নতুন পাঠ্যক্রমটি আশাজাগানিয়া মনে হয়েছে

বছরের শুরু থেকেই স্কুলের পাঠ্যবই নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। কদিন আগেই যাঁরা স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছেন, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, তাঁদের কী অভিমত? কেমন হওয়া উচিত স্কুলের পাঠ্যবইগুলো? নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন তাঁদের অভিমত। এখানে পড়ুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মোহাইমিনুল হক–এর লেখা।

মোহাইমিনুল হক

পাঠ্যবই নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু উপলব্ধি আছে। যেমন, গণিতের ক্ষেত্রে শতকরা, সুদ কষার অঙ্কগুলো ষষ্ঠ শ্রেণিতেই করানো হয়। কিন্তু এসব বিষয় সেই বয়সের শিক্ষার্থীর কাছে কতটা বোধগম্য, তা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।

গণিত, বিজ্ঞান, ইংরেজি ব্যাকরণের এমন অনেক বিষয় আমি কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পুরোপুরি বুঝতে পেরেছি। হয়তো স্কুলজীবনে যেভাবে শেখানো হয়েছে, সেটা আমার জন্য যথাযথ ছিল না। যদি মেনেও নিই যে শতকরা, সুদ কষার অঙ্ক শেখার জন্য ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণিই উপযুক্ত সময়, তবু এ ক্ষেত্রে আপনাকে সামষ্টিকভাবে চিন্তা করতে হবে। গ্রামে–গঞ্জে যেসব শিক্ষার্থী আছে, তারা কি প্রকৃতই শিক্ষাটি গ্রহণ করতে পারবে বা গ্রহণ করার সুযোগ কি তাদের আছে?

সৃজনশীল পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হই ষষ্ঠ শ্রেণিতে। আমাদের পাঠ্যবইগুলো এমনভাবে তৈরি ছিল যে সত্যি বলতে প্রচলিত গাইড বই না থাকলে আদতে পাস করা সম্ভব হতো না। তখন না বুঝেই মুখস্থ করতাম। কিন্তু সৃজনশীল যুগ পার করে এসে বহুদিন পর জেনেছি, ‘ক্রিয়েটিভ রাইটিং’ বলে একটা ব্যাপার আছে। এখন আফসোস হয়। অনেক প্রশ্নের উত্তর গাইড থেকে হুবহু মুখস্থ তুলে না দিয়ে যদি নিজের অনুধাবন থেকে লিখতাম, তাহলে হয়তো শিক্ষকেরা নতুন কিছু পেতেন। আমিও নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারতাম।

সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি প্রচলিত পাঠ্যবইগুলোর কারণেই। সে জায়গা থেকে কিছু বিতর্ক থাকলেও নতুন পাঠ্যক্রমটি আমার কাছে যথেষ্ট আশাজাগানিয়া মনে হয়েছে। সহজবোধ্য ছবি, আনন্দময় কাজের মাধ্যমে শিখন, ছোট ছোট কাজ ইত্যাদি শিক্ষার্থীকে মৌলিক দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। সব শেষে বলতে চাই, আমাদের আসলে নতুনত্বকে বরণ করে নেওয়া উচিত। কিছু ভুল–ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশনা এসেছে। সংশোধন হয়ে যাওয়ার পর আশা করি আমরা একটা সুন্দর পাঠ্যপুস্তক পাব।