৃহীত

কঠিন সময় পার করার ভেতর দিয়েই একটা মানুষ সত্যিকারভাবে বিকশিত হতে পারে। সেই সময়েই তাঁর ধৈর্য, নিষ্ঠা, মানবিকতার মতো গুণগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে বিকশিত হয়। আর ‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ দুটো বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী। তারা যেমন ভাঙতে দেখেছে, তেমনি গড়তেও দেখেছে। ব্যাপক নৃশংসতার পাশাপাশি দেখেছে মানবিকতার উত্তুঙ্গ সব মুহূর্ত। তারা দেখেছে, শিক্ষা নিয়েছে, পরিশ্রম করেছে, গড়েছে আর এসবের ভেতর দিয়ে নিজেদের সেরাটা হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে প্রতিনিয়ত।

‘গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ মূলত একটা পশ্চিমা ধারণা। ১৯৯৮ সালে ‘দ্য গ্রেটেস্ট জেনারেশন’ প্রকাশ করেন এনবিসি নিউজের সাবেক উপস্থাপক ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক টম ব্রোকা। বহুল বিক্রীত এই বইতেই ১৯০১ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া মানুষদের গ্রেটেস্ট বা সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম বলে অভিহিত করা হয়। এ প্রজন্মকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলার পেছনে ভূমিকা পালন করে চারটি উপাদান।

১. অল্প সময়ের ব্যবধানে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির সাক্ষী হওয়া

এ প্রজন্ম ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বড় হয়েছে। তখন বিশ্বব্যবস্থা বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা ছিল টালমাটাল। এ প্রজন্ম পরিণত বয়সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫) দেখেছে। তখন মার্কিন পরাশক্তির উত্থান ঘটছিল। কাজেই এ প্রজন্মকে মহামন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সবশেষে ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ যুগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রজন্ম বিশ্বের ইতিহাসের যেসব পরিবর্তন দেখেছে, চিরকাল তা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হবে।

২. কঠিন সময়ের নৈতিকতাবোধ

সাধারণত সংকটের সময়েই মানুষের সর্বশ্রেষ্ট মানবিকতার গল্পগুলো তৈরি হয়। মহামন্দার মধ্য দিয়ে বসবাস করার কারণে এ প্রজন্মকে কঠোর পরিশ্রম করে টিকে থাকতে হয়েছে। তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলোতে বেঁচে থেকেছে, আবার স্থিতিশীলতার উন্মেষও তারা দেখেছে। সম্মিলিতভাবে এ দুটি কারণেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের সদস্যদের মধ্যে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী নৈতিকতা রয়েছে।

৩. মিতব্যয়িতা

মহামন্দার সময় জীবনযাপন ও যুদ্ধকালীন রেশনিংয়ের অভিজ্ঞতার সংমিশ্রণে এ প্রজন্মের অনেকেই মিতব্যয়ী জীবনযাপনে পারদর্শী ছিলেন। তারা অভাবের মধ্যেও সৃজনশীলতা শিখেছে। মিতব্যয়িতা তাদের জন্য লজ্জিত হওয়ার মতো কিছু নয়। সে সময় এটি ছিল জীবনকে মোকাবিলা করার উপায়।

৪. ত্যাগ ও সম্মান

সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়েছেন। সে সময় এ প্রজন্মের জন্য যুদ্ধ ছিল সর্বাত্মক। দেশের জন্য, মঙ্গলের জন্য এ প্রজন্মের মানুষেরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি। এসব কারণে সামরিক বিশেষজ্ঞরাও এ প্রজন্মকে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন।

সাইলেন্ট বা নীরব প্রজন্মের বর্তমান বয়স ৭৯ থেকে ৯৬ বছর

সাইলেন্ট বা নীরব প্রজন্ম

সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের পরের প্রজন্মকে বলা হয় সাইলেন্ট বা নীরব প্রজন্ম। ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সালের ভেতর যাঁদের জন্ম, তাঁরা এ প্রজন্মের অধিকারী। টাইম ম্যাগাজিন প্রথম ১৯৫১ সালে একটি নিবন্ধে এই ‘সাইলেন্ট জেনারেশন’ শব্দবন্ধ ব্যবহার করে।

এ প্রজন্মের ভেতর দেখা যায় ‘সিস্টেমের মধ্যে কাজ করা’র প্রবণতা। যেখানে তাদের পূর্ববর্তী সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের ছিল ‘সিস্টেমের পরিবর্তনের’ জন্য লড়াই। নীরব প্রজন্ম মাথা নিচু রেখে ও কঠোর পরিশ্রম করে কেবল একটা চলমান ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছিল। তারা ঝুঁকি নেয়নি। বরং নিরাপদে ঝামেলা এড়িয়ে জীবন পার করে দেওয়ার প্রবণতাই ছিল বেশি। এভাবে নিজেদের জন্য তারা ‘নীরব প্রজন্ম’ তকমা অর্জন করেছে। ‘নীরব প্রজন্ম’ নামটি কোথা থেকে এসেছে, তা নিয়ে আরও নানা রকম কাছাকাছি তত্ত্ব রয়েছে। এ প্রজন্ম যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দার সময় বেড়ে ওঠে। অর্থনৈতিক সংকট আর জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় সেই সময় মানুষের মধ্যে জন্মহারও অনেক কম ছিল।