প্রতিটি বয়সের মানুষেরই নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে ভয়, উদ্বেগ কাজ করে। হয়তো একেকজনের ভয়ের কারণ ভিন্ন। কিন্তু এই ভয় পাওয়ার ফলে ব্যক্তির ওপর যে মানসিক এমনকি শারীরিক প্রভাব পড়ে, সেসবের প্রতিটিই নেতিবাচক। কিন্তু ভয় নিয়ন্ত্রণ বা কাটিয়ে ওঠা সব সময় সহজ হয়ে ওঠে না। তাই জেনে নেওয়া প্রয়োজন কীভাবে আপনি এই আবেগকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, ভীতি স্বাভাবিকভাবেই মানুষের একটি আবেগ। পুরোটাই ঘটে আমাদের মস্তিষ্কে এবং একেবারে অসচেতন প্রক্রিয়ায়। লো রোড এবং হাই রোড—এই দুটি প্রক্রিয়ায় ভীতির আবেগটি কাজ করে। যেমন ধরুন, আপনার ঘরের দরজাটা আপনাআপনি শব্দ করে উঠল আর অমনি আপনি ভয় পেয়ে গেলেন। এই যে হুট করেই ভয় পাওয়া, এটিই আপনার লো রোড। আর আপনি যখন যুক্তি দিয়ে চিন্তা করবেন, না দরজাটি বাতাসের কারণে শব্দ করেছে, তখন সেটি হবে হাই রোড। কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রে ভীতির মুহূর্তে এই লো রোডই কাজ করে। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু অবশ্যই অতিরিক্ত নয়। সেটা যেকোনো আবেগের ক্ষেত্রেও। রাগ কিংবা ভালো লাগা এই দুটিও যখন আমাদের মধ্যে বেশি কাজ করে, তখন বিবেক লোপ পায়।
অনেকের হৃদরোগসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকে। অনেকেই আবার দুর্বল চিত্তের হন। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভীতি বিপজ্জনক হতে পারে।
এমনও দেখা যায় যে ব্যক্তি হয়তো জীবনের কোনো একটি পর্যায়ে ভয় পেয়েছে, সেটা হতে পারে পড়াশোনা বা কাজের চাপ কিংবা কিছু দেখার জন্যও। সেই ভীতি যদি কাটিয়ে ওঠা না যায়, তাহলে ব্যক্তির ওপর নেতিবাচক একটা প্রভাব থেকেই যাবে, যা তার পরবর্তী জীবনে আবার দেখা দিতে পারে।
কোনো কিছু স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার মানসিকতাই নষ্ট হতে পারে। যেমন পরীক্ষার আগের রাতে অনেক শিক্ষার্থীই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এটাও কিন্তু একধরনের ভীতি। এই যে ‘আমাকে এক রাতে এত কিছু পড়তে হবে’ কিংবা ‘ভালো ফল করতে হবে’— এসব মানুষের মস্তিষ্কে একটি প্রভাব ফেলে। ফলে পরবর্তী জীবনে যেকোনো পরীক্ষার মুখোমুখিই সে হতে চাইবে না। যার ফলে সে পিছিয়ে পড়তে পারে।
সারা দিন যদি আপনি চিন্তাই করে যান, তাহলে সেটি কিন্তু আপনার মানসিক শান্তি নষ্ট করবে। শারীরিক যে প্রতিরোধক্ষমতা সেটিও কমে যাবে আপনার অতিরিক্ত ভীতির কারণে। এ ছাড়া আপনার হজমশক্তি, মাথার যেকোনো অংশে ব্যথা কিংবা উচ্চ রক্তচাপও দেখা দিতে পারে। সঙ্গে আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে, অনেক আগের কোনো ঘটনা আপনি সহজেই ভুলে যেতে পারেন।
পরিস্থিতি মোকাবিলা করুন: আপনার যদি শারীরিক কোনো অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ হয়ে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। তেমনিভাবে যদি ঘরের নিরাপত্তা কিংবা যেকোনো কিছু নিয়েই চিন্তা হয়ে থাকে, তাহলে সেটি যাচাই করে দেখুন। আপনার ভয় কতটা যৌক্তিক। পরবর্তী সময়ে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
অযথা চিন্তা বা উদ্বেগ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন: আপনি পরীক্ষা বা কর্মজীবনে সাফল্য পাবেন কি পাবেন না, এ নিয়ে বর্তমানে চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। পরিবর্তে আপনি পরিকল্পনা গুছিয়ে নিন। একটির পরিবর্তে আরেকটি বিকল্প পরিকল্পনা করুন। অতিরিক্ত চিন্তা আপনার মধ্যে ভীতি ছাড়া আর কিছুই তৈরি করবে না।
ভয় চেপে না রাখা: অনেকেই ভয়কে তেমন গুরুত্ব দেন না। কিংবা চেপে রাখেন। এর ফলে একাকিত্বের মুহূর্তে সেটি আবারও জেঁকে বসতে পারে। তাই চেষ্টা করুন নির্দিষ্ট ভীতি থেকে আপনার মস্তিষ্ককে কদিন বিশ্রাম দিতে। যেমন আপনি একা ঘুমাতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে কদিন আপনি এমনটি করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো বন্ধুকে খুলে বলতে পারেন। এরপর দেখুন আপনার ভীতি কমেছে কি না।
কাউকে খুলে বলা: আপনার পরিবার বা বন্ধু কাউকে খুলে বলুন। বলার সময় আপনি নিজে যেমন হালকা বোধ করবেন তেমনি অনেক কিছুই স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে।
যেসব জিনিসে ভয় পাচ্ছেন, সেসব থেকে বিরত থাকা: পরীক্ষার আগেই পড়া গুছিয়ে রাখুন, যাতে শেষ মুহূর্তে আপনার মানসিক চাপ না পড়ে। একইভাবে যদি ভয়ের কিছু দেখে আপনি ঘুমাতে না পারেন, তাহলে সেগুলো থেকে বিরত থাকুন।
সাধারণ বা যোগ ব্যায়াম করা: এতে পেশি এবং আপনার মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। যার ফলে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন: কোনো কারণে খুব ভীত হয়ে পড়লে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করুন। সঙ্গে পছন্দের লেখকের বই, হাঁটাচলা বা পছন্দের কোনো শখের কাজ করতে পারেন।
সূত্র: ওয়েবএমডি