এমআরসিপি পরীক্ষার সব ধাপ এখন বাংলাদেশ থেকেই দেওয়া যাচ্ছে

ছবি: প্রথম আলো/এআই
ছবি: প্রথম আলো/এআই

এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে-বিদেশে বহু বিষয় নিয়েই পড়ার সুযোগ থাকে। যেমন যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানসের মতো অভিজাত প্রতিষ্ঠানের ‘মেম্বারশিপ’ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন একজন চিকিৎসক, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় এমআরসিপি। গত অক্টোবর মাসের আগপর্যন্ত এই পরীক্ষার প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের লিখিত পরীক্ষায় বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকলেও তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ ‘ক্লিনিক্যাল’ অংশের পরীক্ষা (পেইসেস) দিতে সবাইকেই ছুটতে হতো ভিনদেশে।

এই শেষ পরীক্ষার ‘আসন’ পাওয়াটাই কঠিন। কারণ, বিশ্বজুড়েই এই পরীক্ষা দিতে উদ্‌গ্রীব বহু চিকিৎসক। ‘আসন’ পাওয়ার পরও অনেক ঝামেলা। ভিসার আনুষ্ঠানিকতা, ভিনদেশে থাকার ব্যবস্থা, খাবার-দাবার এবং পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া—সব মিলিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়াটাই এক বড় পরীক্ষা! অর্থকড়ির দিকটা তো আছেই। ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল তো তবু তুলনামূলক কাছের পথ; যুক্তরাজ্য, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়েও পরীক্ষা দিয়েছেন এ দেশের চিকিৎসকেরা। বহু নারী চিকিৎসক আছেন, যাঁদের আবার সঙ্গে পরিবারের অন্য কাউকেও যেতে হয়েছে।

অবশেষে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর অক্টোবরে ঢাকায়ও শুরু হলো পেইসেস পরীক্ষা। নিঃসন্দেহে দেশের জন্য এটি একটি মর্যাদার বিষয়। বাংলাদেশে পেইসেস, যুক্তরাজ্যের ফেডারেশন লিড অধ্যাপক ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলছিলেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য এই পথটুকু সহজ এবং সুন্দর করে তোলার প্রয়াসের কথা। ২০১৮ সাল থেকে তিনি রয়্যাল কলেজ অব এডিনবার্গের ওভারসিজ রিজিওনাল অ্যাডভাইজর। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কষ্টটা সব সময় উপলব্ধি করেছেন।

অক্টোবরে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৪৫ জন। তাঁদের মধ্যে ডা. আফরিনা রহমান এবং ডা. আলিফ লায়লার এর আগে পুনেতে পেইসেস পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুজনেই জানালেন, পুনেতে পরীক্ষার সময় দোভাষী না থাকায় রোগীদের নির্দেশনা বোঝাতে অসুবিধা হচ্ছিল। ফলে সময়ের মধ্যে নিজেদের কাজগুলো সম্পন্ন করতে মুশকিলে পড়েছিলেন তাঁরা। ফলে পরীক্ষার ফলও সেবার আশানুরূপ হয়নি। অন্যদিকে ডা. আফরিনাকে তাঁর ছোট্ট সন্তানদের রেখে দেশের বাইরে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার বাড়তি ঝক্কিও সামলাতে হয়েছে। ঢাকায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়ে দুজনই এবার অনেকটা স্বস্তি পেয়েছেন। রোগীরা বাংলাদেশি হলেও সঙ্গে দোভাষী ছিলেন। ভিনদেশি পরীক্ষকেরা তো ছিলেনই।

২০১৭ সালে এডিনবার্গে পেইসেস পরীক্ষা দেওয়ার অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছিলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফ হোসেন খান, ‘ভিনদেশে পরীক্ষা দিতে যাওয়াটাই অন্য রকম ব্যাপার। অচেনা পরিবেশে নানা ঝক্কিঝামেলা সামলে পরীক্ষায় নিজের সেরাটা দেওয়া এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।’ বাংলাদেশে এই পরীক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হওয়াটা দেশের জন্য এক অনন্য অর্জন বলে মনে করেন তিনি।

২০২৩ সালে বেঙ্গালুরুতে পেইসেস পরীক্ষা দিতে গিয়ে সরাসরি ফ্লাইট না থাকার ঝক্কিতে পড়ে নিজের স্টেথোস্কোপখানাই হারিয়ে ফেলেছিলেন ডা. এস এম সারোয়ার হোসেন। স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের নিউরোমেডিসিন বিভাগের এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মনে করেন, এখন পরীক্ষার আগে অনাকাঙ্ক্ষিত মানসিক চাপের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বেঁচে যাবে বহু শিক্ষার্থী।