দিনের শুরুতে একটা কাজের লক্ষ্য নিয়ে অফিসে ঢুকেছিলেন, কিন্তু যতই দিন সামনে এগিয়েছে, ততই সেই লক্ষ্য থেকে একটু একটু করে বিচ্যূত হয়ে গেছেন। এমনটা নিশ্চয়ই হয়েছে আপনার। তাই দিন শেষে পেছন ফিরে তাকিয়ে হয়তো হাপিত্যেশও করেছেন আপনি—তেমন কিছুই তো করা হয়নি আজ! দিনের মাঝখানে কাজের উদ্যম বা উৎপাদনশীলতা হুট করে কমে যাওয়া বিরল কিছু নয়। কর্মব্যস্ত জীবনে সবাইকে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। তখন চাইলেও কাজ আগায় না, কোনো কিছুতেই দেওয়া যায় না মনোযোগ। তবে এসব চিন্তা সরিয়ে রেখে কর্মব্যস্ত দিনে নিজের উদ্যম বা উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন নিয়মমাফিক দিন পরিচালনা। ছোট কিছু পরামর্শ মেনে চললেই স্থবিরতা কাটিয়ে আপনার দিনটা হতে পারে কর্মব্যস্ত এবং আনন্দময়।
প্রতিদিন আপনি চাইলেও ১০টা কাজ করতে পারবেন না। বিশেষ করে যখন আপনি কাজ করতে পারছেন না। তাই ছোট ছোট করে কাজ শুরু করুন। ছোট ছোট খণ্ডে ভাগ করে নিলে আপনার জমে থাকা কাজ শেষ করতে বেগ পেতে হবে না। একই সঙ্গে আপনার মনোবল হবে চাঙা। অন্য দিকে বিশাল একটা লক্ষ্য স্থির করে তা শেষ করতে না পারলে শুধু কাজটা যে আটকে থাকবে, তা–ই নয়; কাজ করার ইচ্ছাশক্তিও কমে যাবে।
একটা কাজে মনোযোগ না বসলে অনেকেই ভাবেন মাল্টিটাস্ক করলে কাজ দ্রুত শেষ হবে। অর্থাৎ মাঝখানে আরও এক বা একাধিক কাজ করলে আখেরে লাভ হবে। তবে আপনি যখন একটা কাজেই মনোযোগ দিতে পারছেন না, তখন হাতে আরও কয়েকটা কাজ নেওয়া মানে উৎপাদনশীলতা আরও কমে যাওয়া। তখন কোনো কাজেই নিজের পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। বরং আপনার সমস্ত সময়, মনোযোগ ও শক্তি একটা কাজের ওপর দিন। এতে কাজটা দ্রুত শেষ হবে, পরবর্তী কাজের ওপর মনোযোগও দিতে পারবেন।
আজকাল এসব থেকে দূরে থাকুন বলাটা উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর মতো। বিশেষ করে যাদের কাজের একটা বিশাল অংশজুড়েই আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তবে কাজের গতি বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে পাশে সরিয়ে রাখলে মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হয়। দিন দিন মানুষের মনোযোগের স্থায়িত্ব কমছে, যার মূল অণুঘটক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাই কোনো কাজ করার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে একপাশে সরিয়ে রেখে কাজে মনোযোগ দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
জটিল বা সময়সাপেক্ষ কাজ দেখে অনেকেই কাজ ফেলে রাখেন। ভাবেন, কঠিন কাজটা শুরু করলে হয়তো আর শেষ করা সম্ভব হবে না। কিন্তু কাজের গতি বাড়াতে চাইলে কঠিন কাজটাই আগে শুরু করুন। কঠিন কাজের ভার এবং চিন্তা একবার মাথা থেকে নেমে গেলে নতুন কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় খুব সহজে।
টানা অনেকক্ষণ কাজ করা অনেক সময় কাজের গতি কমিয়ে দেয়। তাই কাজের মাঝখানে একটু বিরতি নিন। এতে পরের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে মন ও শরীর তৈরি হবে ঠিকঠাকমতো। বিরতি নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করতে পারেন, প্রকৃতি দেখতে পারেন, চাইলে গান শুনতে পারেন চা–কফির কাপ হাতে নিয়ে।
পুরস্কার পেতে কার না ভালো লাগে? আপনার মস্তিষ্কও এর বাইরে নয়। প্রতিটা কাজ শেষে যদি নিজেকে ছোট্ট একটা পুরষ্কার, হতে পারে সেটা এক কাপ চা কিংবা কফি, কিংবা অন্য কিছু। এটা করলে নতুন কাজের জন্য মস্তিষ্ক আরও বেশি সচল থাকবে। শরীরও থাকবে চাঙা।