দেশি কোন কোন ব্র্যান্ডের এসি বিদেশে রপ্তানি হবে জানেন?

দেশেই তৈরি হচ্ছে শতকরা ৯০ ভাগ এসি
ছবি: প্রথম আলো

দেশে একসময় এসির চাহিদার শতভাগ মেটানো হতো বিদেশ থেকে আমদানি করে। সেই চিত্র এখন বদলে গেছে। দেশের এসি বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা চলছে। দেশের বিভিন্ন এসি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলছেন, এখন স্থানীয় চাহিদার প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ এসি দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে। এর মধ্যে শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ সম্পূর্ণ দেশে উৎপাদিত হয়। বিদেশি যন্ত্রাংশ (মূলত কমপ্রেসর) এনে দেশে সংযোজন করে উৎপাদিত হয় প্রায় ৩০ ভাগের বেশি। আর অবশিষ্ট ১০ ভাগ আমদানি করা হয়। তবে দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান বিদেশে এসি রপ্তানির উদ্যোগও নিয়েছে।

দেশের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ওয়ালটনের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তানভীর রহমান বলেন, ২০১১-১২ অর্থবছর থেকে তাঁরা দেশেই এসির উৎপাদন শুরু করেন। তবে তাঁরা সংযোজন নয়, সম্পূর্ণ এসি দেশেই উৎপাদন করেন। তাঁদের উৎপাদিত এসিতে দেশের চাহিদার প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ পূরণ হয়ে থাকে। পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশেও কিছু এসি রপ্তানি করেছেন তাঁরা। ওয়ালটন, মার্সেল ও এনসিসি—এই তিন ব্র্যান্ডের এসি উৎপাদন করে ওয়ালটন।

এসিতে দেশের চাহিদার প্রায় শতকরা ৩৫ ভাগ পূরণ করে ওয়ালটন ব্র্যান্ড

শুধু এসি উৎপাদন করে থাকে এলিট হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু ১৯৯০ সালে। আগে তারা বিদেশ থেকে এসি আমদানি করে বিক্রি করত। প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নূর এ আলম বলেন, তাঁদের দুটি ব্র্যান্ড ‘এলিট এসি’ এবং ‘মিডিয়া এসি’। ২০১৪ সাল থেকে নিজেদের কারখানায় সম্পূর্ণ এসি তাঁরা উৎপাদন করছেন। তাঁরা এক থেকে পাঁচ টন পর্যন্ত স্প্লিট, উইনডো, সিলিংসহ বিভিন্ন ধরনের এসি তৈরি করেন। এ ছাড়া বড় অফিস বা কারখানায় কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রও তাঁরা তৈরি করেন। ক্রেতাদের জন্য তাঁদেরও রয়েছে গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টিসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা। তাঁদের উৎপাদিত এসি বিদেশেও রপ্তানি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।

নূর এ আলম বলেন, দেশে তৈরি এসি বিদেশে রপ্তানির ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এখন কেউ কেউ পরীক্ষামূলকভাবে হয়তো কিছু কিছু দেশে পাঠাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারি কিছু নীতিগত সুবিধার প্রয়োজন। যে ধরনের সুবিধা তৈরি পোশাকশিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যমান রয়েছে। যেমন বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা, ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা, কাঁচামালের জন্য শুল্কসুবিধা—এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। এসব নিয়ে আলোচনাও চলছে। এই সুবিধাগুলো পাওয়া গেলে বড় আকারের রপ্তানি শুরু হতে পারে।

কিনতে হবে ভালো ব্র্যান্ডের এসি

বিদেশে রপ্তানির উপযোগী এসির পাশাপাশি উৎপাদকেরা দেশের চাহিদা অনুসারে আরও উন্নত মানের এসি তৈরির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির এসির উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে এখন। এ ধরনের এসির দাম এখন তুলনামূলক একটু বেশি। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিক বিবেচনা করলে সার্বিক খরচ এতে কম। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় শতভাগ এসি ইনভার্টার প্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। তাঁরা চেষ্টা করছেন দামটা কমিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে আরও সহজলভ্য করে তোলার জন্য।

 কিছু বিদেশি উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের এই দেশে নিজস্ব বিপণনকারী (ডিলার) রয়েছে, তাঁদের মাধ্যমে বিদেশি এসি বিক্রি হয়। আর ছোটখাটো কিছু আমদানিকারক বিদেশ থেকে কিছু নামী ব্র্যান্ড বা চীন থেকে ব্যান্ডের নাম বা প্রতিষ্ঠানের নাম ছাড়া এসি আমদানি করে বিক্রি করছেন। তবে নাম পরিচয় ছাড়া এসব এসির মান বা স্থায়িত্বের কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। ফলে দেশে উৎপাদিত পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ ও আস্থা বেড়েছে। এর বাজারও ক্রমে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

ইলেকট্রনিক পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সকম ডিজিটালের হেড অব বিজনেস রিতেশ রঞ্জন প্রথম আলোকে জানান, দেশে এখন প্রতিবছর ঘরে বা অফিসে ব্যবহৃত হয় এমন এসির চাহিদা ৫ থেকে সাড়ে ৫ লাখ ইউনিট। প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২০ ভাগ হারে বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। অর্থাৎ গড়ে শতকরা ১৫ ভাগ বৃদ্ধি ধরলেও প্রতিবছর নতুন চাহিদা সৃষ্টি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার ইউনিট।