‘মজা করি’ উৎসব ঘুরে দেখছেন অতিথিরা
‘মজা করি’ উৎসব ঘুরে দেখছেন অতিথিরা

উৎসবের নাম ‘মজা করি’, চলছে কড়াইলে

কড়াইল সিটি অব কালচারে ৬ ডিসেম্বর শুরু হয়েছে ‘মজা করি’ ডিজাইন উৎসব। পাড়া ও জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ এর আয়োজক। চার দিনব্যাপী এই উৎসবের বাকি অংশের আয়োজন করা হবে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর।
রাজধানীর শ্রমজীবী মানুষের অন্যতম আবাস কড়াইল। কড়াইলের মানুষের সঙ্গে শহরবাসীর সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন তৈরির উদ্দেশ্যে তিন বছর ধরে কাজ করছে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গ্যেটে ইনস্টিটিউট ও স্থাপত্য ও নকশাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান পাড়া। উৎসবের প্রথম দিন কড়াইলের এরশাদ মাঠে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘মাচান’ নামে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গ্যেটে ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফ্র্যাংক ওয়ার্নার। কড়াইলের তরুণদের মানোন্নয়নে কাজ করবে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি। এর নামকরণও করেছেন কড়াইলের তরুণেরাই। কড়াইলবাসীর গল্প ও সংস্কৃতিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবে মাচান। এ ছাড়া কড়াইলের আশপাশের মোট ১০টি ভেন্যুতে আয়োজন করা হচ্ছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, ইনস্টলেশন, আলাপ, কর্মশালা, খেলা, প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।

পাড়ার চার দিনব্যাপী এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছে গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ এবং আলোকি। তাদের কার্যক্রমের প্রতিফলন হিসেবে এই সংগঠনগুলো যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন আলোচনা সভা ও কর্মশালায়। উৎসবের স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে আছে হাল ফ্যাশন ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিপ)।

কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল কড়াইলের শিশুরা

কড়াইলের এক পাশে গুলশান, আরেক পাশে বনানী। দুই অভিজাত এলাকার মাঝখানে থেকেও অনেকটা পিছিয়ে আছেন এ অঞ্চলের মানুষ। দেশের নানা প্রান্ত থেকে লোকজন এসে এখানে থাকেন। কড়াইলের মোশাররফ বাজারের পাঠশালা স্কুলে আয়োজিত হয় ‘প্রসঙ্গটা ঘরের’ শিরোনামের একটি প্রিন্ট ও বই বানানোর কর্মশালা। ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট ও প্রিন্টমেকার সুবর্ণা মোর্শেদা এবং আলোকচিত্রী মোহাম্মদ তাসাওয়ার ইসলামের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত এই কর্মশালায় স্থানীয় শিশুরা ‘ঘর’ শব্দটি বলতে কী বোঝে, তা নিয়ে ছবি এঁকেছে, গল্প লিখেছে। ঘর শব্দটির অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকম। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া আবু বকর এঁকেছে একটি খেলার মাঠ, তার কাছে খেলার মাঠই ঘর। বড় হয়ে ক্রিকেটার হতে চায় সে। এই শিশুদের প্রত্যেকের গল্প ও আঁকা নিয়ে তৈরি হবে বই, যা প্রদর্শিত হবে উৎসবে শেষ দুই দিন।

এরশাদ মাঠের পাশে একটি রিকশার গ্যারেজে ব্যবস্থা করা হয়েছিল চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর। সেখানে প্রদর্শিত হয়েছে বনসুন্দরী, শিল্পদূষণ, আমাদের শালবনসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রগুলো থেকে কড়াইলবাসী বিভিন্ন পরিবেশ ও সামাজিক বিষয়াবলি সম্পর্কে জানতে পারবেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল ক্রাফটস কাউন্সিল অব বাংলাদেশ আয়োজন করেছে একটি কারচুপি কর্মশালার। ৬ ডিসেম্বর শুরু হওয়া এই কর্মশালা চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

উৎসবে আয়োজকদের পাশাপাশি স্থানীয় তরুণ-যুবক, শিল্পী, সমাজকর্মী এবং বিভিন্ন বয়সের নাগরিকদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। এ উৎসবের মাধ্যমে স্থানীয় তরুণ ও শিশুরা তাদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর সুযোগ পাচ্ছে।
কড়াইল ও গুলশানকে আলাদা করেছে একটি লেক। এই লেকের পাড়ের দেয়ালটি রাঙানো হয়েছে নানা রঙে। এ ছাড়া লেকপাড়ে চলছে ‘কুকুরনামা’, ‘এক জোড়া জুতা’, ‘আমাকে থামানো যাবে না’ সহ বেশ কিছু প্রদর্শনী। নবনির্মিত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মাচানে ছিল নাচ–গানসহ বেশ কিছু সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। মাচানে স্বয়ম্ভূ ও বেতালের পরিবেশনা থাকবে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর।

ছবির প্রদর্শনী


ভবিষ্যতের ঢাকা বা কড়াইলের ল্যান্ডস্কেপ কেমন হবে, এই ভাবনাকে উপজীব্য করে আয়োজন করা হয়েছে একটি ডিজাইন প্রতিযোগিতা। প্রায় ১০০ জন স্থাপত্যকলার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন এই প্রতিযোগিতায়। এ ছাড়া কড়াইলকে চেনার এবং সেখানে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ‘ট্রেজার হান্ট’ নামে একটি চমৎকার খেলার আয়োজন করেছে ট্রাভেলার্স অব বাংলাদেশ এবং এসক্যাপেড টিম। কড়াইলজুড়ে নানা সূত্র (ক্লু), নির্ধারিত কাজ (টাস্ক) আর খেলাধুলায় ভরপুর এ প্রতিযোগিতার নিবন্ধন চলছে। প্রতিযোগিতাটি আয়োজিত হবে উৎসবের শেষ দিন—১৪ ডিসেম্বর।