বাসাবাড়িতে প্রাণী পুষে কী লাভ? এ প্রশ্ন অনেকেই করে থাকে। এককথায় বলতেই পারি, সবকিছু কি আমরা শুধু লাভের জন্যই করি? তারপরও জানার জন্য প্রশ্নটি আমরা একজন চিকিৎসককে করেছিলাম। ‘পোষা প্রাণী আমাদের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক। শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পোষা প্রাণীর ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে,’ বলেন ধানমন্ডির পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন কনসালট্যান্ট সাইফ হোসেন খান। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে প্রাণী পোষার দারুণ ইতিবাচক কিছু প্রভাবের কথা জানালেন এই চিকিৎসক। চলুন জেনে নিই প্রাণী পোষার তেমন কিছু লাভের কথা।
শরীর থাকে ‘ফিট’
পোষা প্রাণী তো কেবল শখের একটা ‘জিনিস’ বা ‘খেলনা’ নয়, প্রাণী পোষার অর্থ হলো জলজ্যান্ত একখানা প্রাণের দায়িত্ব গ্রহণ। ওকে সময়মতো খাবার দিতে হবে, ‘সময়’ দিতে হবে, এমনকি ওর মলমূত্রও পরিষ্কার করে দিতে হবে। রোজকার এই দেখভালের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে আপনি শারীরিকভাবে ‘ফিট’ থাকবেন। বিড়াল-কুকুরের মতো প্রাণীর সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করে খেলাধুলার সুযোগও আছে। বিশেষত কুকুর থাকলে তো আপনার ওকে নিয়ে হাঁটতে যেতেই হবে রোজ। এভাবে আপনার শরীরের পেশিগুলোও থাকবে সচল। হাঁটাহাঁটি, দৌড়ঝাঁপে আপনার কায়িক পরিশ্রম হবে। বেশ খানিকটা ক্যালরি পোড়াতে পারবেন। আপনার পক্ষে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগ প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে আপনার এই রোজকার কার্যকলাপ। আর রাজ্যের কাজ সেরে ক্লান্ত শরীরে আপনি যখন ঘরে ফেরেন, তখন আপনার অপেক্ষায় থাকা পোষা প্রাণীটি যদি খুশিতে ডগমগ হয়ে আপনার দিকে ছুটে আসে, আপনি অবশ্যই ক্লান্তিও কাটিয়ে উঠতে পারবেন সহজে।
কমায় মানসিক চাপ ও হতাশা
জীবনের নানান বাঁকে নানান ঘটনার কারণে আমাদের মনমেজাজ বিগড়ে গিয়ে থাকে। বহুবিধ মানসিক চাপে পিষ্ট হই আমরা। পোষা প্রাণীর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত কিন্তু সব রকম মানসিক চাপ সামলাতে সহায়ক। বিগড়ে যাওয়া মনমেজাজও শান্ত করে পোষ্যরা। হতাশ হয়ে পড়া মানুষটিও নতুনভাবে সবকিছু সামলে নেওয়ার মতো মনের জোর ফিরে পান। পোষা প্রাণীর আদুরে পরশ মানুষের জন্য ইতিবাচক।
কমে একাকিত্বের ঝুঁকি
পরিবারে সবাই আছেন, তবু কেউ কেউ কিন্তু ‘একলা’। একাকিত্ব মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। একসময় এই ‘একলা’ মানুষদের সঙ্গী হয়ে ওঠে বিষণ্নতা। অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়তে পারে। অথচ পোষা প্রাণী একজন মানুষকে ‘একলা’ হয়ে পড়তে দেয় না।
জীবনে থাকে রুটিন
পোষা প্রাণী থাকলে জীবনের ছন্দপতনের ঝুঁকি কমে যায়। পরিস্থিতি যেমনই হোক, জীবন চলে একটা নির্দিষ্ট ধারায়। ফলে রাতে আপনার ভালো ঘুম হওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। আবার চাইলেও কিন্তু অতিরিক্ত বেলা অবধি ঘুমাতে পারবেন না। কারণ, একটা প্রাণী আপনার ওপর নির্ভরশীল, তার দেখভালের জন্য আপনাকে ঠিক সময়ে উঠতেই হবে। আরও একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন, আপনার বাড়িতে আজ ঝগড়া হয়েছে। এর পর থেকে দুপক্ষের কথা বন্ধ। কেউই হয়তো ‘ইগো’ ভেঙে কথা বলতে এগোতে পারছেন না। এমন অবস্থাতেও কিন্তু পোষা প্রাণীর সঙ্গে কথোপকথনে চলতে পারে দুপক্ষের পরোক্ষ আলাপ। এভাবে দুপক্ষই সহজ হয়ে আসতে পারেন।
শিশুর সামাজিক বিকাশ
যেসব বাড়িতে পোষা প্রাণী থাকে, সেসব বাড়ির শিশুরা সামাজিকভাবে দক্ষ হয়ে গড়ে ওঠে। পোষা প্রাণীর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ায় শিশুর কোমল মনে গভীর ছাপ পড়ে। তার মধ্যে বিকশিত হয় দয়া, পরোপকার ও মহত্ত্বের মতো চমৎকার গুণ।