গত ২৮ অক্টোবর ওরিয়ন নেবুলা বা কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন জুবায়ের কেওলিন। ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার পর ভাইরাল হয়ে যায়। রাজধানীতে তাঁর বাসার ছাদ থেকে তোলা সেই ছবির গল্প শোনালেন।
আমার বয়স তখন ১২ বছর। সেই দুরন্তপনার বয়সে চশমার কাচ আর কার্ডবোর্ড টিউব দিয়ে একটা টেলিস্কোপ বানিয়েছিলাম। এসব করতে খুবই ভালো লাগত। আরও নানাবিধ বিষয়ে আগ্রহ ছিল। কোনোটা নিয়েই পরে লেগে থাকা হয়নি।
২০১৮ সালের দিকে পুরোনো ভূত আবার মাথায় চেপে বসল। ভাবতে লাগলাম, কীভাবে একটা ভালো টেলিস্কোপ বানানো যায়। একটু জানার চেষ্টা করে দেখলাম, অনেক আলোকচিত্রী আছেন, যাঁরা টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বাড়িতে বসে মহাকাশের ছবি তোলেন।
আমার আগ্রহের পারদ বৃদ্ধি পেল, দারুণ উৎসাহ পেলাম। মনে হতে থাকল—আরে, আমার তো শুধু টেলিস্কোপ বানানোর ইচ্ছা ছিল। এটা দিয়ে তো দেখি ফটোগ্রাফিও করে। একটা ফটোগ্রাফিক টেলিস্কোপ বানাতে হবে তাহলে।
২০১৯ সালের শেষ দিকে প্রথম টেলিস্কোপ বানালাম। তখন থেকেই মহাকাশের ছবি তুলছি। প্রথমবার তো শুধু ট্রাইপডের ওপর ক্যামেরা রেখে তুললাম। সেবার ওরিয়ন নেবুলার ছোট একটা অংশ ছবিতে পেয়েছিলাম। পরে আরেকটু ভালো ছবি পেতে লাগলাম। মানে প্রত্যেক বছর এই ছবিতে উন্নতি করছি।
গত ২৮ অক্টোবর ছবি তোলার আগে আমি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছিলাম—আবহাওয়া কেমন, মেঘ কোন দিকে যাচ্ছে। যখন দেখলাম আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা আছে, প্রয়োজনীয় উপকরণ (যেমন ৮-১০ কেজি ওজনের টেলিস্কোপ, ১৫-২০ কেজি ওজনের টেলিস্কোপ মাউন্ট ট্র্যাকার) নিয়ে বাসার ছাদে চলে গেলাম। ঢাকার বসুন্ধরায় আমি যে বাসায় থাকি, সেটা ১৩ তলা একটি ভবন। এত জিনিস ছাদে নেওয়াটাও খাটুনির কাজ। এরপর সেটআপ করতে করতে আরও ঘণ্টাখানেক চলে গেল। রাত ১০টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ছাদে কাটালাম। এ সময় সাড়ে চার ঘণ্টার এক্সপোজার শট নিয়েছি।
এ কাজে কিউএইচওয়াই ২৬৮সি মডেলের ক্যামেরা, ৯০০ মিলিমিটার (এফ ৮ দশমিক ৮ ফোকাল লেন্থের) টেলিস্কোপ, টেলিস্কোপ ট্র্যাকিং মাউন্ট ও একটি ছোট্ট কম্পিউটার ব্যবহার করেছি। ৯০০ মিলিমিটারের টেলিস্কোপটি আমার ডিজাইন করা। আর আলোক দূষণ কমাতে ন্যারোব্যান্ড ফিল্টার ব্যবহার করেছি।
পেশায় আমি একজন অ্যানিমেটর ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। শখের বশেই মহাকাশের ছবি তুলি। বিভিন্ন সময় তোলা ছবিগুলো নিয়ে প্রদর্শনীর ইচ্ছা আছে।
অনুলিখন: তানভীর রহমান