সম্মাননার অর্থে কুড়িগ্রামের এই শিক্ষক দিয়েছেন ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’

‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’ পেয়েছিলেন লালমনিরহাট সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তৌহিদ-উল ইসলাম। সম্মাননা হিসেবে পাওয়া অর্থ দিয়ে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে সেই জাদুঘর দেখে এসেছেন সফি খান

জাদুঘরের প্রতিটি গ্যালারিতে কবি-লেখকদের তথ্যসংবলিত ছবি আছে

কুড়িগ্রাম শহর থেকে বড়ভিটা মাত্র ২০ কিলোমিটার। মাঝে ধরলা নদী, চর, তারপর আঁকাবাঁকা মেঠো পথ। সেই পথ ধরেই নিরিবিলি, সবুজ গ্রামটিতে পৌঁছাই। পথের পাশেই আধপাকা একটি টিনশেড বাড়ি দেখিয়ে একজন জানান, ওটাই তৌহিদ-উল ইসলামের বাড়ি। আরেকটু এগোতেই দেখি বাড়িটার সামনের সড়কে আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছেন তিনি। কুশল বিনিময়ের পর বাড়ির পশ্চিম পাশে ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’-এ নিয়ে গেলেন।

বাড়ির পাশে আগেই একটি পাঠাগার গড়েছেন তৌহিদ। একটি স্কুলও আছে। দীর্ঘদিন থেকে ভাবছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে একটি জাদুঘর গড়বেন। কিন্তু এ জন্য তো টাকা লাগবে! সে টাকা কোথায় পাবেন! ২০২২ সালে ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা’য় ‘সেরা শিক্ষক’ হিসেবে ২ লাখ টাকা পেলেন। আর দেরি করলেন না, সেই টাকায় স্বপ্নের জাদুঘর গড়ার কাজে হাত লাগালেন তৌহিদ-উল ইসলাম।

বাড়ির পাশে আধা পাকা টিনশেড ঘর উঠল। সেটাই এখন জাদুঘর। বিভিন্ন জায়গা থেকে পুরোনো পত্রিকা, ছবি, বই সংগ্রহ করে গত ২৭ ডিসেম্বর জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক।

তৌহিদ-উল ইসলাম নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ‘বঙ্গভাষা লেখক জাদুঘর’

জাদুঘরের ভেতরে পাঁচটি গ্যালারি। প্রতিটিতে ৪০ জন কবি-লেখকের তথ্যসংবলিত ২০০ বাঁধাই ছবি। দেয়ালে লাগানো ছবিগুলোর নিচেই রয়েছে লেখক পরিচিতি। তাকে তাকে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের দুর্লভ সব পত্রপত্রিকা। এর মধ্যে আছে ১৪০ বছর আগের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত বঙ্গদর্শন, ১১০ বছর আগের প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত সবুজ পত্র, মোহাম্মদ আকরাম খাঁ সম্পাদিত ১৯৩৬ সালের মাসিক মোহাম্মদী, সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ১৯৬১ সালের সমকাল-এর রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী সংখ্যা। জাদুঘরে পূবালী, বেগম, উল্টোরথ, সচিত্র সন্ধানী, সন্দেশ, জলসাসহ বাংলা ভাষায় প্রকাশিত অনেক মাসিক ও সাপ্তাহিক সাময়িকী আর পত্রিকা রয়েছে।

জাদুঘর নিয়ে স্বপ্ন

জাদুঘর প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে বই আর পত্রপত্রিকা সংগ্রহ করতেন বাংলার শিক্ষক তৌহিদ-উল ইসলাম। পুরোনো পত্রপত্রিকা ও বইয়ের হদিস পেলেই কিনে ফেলতেন। এখনো সে কাজই করে যাচ্ছেন। জানালেন, মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনাসমৃদ্ধ পত্রিকা, প্রখ্যাত লেখকের বইয়ের দুর্লভ কপি সংগ্রহে গুরুত্ব দেন বেশি। এসব সাময়িকীর কোনো কোনোটি ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকাতেও কিনেছেন।

জাদুঘর যত বড় হচ্ছে তৌহিদ-উল ইসলামের স্বপ্নও তত বড় হচ্ছে। বাড়ির সামনেই পাঠাগারের পাশে যে ১০ শতক জমি রয়েছে, জাদুঘরের নামে শিগগিরই তা দান করবেন। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে জাদুঘরের দ্বিতল ভবন করার ইচ্ছা আছে।

তৌহিদ-উল ইসলাম বলছিলেন, ‘৬ বছর পর চাকরি থেকে অবসরে যাব। অবসর ভাতায় জাদুঘরের সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ করব। আমার অবর্তমানে জাদুঘরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সংগঠক সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগ নেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’