আপনিও কি ‘মাঙ্কি মাইন্ড’–এর অধিকারী? মিলিয়ে নিন বৈশিষ্ট্যগুলো

মাঙ্কি মাইন্ডরা সবসময় চাপা উত্তেজনা, অস্থিরতায় ভোগেন
ছবি: পেক্সেলস ডটকম

শিরোনাম পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন ‘মাঙ্কি মাইন্ড’ বিষয়টা আবার কী? মানুষের কেন বানরের মন হতে যাবে?

চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন। বানর কী করে? এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে বেড়ায়। দোল খায়। সে রকম একটা বানর দেখতে আপনার ভালোই লাগে। তবে আপনার মনের স্বভাবের সঙ্গেও যদি বানরের কর্মকাণ্ডের মিল থাকে, তাহলে অসুবিধাই বটে!

কেননা এর মানে হচ্ছে আপনি কোনো কিছুতেই মনোযোগ ধরে রাখতে পারেন না। আপনার মনের কোনো বিশ্রাম নেই। কোনো কিছুতেই থিতু হতে পারেন না। কেননা মাঙ্কি মাইন্ডরা ক্রমাগত অস্থিরতায় ভোগেন। একবার এটা চায় তো একবার ওটা। কিছুতেই মন শান্ত, সন্তুষ্ট হতে চায় না। এ রকম স্বভাবের কাউকে না কাউকে আপনি চেনেন। কেননা আমাদের অনেকের ভেতরেই একটা মাঙ্কি মাইন্ড রয়েছে। জেনে নেওয়া যাক, মাঙ্কি মাইন্ডের ৫ বৈশিষ্ট্য।

মনে হলো ফোনটা একটু চেক করি। এরপর রিলস দেখতে বসে গেলেন। অতঃপর জীবন থেকে হারিয়ে গেল এক ঘণ্টা (প্রতীকী ছবি)

১. চিন্তাভাবনাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে

এই মুহূর্তে আপনি ভাবছেন, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার সময়টা এসেই গেল। পরের মুহূর্তে মনে হলো, খিদে পেয়েছে। ফ্রিজ খুলতে না খুলতেই মনে পড়ল নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘সিটিআরএল’—এখনো দেখা হয়নি। এরপরই কোনো একটা কিছু মনে করে উদাস হয়ে গেলেন। আপনারও কি এমন হয়? অভিনন্দন! আপনি মাঙ্কি মাইন্ডের অধিকারী!
এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন। কোনো একটা কিছুর দিকে একটানা ১০ সেকেন্ড, ৩০ সেকেন্ড তাকিয়ে থাকার ব্যায়ামও করতে পারেন।

২. একটার পর একটা কাজ করতে থাকা, করতেই থাকা

আপনি কি সারা দিনে বিশ্রাম নেওয়ার কথা ভাবেন-ই না? একটার পর একটা কাজ করতেই থাকেন? শারীরিক বা মানসিক পরিশ্রমের কাজ একটা না একটা লেগেই থাকে? সব সময় নতুন কিছু করতে চান। নতুন কিছু কিনতে চান। একটা কাজ শেষ করেও আপনি তৃপ্তি পান না। সঙ্গে সঙ্গে নতুন কোনো কাজে নতুন কোনো প্রজেক্টে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিরতিহীনভাবে এটার পর ওটা, ওটার পর সেটা করতেই থাকেন। আসলে আপনি বিশ্রাম নেওয়াটাকেই প্রাধান্য দেন না। সারা দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করতেই থাকেন। (নিজের সঙ্গে না, বরং বসের সঙ্গে মিল খুঁজে পাচ্ছেন? হতেই পারে…) এটাও মাঙ্কি মাইন্ডের আরেকটা বৈশিষ্ট্য।

প্রতি ৫০ মিনিট পর পর ১০ মিনিটের বিরতি নিন। একটা কাজ শেষ করে নতুন কাজ ধরার আগে ৩০ মিনিটের বিরতি নিন। প্রকৃতির সবুজের দিকে তাকান। চোখ আর মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন।  

৩. মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা

মনে করুন আপনি পড়তে বসেছেন। মনে হলো ফোনটা একটু চেক করি। এরপর রিলস দেখতে বসে গেলেন। অতঃপর জীবন থেকে হারিয়ে গেল এক ঘণ্টা। অথবা কোনো একটা কাজে বসেছেন। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন। খুলে গেল স্মৃতির দুয়ার। এটা–সেটা ভাবতে ভাবতে পেরিয়ে গেল অনেকটা সময়। কোনো কাজই সময়মতো শেষ করতে না পারা মাঙ্কি মাইন্ডের আরেকটা বৈশিষ্ট্য।

প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে লম্বা শ্বাস নিন। ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এভাবে ৮–১০ বার করুন। রাতে ঘুমানোর আগেও এভাবে ব্রিদিং প্র্যাকটিস করতে পারেন। ধীরে ধীরে নিজের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনুন। একটা কাজ শেষ না করে অন্য কোনো দিকে মন দেবেন না।

৪. গড়িমসি

আলসেমি হলো মাঙ্কি মাইন্ডের সেরা বন্ধু! একটা কাজে বসার আগে মনে হলো একটু চা নিয়ে বসি। এরপর চা বানাতে বানাতে মনে হলো বান্ধবী বিয়েতে যাবে কি না, ফোনকলটা সেরে ফেলি। ফোন রেখে মনে হলো, বিয়ের দাওয়াতে কী পরব, ড্রেসটা ঠিক আছে কি না, একটু দেখি। আলমারি খুলতেই হাত চলে গেল জুয়েলারি বক্সের দিকে। যাহ, দুপুর গড়িয়ে গেল। এভাবে কাজটাই ধরা হলো না আর! কাজের কাজ বাদে আর সবই করা মাঙ্কি মাইন্ডের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

ঘুম থেকে উঠে ঠিক করবেন, আজকের দিনের সবচেয়ে কঠিন কাজ কোনটা। সেটা সবার আগে করবেন। চা-টা নাহয় তার পরেই খাবেন! দিনের কাজের তালিকা করে করে কাজ করুন।

‘লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট’ মাঙ্কি মাইন্ডদের রাতে সহজে ঘুম আসে না (প্রতীকী ছবি)

৫. ঘুমের রুটিনের দফারফা

‘লাস্ট বাট নট দ্য লিস্ট’ মাঙ্কি মাইন্ডদের রাতে সহজে ঘুম আসে না।
আজ ঘুমাতে গিয়েছেন ভোর চারটায়। গতকাল ঘুমিয়েছেন রাত দুইটায়। আর গত পরশু দিন তো ঘুমই আসেনি! একদিন হয়তো দুপুরে খেয়েদেয়ে একটা ভাতঘুম দিলেন। রাতে আর ঘুম এল না। রাতের বেলা সবাই ঘুমিয়ে যাওয়ার পরও তাদের নানা 'গুরুত্বপূর্ণ' কাজের কথা মনে পড়ে যায়। আর সেটা প্রায় প্রতি রাতেই ঘটে। একদিন হয়তো ফোনে কথা বলতে বলতেই রাত ১২টা। অন্যদিন পপকর্ন বা ফ্রেঞ্চফ্রাই নিয়ে সিনেমা দেখতে বসে গেল। পরদিন মনে পড়ল ওয়ার্ডরোব গোছানোর কথা। রিলস দেখতে দেখতে স্ক্রল করতে করতে অনেকের ঘুমের বারোটা। অনেকের নানা চিন্তায় ঘুম আসে না। এককথায় মাঙ্কি মাইন্ডরা রাতে সহজে ঘুমাতে পারেন না।

মনে রাখতে হবে, রাতের ঘুম রাতেই ঘুমাতে হবে। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে বিছানায় যান। আর সকালে নির্দিষ্ট সময়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ুন। প্রথম কয়েক দিন একটু অসুবিধা হতে পারে। তবে কিছুদিনের ভেতর ঘুমের রুটিন ঠিক হয়ে যাবে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া