সারা পৃথিবীতেই ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার সুনাম আছে। সেই দেশেরই ইউনিভার্সিটি অব অউলুতে ‘লার্নিং, এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি’ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন জয়নাল আবেদিন। তাঁর অভিজ্ঞতা কী বলে? শিক্ষা খাতে কীভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ফিনল্যান্ড?
উন্নত দেশের মধ্যেও শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহারে অনেক এগিয়ে ফিনল্যান্ড। শুধু শিক্ষা নয়, তাদের সবকিছুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে প্রযুক্তি। বাংলাদেশে স্নাতক শেষ করে এখানে আসার পর মনে হয়েছে, এখানকার পরিবেশ আমার ভাবনার চেয়েও বেশি প্রযুক্তিনির্ভর। একাডেমিক জীবনের কথা যদি বলি, এখানে একটি নির্দিষ্ট কোর্সে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত ধরনের শিক্ষা উপকরণ দরকার, আগে থেকেই তা একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড করা থাকে। যেকোনো জায়গায় বসে ওই কোর্সের প্রায় সবকিছুই হাতের কাছে পাওয়া যায়, কাজে লাগানো যায়। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রুটিন থেকে শুরু করে ক্যানটিনে কী কী খাবার আছে, সবই আমরা দেখতে পাই অ্যাপের মাধ্যমে। এ ছাড়া এখানকার উচ্চ শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের দেশের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। যেমন বেশির ভাগ কোর্সেই আমাদের দেশের মতো পরীক্ষা থাকে না। বরং গ্রুপ ওয়ার্কের মাধ্যমে মূল্যায়ন হয়। একার চেয়ে দলবদ্ধভাবে কোনো কাজ সম্পাদন করাকে তারা বেশি কার্যকর মনে করে।
প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল। সামনের দিনে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী শিক্ষাপ্রযুক্তি আসবে। যেমন বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসহ অনেক ধরনের যন্ত্র বা প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করছি। নতুন ধরনের আরও অনেক উদ্যোগ আসছে। সামনে হয়তো ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটিও মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাবে। এগুলোও শিক্ষাক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি।
আমার বিভাগের গবেষণাগারে শিক্ষাপ্রযুক্তি বিষয়ে এখন নানামুখী গবেষণা চলছে। হাইব্রিড লার্নিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা চলমান। শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইস যথাযথ ব্যবহার করে শিক্ষার বা শিক্ষার্থীদের গুণগত মান কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় কিংবা প্রযুক্তির সমন্বয়ে শিক্ষা উপকরণ তৈরি করে তা কীভাবে ব্যবহার উপযোগী করা যায়, সেসব বিষয়েও কাজ হচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের দেশেও এই ধরনের গবেষণা আরও বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন।
কোভিডের মতো মহামারি যদি ভবিষ্যতেও আমাদের মোকাবিলা করতে হয়, সেটির জন্য ডিজিটাল লার্নিং হতে পারে একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র। সে জন্য আগে থেকেই সেই ধরনের প্রস্তুতি ও গবেষণা করা গেলে যেকোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব। শুধু তা-ই নয়, আমার দেশের প্রচলিত তাত্ত্বিক পড়াশোনার জায়গায় আরও বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার করে গুণগত মানসম্পন্ন শিখন নিশ্চিত করা সম্ভব। সে জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অংশীজনদের একসঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে।