৪৬ বছরের সুখী দাম্পত্যে কেউ কাউকে ভালোবাসি বলেননি

বিয়ের আসরে রফিকুল আলম–আবিদা সুলতানা
ছবি : সংগৃহীত

‘কে প্রথম কাছে এসেছি
কে প্রথম চেয়ে দেখেছি
কিছুতেই পাই না ভেবে
কে প্রথম ভালোবেসেছি
তুমি না আমি...’,
লতা মঙ্গেশকর ও মান্না দের গাওয়া এই গানই প্রশ্ন হয়ে গেল সংগীত দম্পতি আবিদা সুলতানা ও রফিকুল আলমের কাছে। উত্তরটা দেওয়ার জন্য তাঁরা দুজনই শুরু করলেন একসঙ্গে।
আবিদা সুলতানা: তুমি বলবা, না আমি বলব?
রফিকুল আলম: তুমিই বলো।
আবিদা সুলতানা স্মৃতি হাতড়ে বলতে শুরু করলেন, ‘১৯৭৪ সালে ঢাকা স্টেডিয়ামে (বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম) বিশাল একটা সংগীত সম্মেলন হয়েছিল। আমি গিয়েছিলাম সেই অনুষ্ঠান দেখতে।’

সংগীত দম্পতি আবিদা সুলতানা–রফিকুল আলম বিবাহিত জীবনের ৪৬ বছর কাটিয়েছেন এক ছাদের নিচে

রফিকুল আলম কথা টেনে নেন: না, না, এটা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। এ ধরনের সংগীত সম্মেলন স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম। মিউজিক কলেজের এই আয়োজনের প্রধান উদ্যাক্তা ছিলেন ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ও কামাল লোহানী। আর সেই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিখ্যাত সব সংগীতজ্ঞজন। এ মুহূর্তে নাম মনে পড়ছে, এসেছিলেন শাস্ত্রীয় সংগীতের পুরোধা ওস্তাদ দবির খাঁ, আলী হোসেন খাঁ সাহেব। এসেছিলেন আধুনিক গানের বিখ্যাত শিল্পী মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়সহ আরও অনেকে।

আবিদা সুলতানা: বাংলাদেশের ওই সময়ের শীর্ষ শিল্পীরাও ছিলেন—আবদুল জব্বার, মাহমুদুন নবী, খন্দকার ফারুক আহমেদসহ আরও অনেকে। লাকী আখান্দ্‌ও ওই সম্মেলনে ছিলেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘এসো, তোমার সঙ্গে একজন শিল্পীর পরিচয় করিয়ে দিই। খুব ভালো গায়।’ রফিকের সঙ্গে সেই প্রথম আমার আলাপ। জানতে পারি, লাকী ভাইয়ের সুরে বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত ‘তোমাকে যেন ভুলে না যাই...’ গানটি রফিকের। ওই সময় গানটি ছিল বেশ শ্রোতাপ্রিয়।

দুজনে দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছেন বহু গান

রফিকুল আলম: আমি তখন নবীন শিল্পী। রাজশাহী থেকে এসেছি। এই সম্মেলনের জন্য আমাকে নির্বাচন করেন বারীণ মজুমদার ও কামাল লোহানী। তো, লাকী আখান্দের মাধ্যমে শিখার (আবিদা সুলতানার ডাকনাম) সঙ্গে পরিচয় হয় ওই সম্মেলনে।
সেই শুরু। পরের বছরই (১৯৭৪) দূরসম্পর্কের এক মামার সঙ্গে আবিদা সুলতানা গেলেন কক্সবাজারে। রফিকুল আলমও গেছেন সেখানে।

রফিক: সেটা ছিল আমার সমুদ্র দেখতে প্রথম কক্সবাজার যাওয়া। সেখানেও আমাদের দেখা হয়। কথা হয়। তখনো প্রেমটা হয়নি। তবে একটা ভালো লাগা তৈরি হয়েছিল বটে।
আবিদা: আসলে রফিকের সঙ্গে কখনো রোমান্টিক কথা হয়নি। তবে চোখে চোখে যে ভালো লাগাটা তৈরি হয়েছিল, সেটা যে ভালোবাসায় পরিণত হয়ে গেছে, তা খুব ভালোভাবে টের পেয়েছিলাম।
রফিক: আমাদের রেডিওতেই দেখা হতো বেশি। শিখার হয়তো কোনো গানের মহড়া আছে। মনে পড়ছে, একবার রেডিওতে মীর কাশেমের সুরে একটা দ্বৈত গান করি আমরা দুজন। নারী শিল্পীর সঙ্গে গান গাইতে গেলে যে সমস্যাটায় পড়তে হয় সেটা হলো, একটু উঁচু স্কেলে সব নারী গাইতে পারেন না। কিন্তু এই গান করতে গিয়ে দেখলাম, আমার স্কেলে শিখা বেশ সাবলীল। খুব ভালো গাইল। বিষয়টা আমাকে খুব টেনেছিল। সেই থেকে ওর প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল।

বর বেশে রফিকুল আলম

আবিদা: আসলে পিন্টু ভট্টচার্যের গান খুব ভালো গাইত রফিক। গান শুনেই ওর প্রতি বেশ দুর্বল হই। ভালোবেসেও ফেলি। কিন্তু তখন মনে মনে একটা শঙ্কাও তৈরি হলো, এত ভদ্র, সভ্য মানুষ, আবার আত্মভোলা। এই মানুষটাকে কীভাবে বিয়ে করব।
‘আমি একটু বলি,।’

রফিকুল আলম বলতে শুরু করলেন: একাত্তরের দিকে রুমা গুহঠাকুরতা (কিশোর কুমারের প্রাক্তন স্ত্রী) ক্যালকাটা ইয়ুথ কয়্যার নামে একটা সংগঠন করেছিলেন, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে থাকাকালে, তিনি আমাকে ওই সংগঠনের সদস্য করেন। ১৯৭৩ সালের প্রথম দিকে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে রুমাদি আমাকে আমন্ত্রণ জানালেন। তখন তো দেশে ভালো শার্ট, প্যান্ট কিছুই পাওয়া যায় না। কলকাতা থেকে দেশে ফেরার সময় আমি অনেক শপিং করি। তো হোটেল থেকে স্যুটকেস নিয়ে বেরিয়েছি। ট্যাক্সিতে স্যুটকেস তুলে এয়ারপোর্টে গেলাম। কিন্তু ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় খেয়াল হলো, স্যুটকেসটা সঙ্গে নেই। ট্যাক্সিতে ফেলে এসেছি। দেশে এই ঘটনা বন্ধু, শিল্পী মহলে বেশ চাউর হলো। আমার সঙ্গে কারও দেখা হলেই বলত, ‘তুই নাকি স্যুটকেস ফেলে এসেছিস?’ সেই থেকে বিষয়টা সবার জানা যে আমার খুব আত্মভোলা মন।

ভালোবেসে ঘর বাঁধলেও বিয়ের ৪৬ বছর পরও তাঁরা দুজনই অকপটে স্বীকার করলেন, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’, এই কথা কেউ কাউকে কখনো বলতে পারেননি।

আবিদা সুলতানা: মেয়েরা কিন্তু একটু লাজুক। ‘ভালোবাসি’ কথাটি তাই মনে এলেও মুখে আসতে চায় না। লজ্জা লাগে।
রফিকুল আলম: আসলে কারও সঙ্গে যখন মনের আদান–প্রদান হয়, তখন একটা অদৃশ্য মানসিক সম্পর্ক হয়েই যায়। এটা কিন্তু আমার হয়েছিল। তবে ভালোবাসি—এ কথা মুখে বলতে না পারলেও বুঝতে পারছিলাম, এই মেয়েটা আমার জীবনে এলে মন্দ হবে না। সহধর্মিণী হিসেবে ওকেই নির্বাচন করা যায়।    

চলছে বিয়ের আয়ােজন

১৯৭৩ সাল থেকেই বাল্যবন্ধু নূর আলমসহ রফিকুল আলম থাকতেন বর্তমান বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাশে একটি ভাড়া বাড়িতে। চাকরি করতেন বাংলা একাডেমিতে। আর আবিদা সুলতানা তখন নজরুল একাডেমির ছাত্রী। সুযোগ পেলেই তিনি মাঝেমধ্যে চলে যেতেন বাংলা একাডেমিতে গান করতে। আসল উদ্দেশ্য রফিকুল আলমের সঙ্গে দেখা হওয়া, দেখা করা।
আবিদা সুলতানা: আমাদের বেশি দেখা হতো রেডিওতে। তখন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ বা ১৬ ডিসেম্বর, এ রকম বিভিন্ন দিবসের বিশেষ অনুষ্ঠান হতো। আমরা দুজনই ছিলাম নবীন শিল্পী। দুজনেই এই বিশেষ অনুষ্ঠানগুলোতে থাকতাম। আর এ ধরনের অনুষ্ঠানের জন্য দুই–তিন দিন মহড়া হতো। তাই প্রায়ই আমাদের দেখা হতো।
যদিও প্রেম করার জন্য দুজনের পছন্দের স্পট ছিল বুড়িগঙ্গায় নৌকাভ্রমণ।
রফিকুল আলম: তখন তো এখনকার মতো এত সুন্দর জায়গা ছিল না প্রেম করার জন্য।  তাই আমরা মাঝেমধ্যে নৌকায় ঘুরতে বুড়িগঙ্গা চলে যেতাম। যাওয়ার সময় হাজীর বিরিয়ানির প্যাকেট কিনে নিয়ে যেতাম। তারপর নৌকায় ঘুরেটুরে বিরিয়ানি খেয়েদেয়ে বাড়ি ফিরে আসতাম। তখন বুড়িগঙ্গা নদীটা ভীষণ রোমান্টিক ছিল।
আবিদা সুলতানা: একবার নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। বাড়িতে গিয়ে মাকে কী বলব, বুঝতে পারছিলাম না। কারণ, সেদিন কোনো গানের মহড়া ছিল না। ভীষণ টেনশনে পড়ে যাই। এমন সময় হঠাৎ দেখি, আমাদের নৌকার পাশে একটা স্পিডবোট এসে থামল। তাতে দুজন পুলিশ সদস্য। আমাদের নৌকা ব্লক করে নৌকা কিনারে ভিড়াতে বললেন। একজন পুলিশ সদস্য বললেন, ‘আপনাদের এত অল্প বয়স। এই সন্ধ্যায় এখানে কী!’ আমরা দুজনই নার্ভাস হয়ে গেলাম। রফিক ওদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করল যে আমাদের কিছুদিন পর বিয়ে হবে। কিন্তু তাঁরা কোনো কথাই কানে নিলেন না। বললেন, ‘আপনারা থানায় (বন্দর থানা) চলেন। সেখানে কথা হবে।’ আমরা দুজনেই ভীষণ ঘাবড়ে গেলাম। তখন নৌকার মাঝি একফাঁকে আমাদের চুপি চুপি বললেন, ‘আপনেরা টেনশন নিয়েন না। এখানেই বসেন। আমি দেখতাছি।’ মাঝি নৌকা থেকে নেমে পুলিশের সঙ্গে কী যেন বলেটলে ম্যানেজ করে ফেললেন। তারপর সেখান থেকে আমরা ছাড়া পেলাম।

আবিদা সুলতানা ও রফিকুল আলম প্রেম করেছেন তিন বছর। এর মধ্যে বিষয়টা জানাজানি হয়ে যায়।

আবিদা সুলতানা: আমার বড় বোন রেবেকা সুলতানা থাকতেন সার্কিট হাউস রোডে। একদিন আমি গেছি আপার বাসায়। দুলাভাই তখন বাসায় ছিলেন না। আপা আমাকে পেয়েই বললেন, ‘শিখা, তুই কি রফিককে বিয়ে করবি?’ আমি খুব ঘাবড়ে গেলাম। তবু সাহস করে বললাম, ‘হ্যাঁ। বিয়ে করব।’ আপা আর কথা বাড়ালেন না। তিনি বাবা–মাকে বিষয়টা জানালেন। তখন আব্বা বললেন, ‘ওদের (রফিকের) পক্ষ থেকে আসতে বলো।’
রফিকুল আলম: রাজশাহী আমাদের বাড়িতেও বিয়ে করার জন্য খুব পীড়াপীড়ি করছিলেন আমার মা। এরপর শিখার কাছ থেকে বিয়ের বিষয়টা জানার পর আমার পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে শিখাদের বাড়িতে গেলেন শিল্পীদম্পতি এম এ হামিদ ও নীনা হামিদ এবং আমার মামাতো বোন লাইলী আপা। বিয়ে নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথা হলো। একটা তারিখও ঠিক হলো। কিন্তু ওই তারিখে বিয়ে করতে বারণ করলেন আমার বন্ধু সুকুমার সরকারের (বিটিভির সাবেক মহাপরিচালক) বাবা সুধীর সরকার। তাঁরা রাজশাহীতে আমাদের বাড়ির পাশে থাকতেন। তিনি মায়ের কাছ থেকে আমার জন্মের দিনক্ষণ জেনে বললেন, চৈত্র মাসে তোমার বিয়ে করা ঠিক হবে না। তখন ঠিক হলো, ১ বৈশাখ। (১৪ এপ্রিল, ১৯৭৮)

আবিদা সুলতানার হলুদের অনুষ্ঠান

আবিদা সুলতানা: বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক। তখন একটা বিষয় নিয়ে আফসোস হচ্ছিল। প্রেম করলাম, বিয়ে করতে যাচ্ছি, কিন্তু একটাও প্রেমপত্র লিখলাম না, পেলাম না। তখন রফিককে বললাম, হলুদের আগেই একটা প্রেমপত্র চাই এবং সেটা পোস্ট অফিস মারফত আসতে হবে। সেটা না পেলে এই বিয়ে হবে না। আমি রফিককে একটা দীর্ঘ চিঠি লিখি।
রফিকুল আলম: আমারও খুব মনে হচ্ছিল, চার বছর প্রেম করলাম, অথচ কেউ কাউকে একটাও চিঠি লিখলাম না। একটা চিঠি হওয়া উচিত। তাই ওকে একটা চিঠি লিখলাম। চিঠিটা অবশ্য ছোট ছিল। কী লিখেছিলাম মনে নেই। সেটা পোস্ট করলাম।
আবিদা সুলতানা: সেই চিঠি যখন এল, তখন আমি গায়েহলুদের মঞ্চে বসা। মনটা খারাপ। হঠাৎ বাড়ির কেউ একজন আমার হাতে দিয়ে গেল সেই চিঠি। ডাকপিয়ন দিয়ে গেছে। চিঠি খুলে আমি বারবার পড়ছি আর খুশিতে আত্মহারা।   
রফিকুল আলম: আমার গায়েহলুদের অনুষ্ঠানটা হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাশে যে ফ্ল্যাটটায় আমি থাকতাম, সেখানে। ওই বাড়ির নিচেই থাকতেন চলচ্চিত্রের খুব পরিচিতজন প্রযোজক ই আর খান। তিনি বিখ্যাত পরিচালক এহতেশামের মামা। তাই আমরা সবাই তাঁকে ডাকতাম, মামা। তিনি আমাকে বললেন, ‘শোনেন, আমি যেভাবে বলব, সেভাবে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান হবে। এ বাড়ির ছাদে হবে গায়েহলুদ। আলপনা করলে করতে পারেন। আমি একটা নবাববাড়ির জলচৌকি এনে দেব। পুরোটা রুপার কারুকাজ করা। সেটাতে আপনি বসবেন।’ এটা আমার কাছে খুব ভালো লেগেছিল।

জরির ওড়না আর টিকলি মাথায় বিয়ের সাজে আবিদা সুলতানা

আবিদা সুলতানা ও রফিকুল আলমের বিয়ে হয় ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে। পরদিনই হয় বউভাত। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে একটি মাঠ ছিল, সেই মাঠে। বিয়ে ও বউভাত দুই অনুষ্ঠানেই এসেছিলেন ওই সময়ের সংগীতাঙ্গনের বিখ্যাত মানুষেরা। সুরকার আবদুল আহাদ, শিল্পী সমর দাস, এম এ হামিদ, নীনা হামিদ, সৈয়দ আব্দুল হাদী, ফেরদৌসী রহমান, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, নিলুফার ইয়াসমীন, ওস্তাদ নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী, আলাউদ্দিন আলী, সুবীর নন্দী,সাবিনা ইয়াসমীন, পরিচালক দীলিপ বিশ্বাসসহ আরও অনেকে।
বিয়ের দিন দুপুরে বর যথাসময়ে হাজির। কিন্তু কনের দেখা নেই। কনে এলেন দেড় ঘণ্টা পর।
রফিকুল আলম: একটা লাল গাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো হলো। গাড়িটি জামিল ভাইয়ের। সেই গাড়িতে চড়ে আমরা পৌঁছে গেলাম অফিসার্স ক্লাবে। আমাদের চিন্তা ছিল মেয়েপক্ষকে বিপদে ফেলা যাবে না। তাই সময়মতো গিয়ে দেখি, গেট ধরার কেউ নেই।       

আবিদা সুলতানা: আমি সাজতে গিয়েছিলাম। ওই সময়ে লিভিং ডল নামে একটা পারলার ছিল নয়াপল্টনে, সেখানে। সাজতে গিয়ে দেরি তো হলোই, আরও দেরি হলো বিয়ের শাড়ি পরতে গিয়ে। কারণ, শাড়িটা ছিল যে আলমরাতে, সেই আলমিরা খুলতে গিয়ে চাবি ভেঙে গেল। কী যে বিচ্ছিরি অবস্থা হলো।

সংগীত দম্পতি আবিদা সুলতানা–রফিকুল আলম বিবাহিত জীবনের ৪৬ বছর কাটিয়েছেন এক ছাদের নিচে। গেয়েছেন অনেক গান। কিন্তু দুজনার দ্বৈত কণ্ঠে গাওয়া একটি গান তাঁদের বন্ধনকে চিরকালের করে রেখেছে। যে গানটি ছিল দুজনের জন্য বিয়ের উপহার।

রফিকুল আলম: বিয়েতে যাঁরা এসেছিলেন, সবাই বিভিন্ন উপহার দিয়েছিলেন। এর মধ্যে সংগীত পরিচালক সত্য সাহা বউভাতে এসে খেয়ে বিদায় নেওয়ার সময় আমাদের বললেন, ‘তোদের বিয়ের গিফটটা পরে দেব। আর এমন গিফট দেব, যা সারা জীবন থেকে যাবে।’ মাস পাঁচেক পর সত্যদা ফোন করে বললেন, ‘তোরা দুজনই একটু শ্রুতি স্টুডিওতে আয়।’ পরদিন আমরা গেলাম স্টুডিওতে। দাদা বললেন, ‘তোদের জন্য একটা গান করেছি। আয় গানটা তুলে নে। এটাই তোদের বিয়ের গিফট।’ আমরা পেলাম অসম্ভব সুন্দর একটি দ্বৈত গান। সারা জীবনের গান। লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার ভাই।
উজানভাটি ছবির সেই গান এখনো মানুষের মুখে মুখে।  
‘এক নদীরই উজানভাটির আমরা দুটি ধারা
এক আকাশে জ্বলে ওঠা আমরা দুটি তারা
তুমি আমার আমি তোমার
প্রেমে পাগলপারা, প্রেমে পাগলপারা...