মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন না? পোমোদোরো কৌশল কাজে লাগাতে পারেন

টানা কাজে মনোযোগ রাখতে পারছেন না? বারবার মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে? কাজের গতি ধরে রাখতে পারছেন না? নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো একটি কাজ শেষ করা অসম্ভব মনে হচ্ছে? একবার পোমোদোরো কৌশলটি চেষ্টা করে দেখুন।

বৈজ্ঞানিক উপায়ে মনোযোগ দিয়ে কাজ করার একটি কৌশল পোমোদোরো। মডেল: মৌসুমী মৌ

পোমোদোরো একধরনের সময় ব্যবস্থাপনা কৌশল। আশির দশকে ফ্রান্সিসকো সিরিলো নামের এক ইতালীয় এই কৌশল উদ্ভাবন করেন। এটি প্রয়োগ করে অনেকেই প্রভূত উপকার পান। ক্রমে এই কৌশল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। মূলত যাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে পড়াশোনা করেন, যেমন, গবেষণাপত্র লেখা, সৃজনশীল লেখালেখি, ডিজাইন বা কোডিংয়ের কাজ করেন, তাঁদের জন্য এই কৌশল উপকারী। একই ধরনের পুনরাবৃত্তিমূলক কাজে এই কৌশল ভালো কাজে দেয়।

কীভাবে করবেন?

১. আজকের করণীয় বা কাজের পরিধি ঠিক করুন। এবার একটা টাইমার সেট করুন।

২. টাইমারটিকে ২৫ মিনিটে সেট করুন। এই ২৫ মিনিট কোনো বিরতি ছাড়া মনোযোগ দিয়ে কাজটি করুন। এ সময় অন্য কোনো দিকে মনোযোগ দেবেন না।

৩. ২৫ মিনিট পর টাইমার বেজে উঠলে কাজে ৫ মিনিটের বিরতি নিন। কতটুকু করা হলো, লিখে রাখুন। ‘পোমোদোরো সেশন ১ শেষ হলো’—
এটাও লিখুন।

৪. পরপর চারবার ২৫ মিনিট কাজ এবং ৫ মিনিটের বিরতির চক্র শেষ হয়ে গেলে এবার একটা লম্বা বিরতি নিন। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট। এ সময় চাইলে শুয়ে থাকতে পারেন বা একটু ব্যায়াম করে নিতে পারেন।

ব্যস। কৌশলটা এ রকমই সাধারণ ও সহজ।

পোমোদোরো আপনার ফোকাস আর মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। মডেল: মৌসুমী মৌ

পোমোদোরো আপনার ফোকাস আর মনঃসংযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। কোনো একটি কাজ নির্দিষ্ট ও সঠিক সময়ে শেষ করতে সাহায্য করে। তবে তার জন্য কিছু নিয়ম কঠোরভাবে মানতে হবে। যেমন ২৫ মিনিটের পোমোদোরো কর্মসময়ের মধ্যে ওই নির্দিষ্ট কাজ ছাড়া (যেমন থিসিস পেপার লেখা) অন্য কিছু করা যাবে না। যেমন টেক্সট মেসেজ বা ই–মেইল চেক, চ্যাটিং, ফোন রিসিভ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে। যদি এই বিরতি খুবই জরুরি হয়, তাহলে ৫ মিনিটের ব্রেকটি এ সময় নিয়ে নিন। তারপর নতুন করে টাইমার সেট করুন। তবে চেষ্টা করুন বিরতি সর্বনিম্ন রাখতে।

কোনো কাজে যদি চারটির বেশি পোমোদোরো সেশন দরকার হয়, তার মানে হলো, আপনার কাজটিকে আরও সাধারণ করতে হবে বা ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করতে হবে। অহেতুক কোনো কাজকে দীর্ঘায়িত করবেন না। কোনো এক সকালে চারটির বেশি পোমোদোরো সেশন রাখা উচিত নয়। পোমোদোরো সেশনের মধ্যে কোনো আইডিয়া বা কাজ মনে পড়লে কেবল কাগজ–কলমে তা নোট করে রাখুন। কর্মসেশনের মধ্যে সেটি নিয়ে আর ভাববেন না।

পোমোদোরো কি আসলেই কার্যকর

গবেষণা বলছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি সত্যি কার্যকর। প্রথমত, একটি বিশাল কাজের শুরুতে যে হতাশা বা আলস্য আসে, মনে হয় কীভাবে এটা শুরু করব বা এই কাজ আদৌ শেষ হবে কি না, সেই অনুভূতি দূর করা যায় এই কৌশল ব্যবহার করে। কারণ, বড় একটি কাজকে এতে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে নেওয়া হয়। ফলে আলস্য আসে না।

লেখক, গবেষক, ডিজাইনার বা কোডারদের জন্য পোমোদোরো খুবই চমৎকার একটি কৌশল। মডেল: মৌসুমী মৌ

দ্বিতীয়ত, কাজের মধ্যে অকারণ ব্যাঘাত যে মনঃসংযোগ নষ্ট করে, এই কৌশল তা থেকে আপনাকে রক্ষা করবে (যদি আপনি কঠোরভাবে ২৫-৫–এর চক্র মেনে চলতে পারেন)।

লেখক, গবেষক, ডিজাইনার বা কোডারদের জন্য পোমোদোরো খুবই চমৎকার একটি কৌশল। ধরুন, আপনি একটি বড় উপন্যাস লেখার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু শুরুতেই হতাশ হয়ে পড়ছেন, কীভাবে এটি শেষ করবেন, তা ভেবে। এই হতাশার কারণে লিখতে বসে উল্টো নেটফ্লিক্স দেখতে শুরু করছেন বা ফেসবুক স্ক্রল করছেন। এ ক্ষেত্রে পোমোদোরো কৌশল অনুসরণ করে আপনি প্রতিদিনকার লেখার অংশের পরিকল্পনা করুন। যেমন ঠিক করে নিন আজ আপনি দুটি পরিচ্ছেদ লিখবেন। এবার শুরু করুন ২৫ মিনিট লেখা ও ৫ মিনিট বিরতির চক্র। নির্দিষ্ট ২৫ মিনিটে লেখা ছাড়া আর সবকিছু ভুলে যান। বিরতির ৫ মিনিট যা খুশি, তা–ই করতে পারেন। ফেসবুক স্ক্রল থেকে শুরু করে গান শোনা পর্যন্ত। দিন শেষে দেখবেন, আপনি সফলভাবে দুটি পরিচ্ছেদ লেখা শেষ করে ফেলেছেন।

তাহলে কী বুঝলেন? আজই কৌশলটা শুরু করে দেখুন।