এই ১২ অভ্যাস আয়ত্ত করুন, ছয় মাসে বদলে যাবে জীবন

কোনো ভূমিকা না করে সরাসরি দেখে নেওয়া যাক সেই অভ্যাসগুলো কী—

সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা গোছানোর ভেতর দিয়ে দিন শুরু করুন
ছবি: প্রথম আলো

১. নিজের বিছানা নিজেই তৈরি করুন

এ বিষয়টি নিয়ে সুন্দর একটি ইংরেজি প্রবাদ আছে। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, আপনি যদি বিশ্ব বদলাতে চান, তাহলে আগে নিজের বিছানা থেকে শুরু করুন। অর্থাৎ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজের বিছানা নিজেই তৈরি করুন। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজের বিছানা গোছানোর ভেতর দিয়ে দিন শুরু করুন।

২. ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খান

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সবার আগে এক গ্লাস পানি খান। এটাকে বলা হয় ‘ইন্টারনাল শাওয়ার’। আমাদের শরীরের শতকরা ৬০ ভাগই পানি। সকালে এক গ্লাস পানি খাওয়ার মাধ্যমে আপনি শরীরকে তৈরি হওয়ার জন্য জানান দেন। শরীরের অভ্যন্তরীণ সিস্টেম সারা দিনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার বার্তা পায়।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে সবার আগে এক গ্লাস পানি পান করুন

৩. দুই মিনিট লাফান

ছোটবেলায় নিশ্চয়ই দড়িলাফ খেলেছেন? সেই দড়িটাই খুঁজে বের করুন। অথবা একটা কিনে নিন। ঘরের ভেতরে, বারান্দায় বা ছাদে স্টপওয়াচ ধরে দুই মিনিট দড়িলাফ দিন। এতে আপনার শরীর আর মন—দুইই ঘুম থেকে চমৎকারভাবে জেগে উঠবে।

৪. ‘হাওয়া খেয়ে’ আসুন

ভোরের আলো–হাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তা ছাড়া সকালবেলা আপনি যদি ১৫ থেকে ২০ মিনিট হেঁটে বা দৌড়ে আসেন, তাতে উভয় কিডনি থেকে কর্টিসল নামক স্টেরয়েড হয়মোন নিঃসরণ হবে। রক্তসঞ্চালন থেকে শুরু করে সুস্বাস্থ্যের জন্য জরুরি একটা হরমোন কর্টিসল।

৫. জীবনের লক্ষ্য কী, মনে আছে তো?

আমাদের ভেতর মাত্র ১৪ ভাগ মানুষ জীবনের লক্ষ্য নিয়ে আগায়, আর তাঁদের সফলতার হার অন্যদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। আর মাত্র তিন ভাগ মানুষ জীবনের লক্ষ্য লিখিত আকারে রাখেন। সেটাকে আবার সাপ্তাহিক, মাসিক, দৈনিক—এভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাগে ভাগ করে লিখিত আকারে রাখেন। প্রতিদিনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লক্ষ্য পূরণ করে বড় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। এদের সফলতার হার শতকরা ওই ১৪ জনের চেয়েও তিন গুণ বেশি।

৬. ৫০ পৃষ্ঠা পড়ুন

এটা হতে পারে দৈনিক পত্রিকা, ধর্মগ্রন্থ, গল্পের বই, কারও জীবনী, জীবন দর্শন, ইতিহাস বা ভ্রমণকাহিনি। দৈনিক পড়ার অভ্যাস আপনার ‘মনোযোগ’ ধরে রাখতে সাহায্য করবে। মনোযোগের বিঘ্ন না ঘটিয়ে একটানা ৩০ মিনিট যেকোনো কাজ করতে পারবেন।

দৈনিক পড়ার অভ্যাস মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে

৭. গাছের যত্ন নিন

নিজের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি পোষা প্রাণী, রাস্তার কুকুর-বিড়ালকে খাবার দিন, আদর করুন বা নিদেনপক্ষে গাছের যত্ন নিন। গাছের গোড়ায় পানি ঢালুন বা রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করুন। মনে রাখবেন কেবল নিজের প্রতিই নয়, প্রকৃতির অংশ হিসেবে অন্যান্য উপাদানের প্রতিও আপনার করণীয় আছে।

৮. ঠান্ডা পানিতে গোসল

শীত, গ্রীষ্ম বা বর্ষা—যেকোনো ঋতুতে আপনি ঠান্ডা পানিতে গোসল সারতে পারেন, মানে আপনি শারীরিকভাবে ফিট!

৯. খাওয়ার ১০ মিনিট আগে পানি পান করুন

আপনার পেটের তিন ভাগের এক ভাগ থাকবে পানি, এক ভাগ খাবার আর এক ভাগ থাকবে খালি। সেই হিসাব করে এক থেকে দুই গ্লাস পানি আপনি খাওয়ার অন্তত ১০ মিনিট আগে পান করবেন। এই অভ্যাস আপনাকে খাবার গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তৃপ্তি দেবে।

১০. ৪-৭-৮ শ্বাসপ্রশ্বাস

চার সেকেন্ড ধরে শ্বাস নিন। সেটাকে ৭ সেকেন্ড আটকে রাখুন। ৮ সেকেন্ড ধরে ছাড়ুন। ছাড়ার সময় মুখ দিয়ে ‘হুশ’ আওয়াজ করুন। এভাবে চারবার শ্বাসপ্রশ্বাস নিন। দিনে অন্তত দুবার এভাবে চারবার করে শ্বাসপ্রশ্বাস নিন।

আমরা কেউ কেউ যেন মুঠোফোন ব্যবহার করি না, মুঠোফোনই যেন আমাদের ব্যবহার করে

১১. মুঠোফোন থেকে দূরে

এ সময়ের সবচেয়ে বড় আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে মুঠোফোন। গেম খেলা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অযথা স্ক্রলিং বা অর্থহীন চ্যাটিং—এগুলো থেকে যেন কোনো মুক্তি নেই। স্মার্টফোন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। ভার্চ্যুয়াল নয়, একচুয়াল জীবনে মনোনিবেশ করুন।

১২. ইতিবাচকতা ধরে রাখুন

দিন শেষে ইতিবাচকতা ধরে রাখুন। রাতে ঘুমানোর আগে সারা দিনে ভালো কী ঘটল, এমন তিনটা পয়েন্ট ছোট্ট করে লিখে ফেলুন। কৃতজ্ঞ হোন, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করুন। কেননা আপনি যতই ইতিবাচকতার চর্চা করবেন, ততই ইতিবাচক জীবন যাপন করতে পারবেন। সবকিছু ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখুন। জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে।