‘ক্যাডেট কলেজ কমিউনিটির এত মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন, অবাক হয়েছি’

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২২ ফেব্রুয়ারি। ভালো ফলের জন্য অনুষ্ঠানে ৩৬ জন স্নাতককে ‘চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ এবং ২৯ জনকে ‘ভাইস চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল’ দেওয়া হয়েছে। শাহ মো. শামরির আল-আফ অবশ্য দুটি পদকই পেয়েছেন। স্নাতকে তাঁর সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩.৯৮ আর স্নাতকোত্তরে ৪-এ ৪। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফুয়াদ পাবলো

শাহ মো. শামরির আল-আফ

পদক পেয়ে কেমন লাগছে?

এত দিন দেখতাম, শুনতাম, অমুক ছাত্র বা ছাত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছেন। আমারও একটা সুপ্ত ইচ্ছা ছিল যে একদিন আমিও পাব। পদক গ্রহণের ছবি আর ভিডিওগুলো দেখে তাই খুব ভালো লাগছে। পরিচিত-অপরিচিত অনেকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে পড়েছি। ক্যাডেট কলেজ কমিউনিটির এত মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন, অবাক হয়েছি। আমার মা-বাবা সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। অনেকেই তাঁদের সাধুবাদ জানাচ্ছিলেন, এটা খুব ভালো লেগেছে।

ভালো ফল ধরে রাখার ক্ষেত্রে আপনার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল?

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আমার খুব পছন্দের বিষয়। তাই আমি খুব উৎসাহ নিয়েই পড়াশোনা করেছি। তবে আমার মূল চ্যালেঞ্জটা একাডেমিক নয়, শারীরিক। বিইউপিতে পড়াশোনা শুরুর আগে আমি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ৭৫ বিএমএ লং কোর্সে একজন অফিসার ক্যাডেট ছিলাম। সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সময় আঘাত পাওয়ায় আমার পক্ষে আর প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কোমর আর হাঁটুর তীব্র ব্যথার জন্য নিয়মিত ক্লাস করা আমার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। ক্লাসের মধ্যে কখনো কখনো দাঁড়িয়ে থাকতাম। পরীক্ষার হলেও সময় নষ্ট হতো। কারণ, একটানা বসে লিখতে পারতাম না। বিষয়টা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও খুব প্রভাব ফেলত।

পড়ালেখার ক্ষেত্রে কি কোনো বিশেষ কৌশল ছিল, যেটি অন্যদের চেয়ে আপনাকে এগিয়ে রেখেছে?

পড়ালেখার বিষয়ে আমার কোনো আহামরি কৌশল নেই। তবে সব সময়ই আমি অন্যদের তুলনায় ক্লাসে অনেক বেশি লিখতাম। ক্লাসে যা বলা হতো আর পর্দায় যা দেখানো হতো, সব টুকে নিতাম। ব্যথার জন্য ক্লাস করে বাসায় ফিরে খুব একটা পড়া হতো না। তবে শুয়ে–শুনে বিভিন্ন খবর পড়তাম, তথ্যচিত্র দেখতাম। এই অভ্যাস এখনো আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বেশ কিছু জটিল তত্ত্ব আছে। আমি সেগুলো খবরের বাস্তব উদাহরণের সঙ্গে মিলিয়ে পড়তাম। ফেসবুক, টুইটারে সব ধরনের সংবাদপত্রের পেজ অনুসরণ করতাম। এই অভ্যাসগুলো ক্লাসে কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বা পরীক্ষায় উত্তর লেখার সময় বেশ সাহায্য করত।

ক্যাম্পাসজীবন কেমন ছিল

আমি একটু অন্তর্মুখী। হইহুল্লোড়ের মধ্যে কখনোই থাকা হয়নি। কাছের কিছু বন্ধু ছিল, তাঁদের সঙ্গেই আড্ডা দিতাম। বিইউপি কুইজার্স ক্লাবের সঙ্গে লম্বা সময় জড়িত ছিলাম। খেলাধুলায় আগ্রহ ছিল অনেক, তবে সংগত কারণেই কখনো কোনো ইভেন্টে অংশগ্রহণ করা হয়ে ওঠেনি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এমন কোনো ঘটনা আছে, যা আজীবন মনে থাকবে?

অনেক ঘটনাই মনে দাগ কেটেছে। প্রথম ক্লাস, প্রথম প্রেজেন্টেশন দেওয়া, সবাই মিলে একসঙ্গে ছবি তোলা, পরীক্ষার আগে ক্যানটিনে বসে বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়া আর দ্রুত পুরো সিলেবাসে চোখ বোলানো, পিকনিকে যাওয়া, ক্যাম্পাসের বিড়াল-কুকুরগুলোর সঙ্গে খেলা, প্রতিবার সেমিস্টার ফাইনালের পরে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করা, নিজেরা বঙ্গবাজার গিয়ে জার্সি বানানো, কুইজার্স ক্লাবের হয়ে জাতীয় পর্যায়ের কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন, ক্লাসের প্রাণবন্ত বিতর্ক—বলে শেষ করা যাবে না।

এখন আপনি কী করছেন?

বিইউপিতেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছি। আমার মা-বাবাও শিক্ষক। তাই এই পেশার প্রতি আগে থেকেই আগ্রহ ছিল।

ভবিষ্যতে কী করতে চান?

উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। প্রথমে আরেকটা মাস্টার্স করব, তারপর পিএইচডি। কারণ, শিক্ষকতা পেশায় উৎকর্ষ সাধনের জন্য গবেষণার দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। তা ছাড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে ক্রমাগত মানোন্নয়ন না করলে ছিটকে পড়তে হবে, তাই কিছু সফটওয়্যারের দক্ষতাও আয়ত্ত করার পরিকল্পনা আছে।

আপনার দৃষ্টিতে বিইউপি কেন আলাদা

সবার প্রথমেই যে দিকটা উঠে আসে, তা হলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশন জট নেই। পাশাপাশি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বিইউপি ক্যাম্পাস ছাত্ররাজনীতি, রাজনৈতিক কোন্দল বা যেকোনো রকম হানাহানি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত। তা ছাড়া ক্যান্টনমেন্টের ভেতরে হওয়ায় এখানে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের অভিভাবকেরা নিশ্চিত থাকেন। শিক্ষকদের কথা না বললেই নয়। নিজে এখানে কর্মরত আছি বলে বলছি, এমন নয়; আমাদের শিক্ষকেরা অত্যন্ত মেধাবী ও কঠোর পরিশ্রমী। যত্নসহকারে পড়ানোর পাশাপাশি মেন্টর হিসেবেও শিক্ষার্থীদের অনেক সময় দেন।